লতিফ জোয়ার্দার

লোকটা

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

লোকটা চলে যাবার পর আমার মনে হলো পাখিটার নাম মোঃ ইদ্রিস আলি। আদি নিবাস ভরতপুর। পোস্ট পারখিদিরপুর, থানা আটঘরিয়া। এক সময় ভরতপুর গ্রামে কোন পাকা রাস্তা ছিলো না। জলে-জঙ্গলে ভরা ছিলো এই গ্রাম। এই গ্রাম থেকে দূরের কোনো গ্রামে যেতে হতো গরুর গাড়ি অথবা পায়ে হেঁটে। সে সময় অবশ্য কারো কারো বাইসাইকেল ছিলো। প্যাডেল মেরে এক গ্রাম থেকে আরেক গ্রামে যেত তারা। আর বর্ষার সময়  যাতায়াতের বড় মাধ্যম ছিলো নৌকা। তখন চারদিক জলে থইথই করতো। আর বিশেষ কোনো আয়োজনে পালকী ভাড়া করা হতো। অন্য হাজারও গ্রামের মতই ছিলো এই ভরতপুর গ্রাম। ক্ষেত-খামার, নদী-জল আর সবুজ বেষ্টনী পেরিয়ে যেতে হতো এই গ্রামে। যেতে যেতে পাখির সাথে দেখা হতো। বনবীথির সাথে কথা হতো। কখনো কেউ কেউ বৃক্ষের সাথে চুপিচুপি কথা বলতো । আর সেই গ্রামের জাত কৃষকের সন্তান ইদ্রিস আলি। কোনোমতো গ্রামের স্কুলে পাঁচ ক্লাস পর্যন্ত পড়েছিলো সে। এক সময় যে হাল চিনতো, নৌকা চিনতো আর চিনতো মাঠ । ফসল চিনতো আর চিনতো জলের কাব্য। সে এখন শহরে থাকে। কত বছর আগে গ্রাম ছেড়েছিল ইদ্রিস, তা এখন আর এই গ্রামের অনেকেই মনে করতে পারে না। তবে শহরে যাবার আগে তিন তিনটা বিয়ে করেছিল ইদ্রিস। একদিন সংসার বড় হয়েছিল তার। সেকারণে এক এক করে বাপের দেওয়া জায়গা-জমি বিক্রি করতে করতে এক সময় অবশিষ্ট কিছুই ছিলো না তার। একদিন লাঙ্গল মই জোয়াল হারিয়ে গেল। হালের বলদ বিক্রি হলো অরণখোলা হাটে। অতঃপর একদিন জায়গা- জমির সাথে সাথে হাওয়ার মত ইদ্রিস আলিও হারিয়ে গেল। আর কেউ কখনো ইদ্রিস আলিকে দেখতে পেলো না এই ভরতপুর গ্রামে।

ইদ্রিস গ্রাম থেকে চলে গেল অথচ একটিবারের জন্যেও গ্রামের কাউকে বলে গেল না। তার বাড়ির ভিটায় আর সন্ধ্যা প্রদীপ জ্বললো না। দিন যেতে যেতে বাঁশ-কাঠের ঘরগুলো মলিন হলো। কালবৈশাখী এসে লণ্ড-ভণ্ড করে দিয়ে গেল সেই  ঘরের চালা। কেউ এসে সেই ঘরগুলো আর মেরামত করলো না। তার মাস দুই পরে বর্ষা এলো। সেখানে আশ্রয় নিলো বুনো শেয়ালের দল। রাত্রিটা কোনো মতে পার করে ভোরবেলায় শেয়ালগুলোকে কুকুরের ভয়ে গ্রাম ছেড়ে পালাতে দেখা যেত। ইদ্রিসের ভিটায় ছিলো পুরনো দিনের আমগাছ, তেুতুল গাছ আর এক বুড়ো জামের গাছ। সেসব গাছে পাখির আবাস ছিলো। সকাল বেলায় পা পথে এদিক দিয়ে এগুলে হরেক- রকম পাখির দেখা মিলতো। পর-পর দুই দুটো বর্ষা চলে গেল ইদ্রিসের ঘরগুলোর উপর দিয়ে। তারপর আর কোন চিহ্ন থাকলো না। অতঃপর আর কেউ এখানে এলে বুঝতো না একদিন এখানে ইদ্রিসের আবাস ছিলো। পরের শীতে করাত নিয়ে এলো হাসেম খাঁ। বুড়ো বৃক্ষগুলোর গলায় ছুরি চালানো হলো। পুরো ভিটা পরিষ্কার করে লাঙ্গল চালালো হাসেম খাঁ। সেই ভিটায় সরিষার চাষ হলো। কেউ জানতে পারলো না কিভাবে ইদ্রিসের বসতভিটা হাসেম খাঁর হয়ে গেল।

