বহুত সহ্য করছি– না, এভাবে আর পারা যায় না…
হক টাকা দিয়ে ভাড়া থেকে যদি এত ঝামেলায় দিন গুজরান করতে হয় তবে ভাড়াটিয়া কেইবা থাকতে চায়? সোলায়মান মিয়াও থাকবে না। অনেক ভেবে চিন্তে তিনি সিদ্ধান্তে আসেন– চলতি মাসের ভাড়াটা নিতে আসলে কেয়ারটেকারকে দিয়ে জমিদারকে জানাবেন। তার সিদ্ধান্তে যদি সম্মান জানিয়ে জমিদার বিহিত ব্যবস্থা নেন তবে থাকবেন, না হয় খালাস! এত ঝক্কির পর হক টাকার শ্রাদ্ধ করে লাভ নাই। বাল-বাচ্চার মাকে টিটকারি শুনিয়ে কী লাভ? নিজেরই তো মন্দ লাগে বিষয়টা নিয়ে ভাবতে।
সোলায়মান মিয়ার কাচা-পাকা চুলয়লা মাথায় এর চেয়ে বেশি বুদ্ধি না আসলেও নিজেদের বংশ গরিমা নিয়ে বেশ পুলকিত হয় বস্তির ভাড়া ঘরের চরম অসুবিধার মধ্যেও। আহা! বাপ তার বড় দিলয়লা মানুষ ছিলেন– খালেক কাওয়াল নামেই পুরো উপজেলা চিনে। পান খেতেন খুব করে, পানও করতেন; তবে পর্দার আড়ালে। কাওয়ালদের গলা ঠিক রাখার জন্য নাকি শরাব-শরবত না হলে হয় না- রীতি বটে! দর্শকদের চাহিদা মেটাতে কাওয়ালকে ভাবতে হতো খুব করে। তার ফিসের সাথে ক্রমশ যোগ হতে থাকে কাওয়ালী সুনাম আর ব্যক্তিত্বের জজবা। সারা উপজেলা গানের জলসা করে বেড়াতেন সাঙ্গ-পাঙ্গ নিয়ে, উপার্জনও কম নয়। অন্তত সোলায়মান বড় সন্তান হিসেবে দেখে তার মায়ের পিন্দনের শাড়ি কখনও পুরনো হয়নি, মায়ের ফর্সা মুখ হাসির বাগান হয়ে থাকত নিশিদিন। সোলায়মানের মা রাশেদা বানু বরের এমন দশা পয়লা পয়লা মেনে নিলেও পরে আপত্তি তুলতেন– রূপবান বউ ঘরে রেখে গান জমাও খালি, ঘরের আসর কে জমাবে তবে? কাওয়াল মজলিশি মানুষ। হেসে বলতেন– যখন সুযোগ পাই শোধ করে দেবো সুদেআসলে। চিন্তা করো না বউ আমার। রাশেদা বানু বুঝলেন এ নেশা বড় নেশা, বউয়ের গোপন অঞ্চলের চেয়ে যার টান বড় সে তো আর ফেলনা হতে পারে না! তাছাড়া গানের নেশা তার বুদ্ধির পর থেকেই, তা কি আর ছাড়া যায়– খুব সহজেই! বিয়ের বছর দু’য়ের মাথায় দুনিয়ায় কাওয়াল-বানুর প্রথম ফসল ঘরে আসে। বড় ঘরের বড় ছেলে, নামও রাখতে হবে ওজন দেখে। সম্মত হয় সোলায়মান মিয়া; হ্যাঁ সোলায়মান মিয়া-ই হবে তাদের প্রথম সন্তানের নাম। ওই যে, নবী সোলাইমান– আল্লাহর পেয়ারা নবী… কাম যা হোক, অন্তত নামের মিল থেকেই যদি বড় ছেলে কিছু হতে পারে তো আল্লায় দেয়। না, নাম-ডাকঅলা বাবার বড় ছেলে হিসেবে সোলায়মান মিয়া পঞ্চাশ পেরুনো এ জীবনে কেবল নামটিই ব্যবহার করেছেন; অন্য কোন লৌকিক মুনাফা দিতে পারেনি এ সমাজকে, যা তাকে মিশে দেয় সময়ের গায়ে– একেবারে কীটের ন্যায়। নিরালায় এসব ভাবতে গেলে কখনোসখনো তার চোখ সজল হয়ে ওঠে, বুকের ভেতরে চিনচিন ব্যথা জেগে ওঠে।