গ্রাম থেকে শহর। গাজীপুর শহরের রেল স্টেশনের পাশে এক বস্তিতে ঠাই হয়েছিল ইদ্রিসের। সেখানে নতুন একটা কাজ জোগাতে খুব একটা বেশি সময় লাগেনি তার। লোকটা সেখানে বছরের পর বছর মাথায় করে কাঁচা তরকারী বিক্রি করতো। শহরের অলি-গলির ভেতর তাকে প্রায়ই দেখা যেত। লম্বা মতো মানুষটা কেমন বেঁকে যাচ্ছে। তার মাথায় তরকারীর বোঝা। “এই তরকারী! নানা পদের তাজা তরকারী! তরকারী নেবেন! তাজা তরকারী! গ্রাম থেকে আনা তাজা তরকারী…”  হাঁক পারতে পারতে ছুটে যেত ইদ্রিস। কখনো দ্বিতীয় তলা, কখনো তৃতীয় তলা, কখনো পঞ্চম তলার বাসিন্দারা বেলকুনিতে দাঁড়িয়ে ইদ্রিস আলিকে ডাকতো। আধা কেজি পটলের জন্য এই সিঁড়ি বেয়ে উঠানামা। পটল, আলু, বেগুন, সিম, বরবটি তার ঝাঁকায় ম্লান মুখে একে অপরের সাথে আলাপচারিতায় মগ্ন হতো। কখনো গলির ধারের টিপকলের সামনে ঝাঁকা নামিয়ে তরকারীতে জল ছিটাতো ইদ্রিস। সাথে নিজের চোখে-মুখে।

একাধারে কুড়ি বছর এক শহরে থাকলে তাকে মনে হয় শহরের বুড়ো বৃক্ষ। ডালপালা ছেটে বাকল উঠিয়ে রুগ্ন দেহে কোন মত বেঁচে আছে মাত্র। ইদ্রিস তার ব্যতিক্রম নয়। এখন আর তার ঝাকড়া চুলের বাবড়ি নেই। চুল উঠতে উঠতে নাড়া বৃক্ষ হয়ে গেছে। চোখে ভাঙা ডাটের চশমা। এক নাগাড়ে রোদে থাকতে পারে না আর। বেশিক্ষণ কথা বললে দম বন্ধ হয়ে আসে। ঘন ঘন ক্ষুধা লাগে তার। চায়ের দোকানের শুকনো পাউরুটি খেয়ে আর কত সময় থাকা যায়। কেউ কেউ বলে ইদ্রিসের রক্তে সুগারের পরিমাণ বেড়েছে। ডায়াবেটিস হয়েছে হয়তো! তবে এসবে বিশ্বাস নাই তার। এখনো চায়ে চিনি বেশি না হলে তার ভাল লাগে না। মুখটা কেমন যেন বেস্বাদ হয়ে যায়। অনেকটা কমদামী সিগারেটের মতো। স্বাদ নেই গন্ধ নেই।

গ্রাম থেকে শহরে আসার পর, ঘুরে ফিরে আবার সেই বড় বউয়ের সংসার। দুই সন্তান ছিলো তার সাথে । অন্য যারা ছিলো কুটুম পাখির মত উড়ে গেছে। এখন সেসব কেবলি দীর্ঘশ্বাস। ছোট মেজো এখন অন্যের ঘর করে। সে খবরে কিছুই আসে যায় না তার। তবে এখনো ঘুমুনোর আগে মনে হয় ছোট বউয়ের কথা। কালো মত মেয়েটা, বড় বড় চোখে উদাস আকাশ দেখতো রোজ। একমাত্র তিনবেলা তিনমুঠো ভাতের অভাবে এ সংসারে তার আর থাকা হলো না । নাদুস-নুদুস বেড়ালের মত চেহারা ছিলো তার। মেঝবউ ছিলো তাড়া খাওয়া মাছের মত। আরেক সংসার থেকে তাড়া খেয়ে এ সংসারে এসে উঠেছিল। স্বামী তার কথায় কথায় শরীরে হাত উঠাতো। তবে সেখানে তার কোনো ভাতের অভাব ছিলো না। কাক-পক্ষী কত ভাত খেয়ে যেত সে সংসারে। সব থেকেও যেন সেখানে কোন ভালবাসা ছিলো না। ইদ্রিস শহরে যাবার আগে সেও একদিন ঘর ছেড়েছিল। পুরনো সংসারে আবার নতুন করে ঠাই হয়েছিল তার।

প্রথম প্রথম এই শহরটাকে মনে হতো রগচটা মানুষের মতো। নতুন কেউ এলেই সে অস্থির হয়। রক্ত সঞ্চালন বেড়ে যায়। কোন কিছুই সহ্য হয় না তার। কোনোমতে রেলের ধারে ঠাই হয়েছিল ইদ্রিসের। বস্তিতে ঘর হয়েছিল। আরেক বড় ভাইয়ের হাত ধরে ব্যবসায় হাত রেখেছিল সে। প্রথম দিকে লোকাল ট্রেনে পান-বিড়ি বিক্রি করতো ইদ্রিস। এক শহর থেকে আরেক শহর। এক স্টেশন থেকে আরেক স্টেশন ছুটে বেড়াতো সে। ট্রেনে কত কত মানুষের সাথে কথা হতো। নিবরে কতজনের গল্প শুনতো ইদ্রিস। দিন চলে গেলেই, সেই মানুষগুলোর সাথে আর দেখা হতো না। কোথায় যে হারিয়ে যেত তারা। তার কাছে মনে হতো জগতটা একা মহাসমুদ্র। আর আমরা খড়কুটো। জলের স্রোতে হারিয়ে যাচ্ছি আমরা। কোন কোন দিন অবশ্য ইদ্রিস আলি ঘরে ফিরতো না। দুই-একদিনের জন্য হারিয়ে যেত। তখন তার মন সংসার বোঝে না। গ্রামে থাকা দিনগুলির স্মৃতিকথা তার সামনে এসে ফিরে দাঁড়াতো। সেই গ্রামের কেউ কেউ বলতো ইদ্রিস কালো যাদু জানে। সে কারণে, তার সামনে কোন পিঠা-পায়েস তৈরি করতে পারতো না কেউ। মুড়ি ভাজতে পারতো না কেউ। তার চোখ পড়লেই সব নষ্ট হয়ে যেত। পিঠা-পায়েসের গন্ধ পেলে কোন ভাবেই ঠিক থাকতে পারতো না ইদ্রিস। যে কোনো সময় সে, যে কোনো বাড়িতে উপস্থিত হতো। সময় ক্ষেপন করতো। একদিন গ্রামে ছড়িয়ে পড়লো, ইদ্রিস যাদু দিয়ে পিঠা পায়েস নষ্ট করে বেড়ায়। মেয়েমানুষ পটিয়ে ঘরে তোলে। অন্যের ঘর ভাঙে ইদ্রিস। সেসব কারণে মাঝে মাঝে নিজেকে বিশ্বাস করতে পারতো না ইদ্রিস। সত্যিই কি তার চোখে বিষ আর বুকে ভালোবাসা আছে। নইলে কি দেখে তার সংসারে এসেছিলো নূরিতা আর হামিদা। ঘরে বউ থাকতেও একমাত্র কথায় পোটে তারা ইদ্রিসের ঘর করেছিল। ট্রেনে ট্রেনে পান বিড়ির ব্যবসা স্থায়ী হয়েছিল মাত্র তিন মাস ষোল দিন। তারপর থেকেই ঝাকায় করে তরকারী বিক্রি করতে শুরু করলো ইদ্রিস। এখন তার নিজেরও মনে থাকে না! এক সময় সে ট্রেনে ট্রেনে পান বিড়ি সিগারেট বিক্রি করতো।