লেচু… লেচু… লেচু… এ-এক যন্ত্রনা! ‘লিচু’ দারুণ রসালো ফল হলেও সোলায়মান মিয়া ও তার পরিবারের সদস্যবর্গ এর স্বাদ নেয় না আজ অনেক বছর। এ জন্য তার মরহুম বাবার প্রতিও অভিযোগের শেষ নেই। আব্বাজান ইন্তেকাল করার আগেই দেখেছিলেন বিয়ষটা, তবুও কেন যে ব্যবস্থা নেননি! অবশ্য তারও আগে সোলায়মান মিয়া কিংবা তার পিঠাপিঠি ভাই-বোনদের জন্য পিতা হিসেবে কাওয়াল যে বন্দোবস্ত করতে চেয়েছিলেন তার সামান্যও যে তারা নিয়েছে এ কথা সোলায়মান কেন তার ভাই-বোনেরাও বলতে পারবে না। কাওয়াল সন্তানদের স্কুল-মক্তবে দিয়েছেন বটে, সোলায়মানেরা তা মনে-প্রাণে গ্রহণ করেনি। ফলে, তারা কেউ-ই দুই-তিন ক্লাসের বেশি মাড়াতে পারেনি, বকলমই থেকেছে। মেয়েদের বিয়ে-থা কাওয়াল জীবদ্দশাতেই দিয়েছেন। তখনও তাদের ঘর বাড়ি ছিল। সোলায়মানের বিয়ের পর থেকেই নদীর মুখ বড় হতে শুরু করে। বন্ধুরা নতুন বউয়ের ভাগ্যের দিকে ইঙ্গিত দিয়ে বলতো– বউ তো এক্কান, ঘরে আনার পর থেকেই পানি আর পানি। আস্তে আস্তে গিলে খায় সব… গরুর ঘর, শিমের মাচা, লাকড়ির স্তুপ সবটাই ধরতে থাকে নদীর মুখ… নদীর মুখ তো না, যেনবা ক্ষুধার্ত বাঘ– তার সামনে নতজানু হরিণী। ধরতে ধরতে একদিন থাবায় ভরে নেয় সোলায়মানদের উঠোন। কাওয়ালের বয়স তখন পড়ন্ত। তিনি বলতেন নদীর এ-এক খেলা– এক দিকে গড়ে তো, অন্য দিকে ভাঙ্গে। চিন্তা করার কিছু নাই, উপরয়লা আছে না…। কাওয়াল আকাশের ডাকে মেহমান হলেন। তাকে কবরবাড়িতে দিয়ে আসার পর থেকেই ঘরবাড়ি ঢুকতে থাকে নদীর পেটে। কাওয়াল দেহ লুকিয়ে পরবাসির অনন্ত জীবনে শান্তি খোঁজে বড় ছেলেকে সাংসারিক দায়িত্ব দিয়ে। বড় ভাই সোলায়মান অনুজদের দিশা দিতে পারেননি, ভরসা দিতে পারেননি, কেবল চিনিয়ে দিতে পেরেছিলেন চট্টগ্রাম শহরের পথ-ঘাট। ভাইয়েরা খেটে-খুটে খায় শ্রম দিয়ে। বয়স আর সময়ের চাহিদায় তারা অধিকারী হয় স্ত্রী-সন্তানের। এ শহরের পঁচা বস্তিতেই সাকিন খুঁজে নেয় সোলায়মান গংয়েরা।
সোলায়মান মিয়ার বিবি তার মায়ের গুন পেয়েছে। ফর্সা, মেদহীন শরীর। বছর বছর সন্তান উৎপাদনের উর্বর ফ্যাক্টরি সোলায়মানের বিবি তাহেরা খাতুন। বস্তির পাশেই জমিদারের বাড়ি। উঠতি বয়সের পোলাপাইনে ভরপুর বাড়ির ছেলেরা স্থানীয় হিসেবে ঠাঁট দেখায়, দুষ্টামি-নষ্টামিও করে। নুতন কেউ দোকান-প্রতিষ্ঠান দিলে তাদের দিতে হয় চাঁদা, মাসশেষে খুশিতে রাখতে হয় মাসোহারা দিয়ে। না, সোলায়মানের সাথে তারা নষ্টামি করেনি, একটু দুষ্টামিই করতে চেয়েছে শুধু। বছর বছর বাচ্চা তো তাদের সামনের বস্তিতে উৎপাদন করছে তাহেরা খাতুন। তাই তারাও যুৎসই নাম খোঁজে গুণী এ নারীর জন্য। লেচু– সমবেত চিন্তায় তারা কর্তৃক এ নামেই গৃহীত হয় সোলায়মান মিয়ার পরিবারের প্রতিটি সদস্যের আইডি হিসেবে। সোলায়মানেরা হেঁটে গেলেই জমিদার বাড়ির ছেলেরা টিটকারির ছলে চিল্লায়– লেচু… লেচু…। প্রথম প্রথম আমলে না নিলেও শেষে বুঝতো এ উপাধি তাদেরই! কেন, কেন? বদজাত ছেলেদের যুক্তি লিচু যেমন একটা পর একটা থোকায় থোকায় থাকে গাছে, তেমনি তাহেরা খাতুনের পোলা-মাইয়াও! যার সন্তান সে খুশিতে আছে, ঘর ভরা মা ডাকে মা-বাবা খুশি হলে অন্যের সমস্যা কেন হবে? তাছাড়া সন্তান তো এখনো সাতটাই হল, এ কি খুব বেশি হয়ে গেলো! লেচু ডাকাডাকির স্তর বাড়াবাড়ির পর্যায়ে চলে এসে ক্রমশ বাড়তে থাকে নাম-খ্যাতি। চায়ের দোকান, মুদির দোকান, এমনকি মোড়ের রিকশায়লাও সোলায়মান মিয়া বা তার সন্তানদের দেখলে বলে– ঐ তো লেচু আসে… লেচু… লেচু…
সোলায়মান মিয়ারা বাসা বদল করে। লেচু ডাকটাই বাসা বদলে বাধ্য করে তাকে। ছেলেরা বড় হয়েছে; তাদেরকেও যখন লেচু লেচু করে তখন সুবিধামত পেলে ঘুষি লাগিয়ে সোজা চলে আসে বাসায়। ছেলেদের কথা কী সোলায়মানও মিয়া কয়েকবার এ কান্ড করেছেন। শেষ পর্যন্ত জমিদার বাড়ির ছেলেদের অভিভাবকেরা এ বলে ভৎর্সনা শুনিয়েছে সোলায়মানকে– ‘বাল পাকে বেডার, তবুও ছোটদের মশকারা বুঝে না। তুমি যদি হেডাম দেখাও ছেলেরা তো সুযোগ পাবে আরো বেশি; জানেন না, ছেলেরা উল্টো করলে মাথায় উঠে মুতি দেয়! বস্তির অন্য ভাড়াটিয়ারা তাহেরা খাতুনের পাশে থেকে মুরব্বি মহিলাদের কেউ কেউ পরামর্শ দেয়– শুনো সফিকের মা, এখন হলো আধুনিক যুগ, এত সন্তান কেউ নেয় না, তুমি কিছু একটা ব্যবস্থা করো। এতো পোলাপান নিয়া কী করবা? দিন দিন নিজে যেমন মরতাছো, তেমানি সন্তানদেরও মারতাছো। কী করবো বু, বেড়া ত চায় একটা মেয়ে, আল্লা তো সব ছেলেই দেয় আমাদের! উপদেষ্টা সাজা মহিলারা খানিক বিস্মিত হয়– হায়রে দুনিয়া, সবাই চায় ছেলে, আর ওরা চায় মেয়ে! না, তাহেরা খাতুন স্বামীর চাহিদাকেই সমর্থন জানায় দৃঢ়ভাবে। দিনের রং বদলিয়ে বস্তিতে যাদের সাথে তাহেরা বেগম প্রতিবেশি হয়ে থাকে, তারাই টিককারি ছুড়ে লেচু… লেচু…।
পুরনো বাসার পাঠ চুকিয়ে অন্য জায়গায় বাসা নেয় সোলায়মান মিয়া। যেখানে কেউ জানে না, তিনি লেচু! হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছে বলে সুখশ্বাস ছাড়ে এবং মুন্ডুপাত করে জমিদার বাড়ির নালায়েক পান্ডাদের। বেয়াদবেরা স্কুল-কলেজে পড়ে অথচ ভদ্রতামি জানে না। আগের কর্মে শরীর সায় দেয় না সোলায়মান মিয়ার, বয়স যেমন বাড়ছে তেমনি ঘরে হা করা মুখও। তবুও তার মেয়ে চাই, একটা মেয়ে। ছেলেদের দেখে নিজের মরহুম কাওয়াল বাপের কথাই স্মরণে আসে। হায়! বাবা কত করে চেয়েছিলেন পড়াতে, পড়েনি এখন নিজের ছেলেরাও শুনছে না কোন কথা। কী দোষ তাদের? বস্তিজীবন নিয়তি হয়ে যাওয়া তারা ভালো কিছু দেখে না চোখে, ভালো কিছু শোনে না কানে। নিজের যা ইনকাম তাতেও সন্তানদের পড়ালেখায় জোর দিতে ভয় হয়। মাস শেষে জমিদার হাজির হয় ভাড়ার জন্য, আর চোখ রাঙায় মুদি দোকানের বাকী খাতা। ধান্ধা করার পর ঢাকাগামী গাড়ির গ্যারেজে দারোয়ানের চাকরিটা আছে বলেই তার বেঁচে বর্তে থাকা। সারারাত পাহারা দেয়। নির্ঘুম চোখগুলো অভ্যস্ত হয়ে গেছে নিশি– জাগানিয়া হয়ে থাকার দলে। কত কিছু দেখেছে জোড়া চোখে– শহরের রুপ দিনে এক রকম তো রাতে আরেক। এখানে টাকাতে পাওয়া যায় সব। রাতের আধাঁর আর টাকার পাওয়ারে ধনী-গরীব চিন থাকে না, অদৃশ্য সুতোয় দাঁড়িয়ে যায় এক কাতারে। আচানক সব কাজ-কামে জোয়ার আসে শহরের রাতে। গ্যারেজের পাহাদারের চাকরিটা তার স্থির একটা বেতন যেমন দিয়েছে, তেমনি সুযোগও দেয় ভিন্ন তরকারির স্বাদ নিতে। অবশ্য তার ঘরের তরকারি যে খুব খারাপ তা নয়, একটু বাসি এই যা! সকালের রোদ মাথায় ঘরে ফেরা সোলায়মান মিয়ার ক্লান্তি শুষে নেয় ঘর ভরা সন্তানের আব্বা ডাক। তারাও জানে তাদের আব্বা এবার ঘুমোবে, ডির্স্টাব করা যাবে না। তাহেরাবিবি সমতে তাদের নাস্তাপানি খাইয়ে বাইরে ছেড়ে দেয় যেনবা সে ছায়লা মুরগি। রাতের সুখস্মৃতি নিয়ে সোলায়মান মিয়া কখনোসখনো হানা দেয় বিবির শরীরে। প্রবল ইচ্ছায় সম্ভোগ অতঃপর সোলায়মান মিয়ার চোখ জুড়ে নেমে আসে রাজ্যের ঘুম; শারীরিক ক্রিয়া-ক্লান্তি তাতে হাওয়া দেয় জোরালোভাবে। ঘুমকে বিদেয় দেয় দিনের বয়স পৌঢ়ত্বের দিকে গেলে।
সাতটা ছেলে। ভাগ্যবান সংখ্যা সাত। যার মধ্যে তিনটা তিনটা ছেলে উপার্জনক্ষম হওয়া সত্ত্বেও সোলায়মান মিয়াকে পরের গোলামির গ্লানি পেয়ে বসে বেসম্ভবভাবে। গালি-গালাজ, চড়-তাপ্পড়ে প্রতিক্রিয়া দেখা না গেলেও তিনি সিদ্ধান্ত নেন বড় তিন ছেলেকে ঘর ছাড়া করবেন। ছেলে যদি আর কামাই দিতে না পারে তবে কিসের মরদ! তিন তিনটা মরদের এ জোচ্চারপনা দেখেই তিনি বুঝতে পারেন মেয়েরা কামাই আনুক না আনুক অন্তত এদের মতো বিচার-আচার আনবে না প্রতিনিয়ত। এ কারণেই প্রবল সাধ জাগে মেয়ের বাপ হওয়ার! উত্তেজনার চরম মূহুর্তে বিবি তার পুরুষাঙ্গে কি যেন পরিয়ে দেয়; তার স্পষ্ট প্রমাণ পেয়ে সোলায়মান মিয়া বিবিকে শাসায়– এ রকম আর করবি না। সেই দিন থেকে তাহেরা খাতুন জন্মনিয়ন্ত্রণের কথা আর মুখে আনে না। বুকে লালন করে হয়তো চিরায়ত বাঙালি বধূর মনোবেদনা নিয়েই। বছর বাড়ে তো ছেলে বাড়ে; মেয়ে আসে না।
বছর বিরতিতে আবারও শুরু হয় উৎপাত। লেচু ডাকটার ব্যাপক চল শুরু হয়। কথার এ-এক ক্ষমতা; বাতাসের আগে যায়। মানুষ বদলায় অথচ কথার প্রচলন থেকে যায় মুখে মুখে। পাহারাদারের চাকরি; নয়া বস্তিতে স্থির হয়েও যখন নতুন পেরেশানিতে পড়ল, ভাবতেই সোলায়মান মিয়া নিরুপায় হয়ে যায়। আবার ভাবে– ধুর। ডাকুক না লেচু! ডেকে যদি মজায় পায় তবে ক্ষতি কোথায়? না, মানবের মনে বিচিত্র ভাবনা আসলেও তা বরাবর কাজ করে না। বরং লেচু ডাকলে আরো ক্ষেপে যায় সোলায়মান মিয়া; যিনি কিনা জীবন যুদ্ধে অভিজ্ঞ। ধৈর্যের বাঁধ হয়তো তার ভেঙে যায় বয়সের সাথে সাথে। ছেলেরা আরো বেপরোয়া। কেউ লেচু বললেও তেড়ে যায় মারতে; সে জমিদারের ছেলে হোক আর স্থানীয়ই হোক। বিচার আসে প্রতিনিয়ত। সেদিন তো মেঝ ছেলে মারামারিতে হাতটাই ভেঙে আসে। ঘরের বিবি বিরক্তিতে দোষ দেয় স্বামীকে, তুমিই তো…
দুনিয়ার অনেক অভাব হয়তো সোলায়মান মিয়ার থাকতে পারে কিন্তু জন্মরোধ করার মত পুরুষ তিনি নন। হয়ত এ বাসাও ছাড়তে হবে যন্ত্রণায়। অপার বেদনার ভেতরেও হাওস তার মরে না। তার মেয়ে চাই, একটা মেয়ে। একঘেয়ে বস্তি জীবনের নিরানন্দের মাঝে তিনি ভাবেন জন্ম গ্রামের কথা। পলে পলে তার স্মরনে আসে বেড়ে উঠার সোনালী দিন, অভাব আর স্বভাবের হাত ধরাধরি করে হেঁটে চলার অন্দিন্য সময়টুকু। কাওয়ালের দাফন হওয়া পারিবারিক কবরস্থানে তিনি পানিই দেখতে পান কেবল। পানির রাজ্যে হাবুডুবু খাচ্ছে পিতা-পিতামহ-প্রপিতামহসহ বংশপরম্পরার মুরব্বিরা। এ পানি কি বাস্তুহারা মানুষের অশ্রুস্নাত সাক্ষী? অতীতের না ভবিতব্যের পাপের সঞ্চয় তা নির্ণয়ে ব্যর্থ হয় সোলায়ামান মিয়া। পানিতে ডুবতে থাকেন তিনি, পানিময় অবগাহনে খতিয়ান মেলানোর জোর চেষ্টা থাকলেও জের মিলে না কোন মতে। চিরকালের চঞ্চল মানুষটি সাঁতার ভুলে গিয়ে ডুবতে থাকেন- তার আহাজারি কেউ শুনছে না, কেউ এগিয়ে আসছে না তাকে হাত ধরে টেনে তুলতে।
এ কার পাপ? বংশান্তরের হয়ে চলা না কারও চেপে দেয়া তাও ভাবতে পারেন না সোলায়মান মিয়া। মাথায় আসে গজব ছাড়া এ কিছুই নয়, হতে পারে না। পানিতে জীবন, নদীতে গতি, পানিই মরণ…।