মাঝে মাঝে তার মনে হয় শুধু ভালোবাসা দিয়ে নারীর মন পটে না। তাদের জন্য অর্থ খরচ করতে হয়। চুরি ফিতা দুল কিনে দিতে হয়। স্নো-পাউডার কিনে দিতে হয়। বাজার থেকে রসগোল্লা কিনে খাওয়াতে হয়। কত কত সময় ব্যয় করতে হয়। সবচেয়ে বেশি সময় পটাতে লেগেছিলো হামিদাকে। কত কত ফন্দি-ফিকির করেও যেন তার মন গলানো গেল না। কিন্তু নাছোড় ছিলো ইদ্রিস।  হামিদার  কালো রূপের আগুনে পুড়ে পুড়ে অস্থির হতো সে। কিন্তু তারপরও হামিদার মন গলানো গেল না। বিয়ে যদি সারাজীবনেও না হয় না হবে! তবুও দুই বউয়লা আধবুড়োর ঘর করবে না হামিদা। একদিন সন্ধ্যা বেলায় বাড়ির সামনে দিয়ে ঘুর-ঘুর করছিলো ইদ্রিস। তাকে দেখে হামিদার মাথায় আগুনের ফুলকি জ্বলে উঠলো। এক প্রকার অস্থির হলো। ঘর থেকে কিছু একটা বলার জন্য বের হলো হামিদা। এই নির্জন সন্ধ্যার চোখ জানে হামিদার বুকের অস্থিরতার খবর। তখন হামিদার বাবার ছোনের ছাইনির ঘর। ঘরের সামনে দীর্ঘ উঠোন। হামিদা উঠোন পেরুলো। আর কয়েক হাত এগুলেই সরুরাস্তা। রাস্তার ধারে পুরনো দিনের এক বাবলাগাছ। সেই বাবলা গাছের তলায় দাঁড়িয়ে আছে ইদ্রিস।

হামিদাকে দেখে ইদ্রিসের বুকে তোলপাড় হলো। একবার তার দিকে তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো। যে চোখে একদিন আগুন ছিলো, সে চোখে এখন অথই জল। সেদিন আর কারোই কিছুই বলা হলো না। হামিদা ফিরে গেল। বিষয়টা আগামাথা কিছুই বুঝতে পারলো না ইদ্রিস। এক পা দুই পা করে ইদ্রিস পিছন ফিরে এগুতে থাকলো। কিছু দূর যাওয়ার পর মনে হলো, কে যেন তার পিছু নিয়েছে আবার। ইদ্রিস পিছন ফিরে চেয়ে তো হতবাক।

– তুই?

কোনো কথা  বলতে পারে না হামিদা। তখন দুজনই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অথচ তখন কে যেন! অন্ধকার ফেরি করে বেড়াচ্ছে প্রকৃতিতে।

– আপনে এমুন ঘুর ঘুর করেন ক্যা। আর কুনুদিন এদিক আর আইসেন না কইলিম।

– ক্যা! আসলি তুই কি করবু?

– কি আর করবো বাজানেক কইয়ে দেবোনে।

– ক গ্যা, তোর বাজানেক! কইলি বুঝি আমার মহাভারত অসুদ্ধি হইয়ে যাবিনি।

– দ্যাখেন খালি চটাং চটাং কতা কইয়েন না কইলিম। আমি আপনের সব মতলব ধইরি ফালাইছি কিন্তুক।

ইদ্রিসের মনে পড়ে মাত্র একবার হামিদার চোখে চোখ পড়েছিলো তার। তাতে হয়তো কিছুটা কাজ হয়েছিল সেদিন। কিন্তু তারপর সব আগের মত। দেখা করে না হামিদা, কথা বলে না হামিদা। এভাবেই কিছুদিন চলে গেল। ইদ্রিসও নাছোর আর হামিদা কিছুতেই দুই সতিনের ঘর করবে না। তবে মাঝে-মধ্যে মানুষটার জন্য মায়া হতো হামিদার। মনের মধ্যে কেমন যেন করতো। একটু সুযোগ পেলেই কতকিছু কিনে পাঠাতো ইদ্রিস। হামিদার মা-বাবা এসবের কিছুই জানতো না। যদি তারা দেখে ফেলে এই ভয়ে সবকিছু ফিরিয়ে দিতো হামিদা। আর ফিরিয়ে দেওয়া জিনিসপত্র ইদ্রিস জোলার জলে এনে ফেলতো। দূর থেকে সবকিছু চেয়ে চেয়ে দেখতো হামিদা। কিন্তু তার মনে হতো, তার যেন কিছুই করার নেই আর। সতীনের সংসারে গিয়ে সে কেন মিছে-মিছি বোঝা হতে যাবে আবার।

সেই হামিদার মন একদিন সত্যি সত্যি অন্যরকম হয়েছিল। যেদিন শিশিরের কান্নায় ভিজেছিলো ঘাসের জমিন। যেদিন সাদা মেঘের ভেলায় ভেসেছিল আকাশ। পাখির কলতানে মুখরিত হয়েছিল প্রকৃতি। ঘর আর উঠোন, উঠোন আর বাহির বাড়িতে পায়চারী করেছিল হামিদা। ইদ্রিসের জন্য তার বুকের জমিন হাহাকার করেছিল। বুক তার যেন চৈত্রের মাঠ। দিনে দিনে কেন এমন হলো জানে না হামিদা। সে কেবল জানে ইদ্রিসের জন্য তার বুকে তোলপাড় করে। রাতের বেলায় তার চোখে ঘুম আসে না। সারাদিন সারারাত তার কেমন যেন লাগে। কেমন যেন করে তার বুকের ভিতর।  তবে একমাত্র কুফুরিকালামের জোরে হামিদার সাথে ভাব হয়েছিল ইদ্রিসের। অথচ আশেপাশের কেউ জানলো না! কিভাবে তাদের এই সম্পর্ক হলো। কিভাবে হামিদার বুকের আগুনে ইদ্রিসের নাম লেখা হলো। এই ভাব-ভালোবাসার জন্য ইদ্রিসের খরচ হয়েছিল পাঁচ শত পাঁচ টাকা মাত্র। সোহারাব কবিরাজের কাজ কখনো বিফলে যায় না। ইদ্রিসের গ্রাম থেকে মাত্র তিন গ্রাম পরে ছিলো সোহারাব কবিরাজের বাড়ি। কেউ কেউ বলে সোহারাবের সাথে জ্বিন-পরী থাকে। সে পারে না হেন কাজ নেই এ সংসারে। তবে হাদিয়া পাঁচ শত পাঁচ টাকা জ্বিনের নির্ধারিত আর বাদবাকী যে যা খুশি দেয় তাকে, তাতেই খুশি সোহারাব। তবে তখনকার দিনে এত বেশি টাকার কারণে কেউ তার কাছে তেমন একটা ভিড়তো না। তখন মাত্র পনের শত টাকা বিঘা মাঠান জমি। এই হমিদার জন্যেই মাঠের দুই বিঘা জমি বিক্রি করতে হয়েছিল ইদ্রিসকে। একদিন যে হামিদা তার নাম শুনতে পর্যন্ত শুনতে পারতো না, সেই হামিদাই একদিন ইদ্রিসের ঘরে এসে উঠেছিলো। বড়বউ মেঝবউ কেউ সেদিন একটু আওয়াজ পর্যন্ত করেছিল না। হামিদার জন্য নতুন লালশাড়ি, সায়া-ব্লাউজ কিনেছিলো ইদ্রিস। চুরি-মালা দুল-ফিতা কিনেছিলো ইদ্রিস। গ্রামের সব মানুষকে একবেলা জিয়াফত খাইয়েছিলো ইদ্রিস। কেউ যেন কোনো প্রকার বিরোধিতা না করে। ইদ্রিসের বড়বউ সেদিন নিজের ঘর ছেড়ে দিয়েছিলো এই হামিদার জন্য। তাতেও যদি খুশি হয় ইদ্রিস। কিন্তু রাতের বেলায় বড় মেঝ কারো চোখে কোনো প্রকার ঘুম ছিলো না। ইদ্রিসের একান্ত আপন সময়ে দুই বউ এর দীর্ঘশ্বাসে ভারি হয়েছিল আকাশ- বাতাস। তাদের চোখের জলে ভিজেছিল বিছানা- বালিশ। তবে এই ভেজা কান্নার গল্প, অজানাই থেকে গিয়েছিল হামিদা আর ইদ্রিসের কাছে।


 

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu