জাকির হোসেন
জন্ম ২৭ জুন ১৯৯৩ সালে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর ঝর্ণাপাড়ায়। গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায়। প্রকাশিত গ্রন্থ: পোলাও পাতা ও অন্যান্য (গল্পগ্রন্থ)
জাকির হোসেন

লাং

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

(১)

কৃষি প্রধান গ্রাম। আছে বড় গেরস্থ। বড় গেরস্থের বড় বাড়ি। গ্রামের বড় গেরস্থ বাড়ি গুলোর মধ্যে চাপা হিংসে কাজ করে। কে কার চেয়ে বেশি ফসল মাড়াবে সেই প্রতিযোগিতায় ব্যস্ত থাকে একেকজন। আর সেই জন্যে আলো ফোটার সাথে সাথে যে যার ক্ষেতে কাজ শুরু করে দেয়। আবার ছোট গেরস্থদের মধ্যে চলে রেষারেষি। কখনো কখনো এই রেষ এমন ভয়াবহ আকার ধারন করে যে কোর্ট-কাচারিতে যেতে হয়। মেম্বার, চেয়ারম্যানের দ্বারস্থ হতে হয়। বলা ভালো এই গ্রামে কোনো জনপ্রতিনিধি নেই। একজন দাঁড়িয়েছিল কিন্তু একবারও জিততে পারেনি। দুবার দাঁড়িয়ে দুবারই ফেল।

সূর্যের আলো যতো প্রশস্ত হয় পূর্ব দিকের গাছপালা ঘেরা বাড়িটি থেকে তত চিল্লাচিল্লির আওয়াজ বাড়তে থাকে। চিল্লাচিল্লির শব্দ শুনে পাশের ক্ষেতে কাজ করতে থাকা একজন আরেকজনকে বলে- ওইছে ফের লাগছে।

দ্বিতীয়জন বলে– না লাইগ্গা উফায় আছেরে ছেড়া? আব্দুইল্যার খাস জমিডা হাবি হামেদার নামে কৈরা দিছে। প্রথমজন বলে-হের আর কাম কিতা? হেই ওইলো কুকামের মাস্টর, হেই ওইলো গিয়া লুইচ্ছা।

দ্বিতীয়জন বলে– তার বাপ, ভাইরা কত ভালা। হাবির বাপটা পশ্চিমের মসজিদের মুয়াজ্জিন, ভাই পেশ ইমাম।

চিল্লাচিল্লি এখন আরো স্পষ্ট।

আয় দেহি চুতমারানি তোরে দাও দেয়া কুবাইয়াম।

আবদুলের হুমকি শুনে হামেদা বলে– আমারে কুবাইতে ক্যারে? তোর মাগীর বিষ কমাইতে পারছ না। আমার লগে বিষ ঝাড়তে আইয়ে কেয়া?

আবদুলের বউ হামেদাকে উদ্দেশ্য করে বলে– এই মাগীর লাইগ্যা আমরার জমিনডা গেছে। মিছারে হাছা আর হাছারে মিছা বানাইয়া দলিলে আমরার জমিনডা হের নামে তুইল্লা দিছে হাবি।

এই কথা শুনে হামেদার জেদ আরো তীব্র হয়– হাবির নাম লস কেরে সতীন? আমার দাগে জমিন পড়ছে। আমি জমিন পাইছি।

আবদুলের বিয়েতি বড় মেয়ে হামেদাকে ঝাড়ে– হাবির নাম লইলে কিতা অইছে। হাবি তোর লাং লাগে কি?

এই কথা শুনে হামেদার মাথায় খুন চাপে। লাউয়ের মাচা থেকে বড় একটা লাঠি নিয়ে আবদুলের বিয়েতি মেয়েকে মারতে আসে। ষাটোর্ধ্ব হামেদার মা মেয়েকে ফেরাতে চেষ্টা করে। আবদুলের হাতে দা ছিল। পরিবার সহ আবদুল এগিয়ে আসে মারার জন্য, কিন্তু মারতে পারে না। কাইজ্যা চলার সময় বাড়ির যারা বিভিন্ন ভাবে বকাবকি করে কাইজ্যা থামাতে বলেছিল, ঠিক তারাই শেষে এসে মারামারির মুহূর্তটিতে বাঁধা হয়ে দাঁড়ায়। আবারো দুই পক্ষকে শাসায়। উচ্চস্বরে বলে- হয় তোমরা বাড়িত থাকো। নয় বাড়ি ছাইড়া যাও গা। এডা বাইদ্যার বাড়ি না।

হামেদা উপস্থিত চোখের পানি ঝরিয়ে ফ্যালফ্যাল করে কেঁদে উঠে। কাঁদতে কাঁদতে বলে– আমি অহনি যাইয়াম হাবির কাছে। গিয়া সব কইয়াম। হেই নাকি আমার লাং লাগে। এডার বিচার চাই-ই চাই।

এই কথা বলতে বলতে বাড়ি থেকে বের হয়ে ক্ষেতের আইল দিয়ে হেঁটে এসে মাটির সড়কে উঠলো। তারপর কোথায় গেলো বোঝা গেল না। সড়কের সাথে একটি বাড়ির জঙ্গল থাকায় সড়কের মোড়টি জঙ্গলের আড়ালে ঢাকা পড়ল।

(২)

হামেদার দুই ছেলে। এক ছেলে ফসল কাটার মৌসুমে ধান কাটতে বিদেশ চলে গেছে। বিদেশ বলতে অন্য কোনো দেশ তা কিন্তু নয়। নিজ দেশের সমৃদ্ধ কোনো জেলা বা অঞ্চল। এসব জয়াগায় ধান কাটতে যাওয়া এদের কাছে বিদেশ যাওয়া নামে প্রচলিত। ছোট ছেলে বয়স দশ। মায়ের কাছেই থাকে। হামেদার স্বামী মাস্টার বাড়িতে কামলা খাটে। হামেদা আগে হাবির বাড়িতে কাজ করতো। ফসল ঘরে তোলার সময় হামেদা হাবির বউকে সাহায্য করতো। ঠিক সেই সময় থেকে হামেদার উপর হাবির নজর পড়ে। নারীদের দুই সময়ে অসম্ভব যুবতী দেখায়। এক, যখন একজন নারী প্রথম যৌবনে পদার্পণ করে তখন আর দ্বিতীয়বার হলো, মধ্য বয়সের শেষের দিকে। হামেদা মধ্য বয়স্কা পরিণত নারী। শরীরের লাবণ্য যে কোন যুবতীকে ঈর্ষা করতে বাধ্য করে। শাড়ির আঁচলে বুক ঢেকে রাখা উদোম পিঠের চামড়া রোদে পুড়ে কালো হয়ে গেছে কিন্তু কালো চামড়া তেলতেলে মসৃণ। বড় বড় চোখ জোড়া দেখার মত দেখায়। মাথার চুল এতো ঘন আর দীর্ঘ যে সর্বদা উদোম পিঠে চুল মেলে দিলে উল্লেখযোগ্য ফাঁকা থাকে না পিঠ দেখার মত! সারা দিবস রজনী পান খায় বলে ঠোঁট লাল থাকে। হামেদা হাবির বাড়িতে কাজ করলে হাবি ঘরের বারন্দায় চেয়ারে বসে হামেদাকে দেখত। হামেদা হাঁটার সময় শরীরের যত সকল নড়াচড়া দেখত। হামেদাও কম যেত না। আড়চোখে কাজ চলাকালীন হাবিকে দেখে নিত। আর তখনই হাবির বুকে অদ্ভূত একটা আওয়াজ হত। এমন তাকিয়ে থাকতে দেখে হাবির বউ সন্দেহ করত। একদিন হাবিকে গলা ঝেড়ে বললো- শুক্কুরির লগে লীলা খেলছিলা। অহন হামেদার লগে খেলবা নাকি? বউয়ের কথা শুনে হাবি থতমত খায়। বউ বলে– ছেড়া-ছেড়ি বড় অইছে। এসব রঙ লীলা বাদ দাও। হাবি বলে– বেক্কল বেটি,আমার কি আর সময় আছে পাগলামি করার? আমি কি বুঝি না কিছু?

হাবি তার বউকে বেআক্কেল বলে চুপ করিয়েছে ঠিক কিন্তু বাইরের কেউ একজন ঠিকই বুঝে ফেলেছে। অন্ধকার রাতে টর্চ মেরে হামেদার বাড়িতে প্রবেশ করা লোকটি ছিল হাবি। দেখে ফেলা একজন গলা ছেড়ে ডাক দিয়েছিলো– কে যাইন গো? হাবিব মেম্বার না কি?

মেম্বারের ভোটে না জিতলে কি হবে গ্রামের কিছু মানুষ কিন্তু হাবিকে মেম্বার বলে ডাকে। বাতাস কথা কয়! এই কান ওই কান থেকে ঘুরে ফিরে কথাটি হাবির বউয়ের কানে এলো। যেদিন কথাটি কানে এলো সেই দিন থেকেই হাবির বউ হামেদাকে তার বাড়িতে কাজ করতে আসতে নিষেধ করলো। এরপর থেকে হামেদা ওই বাড়িতে যায় না। তাই আজ আবদুল্লার সাথে কাইজ্যা লাগার পর হামেদার হাবির বাড়িতে বিচার নিয়ে যাওয়ার কথা না।

হাবি আবদুল্লার উঠানে মোড়ায় বসা। হাবির পাশে পিঁড়িতে বসা আবদু্ল্লা, তার বউ ও আবদুল্লার বড় ভাই।

হুনো, আবদুল ভাই পুরান দলিল বিছরাইতে গিয়া দেখলাম তোমরার আধ কাটা ক্ষেতটা হামেদার দাগে পড়ছে। আবার এই জমিনডা প্রথম আছিলো হামেদার দাদার। হামেদার দাদা থেইকা কিনছে তুমার বাপ কিন্তু কিনলে অইবো কি? জমিন তো রেজিস্ট্রি করছে না। তুমরাও পরে আর রেজিস্ট্রি করছো না। আর সব দিক মিলাইয়া হামেদা কোর্টে মামলা কইরা উকিলরে টাকা পয়সা খাওইয়া সিস্টেম মত জমিনডা লইয়া লইছে। টাকা পয়সা খরচ করলে ক্ষেতটা পাইবা কিন্তু কথা অইলো গিয়া এই আধ কাটা ক্ষেতের লাইগা তুমি  যে টাকা খরচা করবা। সেই টাকা দিয়া বিলে এক কাটা জমিন পাইবা। অহন তুমি চিন্তা কইরা সিদ্ধান্ত লও কি করবা?

হাবির কথা শুনে আবদুল্লার বউ শব্দ করে বড় একটা নিঃশ্বাস ছাড়ে। আবদুল্লার বড় ভাই বলে– কোর্ট ঘরের দেওয়ালের প্রতিটা ইট ট্যাহা খায়। দরকার কি এতো ট্যাহা খর্চা করনের। যা গ্যাছে তা লৈয়া আর ঘাটাঘাটির করনের কাম নাই।

আবদুল্লা অসহায়ের মত কাতর গলায় বলে- হাবি, তুমি আমার বয়সে ছোট। তবে একটা কথা কই ভাই। কথাটা মনে রাইখো। আমরা অইলাম গরিবমূর্খ মানুষ। আমরার আর ক্ষমতা কই? ট্যাহা খর্চা কৈরা, কাগজ দলিল পৈড়া নিজের জমিন বাইর করনের। মরণ একদিন আছে। আল্লাহ বিচার করবো কিন্তু হ, সব বুঝি কার বলে কে নাচে!

কথাটি শোনার পর হাবি ঠোঁটের কোণ থেকে হাসির রেখা টানে। অসহায়দের ঠকিয়ে ঠকবাজদের এই হাসি গুহার জীবন থেকে শুরু। হাবির জন্য আবদুল্লার মেয়ে এক গ্লাস দুধ নিয়ে আসে। হাবি দুধ খেতে আপত্তি করে কিন্তু আবদুল্লা দুধ খেতে জোর করে বলে– আরে বেটা খাও, নতুন গাইয়ের দুধ। দশ দিন অইলো বাছুর বিয়াইছে।

আবদুল্লা পারে তো হাবিকে দুধের বদলে বিষ খাইয়ে দেয়। আবার দুধ খাইয়ে হাবির মন রাখা কিন্তু আবদুল্লার সাধারন কৌশল!

(৩)

হাবির বউয়ের গলায় তাবিজ, হাতের কনুইয়ের উপর তাবিজ, কোমরে তাবিজ, ঘরের দোর, পালঙ্কের তোষকের নিচে তাবিজ। আর এই সব তাবিজ হল হাবিকে হামেদা থেকে ফেরানোর জন্য। হাবির বউ চেষ্টার কমতি করেনি হাবিকে ফেরাতে। শেষমেশ হাবির মুয়াজ্জিন বাপ থেকে তাবিজ নিল। তাবিজের তেলেসমাতিতে কয়েকদিন হাবি ঠিক থাকে। হামেদার কাছে যায় না। কিন্তু কয়েকদিন পর হাবি আবার হামেদার বাড়ির পথ ধরে। আর তাই হাবির বউ ঠিক বুঝতে পারে না। এই কয়েকদিন হামেদার কাছে না যাওয়া কি হাবির চালাকি নাকি তাবিজের তেলেসমাতি ! অথচ এই কয়েকদিনে হাবির বউ হাবির কাছ থেকে প্রাপ্য ভালোবাসায় তৃপ্তির ঢেকুর তুলেছে। শরীর এবং মন দুটোতেই তুষ্ট ছিলো স্বামীসুখে। আদরে-আবদারে, ইশারায়-পিপাসায় স্বামীতে ডুবে ছিলো অথৈ জলে হারানো ধাতব মুদ্রার মত !

হাবি বাজার করে হামেদার বাড়ির পাশ দিয়ে যাচ্ছিলো। হামেদা পুকুর পাড়ে লাগানো কুমড়োর মাচা থেকে ডগা ছিঁড়ছিলো। হঠাৎ হাবিকে দেখতে পেয়ে পুকুরের পাশে বাড়ির সরু প্রবেশ পথে এসে দাঁড়ালো। হাবিকে শুনিয়ে মোটামুটি জোর গলায় সুর টেনে বলল–
গুণি গুণি দিন গুণি,
বন্ধুর পাওয়ের শব্দ শুনি ।

হামেদার সুরেলা ডাক শুনে হাবি হাঁটা থামিয়ে দেয়। স্থির দাঁড়িয়ে থেকে হামেদার দিকে ফিরে তাকালো। বিকেলের লাল সূর্যের রঙ হামেদার মুখে এসে পড়েছে। বাতাস নেই। কারো মুখে কোনো শব্দ নেই। নিকটতম দূরত্ব থেকে দুজন দুজনকে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখে সম্ভবত বাক্যালাপ হচ্ছে। হাবি ঘাড় ঘুরিয়ে সামনে হাঁটা শুরু করলো। হামেদা বিরক্তি মুখে বাড়িতে প্রবেশ করে কুমড়ো ডগা, কুলো ও পানের বাটা নিয়ে উঠোনে বসতেই হাবি এসে হাজির। হাতে বাজারের ব্যাগ। বাড়িতে না গিয়ে পথ থেকে ফিরে এসেছে। হাবিকে দেখে হামেদা জোর গলায় বলতে শুরু করলো- আমার বাড়িত আইছুন কেয়া? আফনে আমার লাং লাগুইন। আমার বিছনাত আফনেরে হুতাই। আফনেরে তেল মাখাইয়া আমি মাইনষের জমিন লইয়া লই। হামেদা আবদুল্লাদের শুনিয়ে শুনিয়ে কথা গুলো বলছে। আবদুল্লার বউ তাদের রসুই ঘর থেকে হামেদার কথাগুলো পরিষ্কার শুনতে পাচ্ছে। কিন্তু হাবি উপস্থিত থাকায় আবদুল্লার বউ কোনো কথার উত্তর দিল না।

হাবি হামেদাকে বলল– পান দিবি ?

হামেদা মৃদু স্বরে বলল– আর কিছু চাওয়ার নাই ?

হাবি কোন কথা বলল না। হামেদা পান বানিয়ে হাবির হাতে দিল। হাবি পান খুলে দেখে বলল- চুন দে।

হামেদা চুনের কৌটা বাড়িয়ে দিল। পান মুখে দিয়ে হাবি চলে যাচ্ছে এমন সময় পিঁড়ি থেকে উঠে হামেদা হাবির পিছু থেকে বলল– উত্তর কি নাই ?

হাবি বলল– অসময়ে চাইলে মন ভরে না।

হামেদা ঘুরে দাঁড়ালে হাবি ঘাড় ঘুরিয়ে পেছন ফিরে হামেদার পিঠ দেখলো। আরো দেখলো হামেদার কোমরের নিচে পেছনের অংশ যথেষ্ট বৃদ্ধি পেয়েছে।

(৪)

বিদ্যুৎ বিহীন গাঁও গেরামের মানুষ এশারের পরেই বিছানাতে যায়। রাত্রি গভীর হলে  ছবির মত গ্রামটি কবরে রূপ নেয়। কেবলমাত্র বহু দূর থেকে কুকুরের ডাক শোনা যায়। শিয়ালগুলো বেরিয়ে আসে জঙলা থেকে। বেরিয়ে এসে গলা ছেড়ে ডাকে। আবার কুকুরের দৌড়ানি খেয়ে পালিয়ে যায়। জোনাই জ্বলে। জোছনা রাত। চাঁদের আলোয় কাছের বস্তু স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। হাবি হামেদার ঘরের পেছন থেকে টর্চ লাইট মারলো। বাঁশের বেড়ার ফাঁকে টর্চের আলো হামেদার বিছানায় গিয়ে পড়লো। আলো দিয়ে দেখার চেষ্টা করলো খাটে কারা শুয়ে আছে। তিনজন শুয়ে আছে বুঝতে পারলো। কিন্তু হামেদা ছাড়া বাকী দুজন কে তা বুঝতে পারলো না। হাবি আবার টর্চ মারলো এবং এবার মধ্যখানে হামেদার ছেলে শুয়ে আছে বুঝতে পারলো। এবার টর্চ না মেরে অত্যন্ত মৃদু স্বরে সন্তর্পণে হামেদাকে ডাকলো। আবার ডাকলো। এবার টর্চ মেরে ডাকলো। কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে হাবি চলে যাচ্ছিল, এমন সময় হমেদা বলল– যাইবা গা ? হাবি পেছন ফিরে দেখলো হামেদা দাঁড়িয়ে আছে।

হাবি হামেদার কাছে এসে বলল– ঘরে চল। হামেদা মৃদু স্বরে বলল– পোলার বাপ ঘরে আছে। হাবি শব্দ করে নিঃশ্বাস ফেলে বলল– তিরাশ লাগছে। পানি খাওয়াবি?

হামেদা বলল– আইয়ো। হাবি হামেদার ঘরের সামনে দাঁড়িয়ে আছে। হামেদা দরোজার কপাট খুলল কিন্তু ঘরে প্রবেশ করলো না। দ্রুত হাবির কাছে এসে হাবির হাত ধরে আবদুল্লাদের ঘরের সামনে দিয়ে উঠোনের উপর হেঁটে বাড়ির অন্য এক পরিবারের ছনের ঘরে ঢুকল। ঘর ভরা গরুর খড়। হামেদা খড়ের উপর শুয়ে পড়লো। বুক থেকে কাপড়ের আঁচল সরিয়ে বলল– তিরাশ মিটাও।

হাবি হামলে পড়লো হামেদার উপর। মুখে স্তন পুরে দিল। পরিণত রাতে ঝরে পড়া পাতার শব্দ স্পষ্ট শোনা যায়। সম্ভবত দুইজন নারী-পুরুষের মৈথুন পূর্ব ফিসফিসানি শুনে আবদুল্লার ঘুম ভেঙ্গে গেল। বুঝতে দ্বিধা হল না খড়ের মধ্যে গড়াগড়ির শব্দ ছনের ঘর থেকে আসছে এবং এই শব্দ আবদুল্লার পূর্ব পরিচিত। যা হবে হোক চোর কিংবা অন্য কেউ। ধরতে পারলে দা দিয়ে কোপাবে। এই প্রতিজ্ঞায় আবদুল্লা ঘর থেকে বেরুলো। আবদুল্লার এক হাতে দা আরেক হাতে জ্বলন্ত হারিকেন। হামেদা বেড়ার ফাঁকে হারিকেন হাতে আবদুল্লার আগমন টের পেল।

আবদুল্লা ছনের ঘরের সামনের দিকের দরজা দিয়ে ঢুকল। হামেদা অপ্রস্তুত হাবিকে নিয়ে সামনের দিকের আরেক দরজা দিয়ে বেরিয়ে গেল। পলকমাত্র ব্যবধানে পুলিশ চোরকে ধরতে পারল না। যে দরজা দিয়ে হামেদা হাবিকে নিয়ে বেরিয়েছে সেই দরজা দিয়ে আবদুল্লা ছনের ঘর থেকে বেরুলো। ততক্ষনে এই তল্লাটে তারা আর নেই। অগ্রভাগে হামেদা দৌড়াচ্ছে পাছে হাবি হামেদার কাপড়ের আঁচল ধরে দৌড়াচ্ছে।

হামেদার বুকে কাপড় নেই। এক হাতে হাবির টর্চ লাইট। মোড়ানো দুই হাতে স্তন যুগল ঢাকা। বাড়ির উঠোন পেরিয়ে, আবদুল্লাদের ঘরের পেছন দিয়ে সোজা হাবির পাট ক্ষেতে গিয়ে ঢুকলো। আবদুল্লা তাদের পিছু তাড়া করে ধরতে ব্যর্থ হয়। আবদুল্লা আসার আগেই তাদের অস্তিত্ব অদৃশ্য হয়ে যায়। আবদুল্লা হামেদার ঘরের পেছন পর্যন্ত এসে থামে। এদিক ওদিক অনুসন্ধিৎসু চোখ বুলিয়ে ঘরে ফিরে যায়। জমিনের উপর জমিন শুয়ে আছে !

উলঙ্গ জমিনের উপর উলঙ্গ জমিন ! আদিম মৈথুনে মগ্ন এক জোড়া কায়া। হাবির কপাল থেকে এক ফোঁটা ঘাম হামেদার ঠোঁটে ঝরে পড়ে। প্রবল উত্তেজনায় হামেদা কাঠের মত হাবির শক্ত বাহু থেকে তাবিজটি টেনে ছিঁড়ে ফেলে। হামেদা সঙ্গমরত হাবিকে বলে– তোমার ক্ষেতটা দিবা? দিঘী কাটা লাগে। আবদুল্লার দিঘীত গুসোল করতে গেলে শেয়ালের মত আমার দিকে চাইয়া থাকে। হাবি সঙ্গম শেষে হামেদার বুকে লুটিয়ে পড়ে।

হামেদার ঘরের পাশে আবদুল্লার জমিন।সেই জমিনের পাশেই হাবির পাট ক্ষেত। ক্ষেতের অর্ধেক পাট এখনো কাটা হয়নি আর বাকী অর্ধেকটা কাটা হয়েছে কয়েকদিন আগে। সারা রাত হাবি হামেদার জমিনে লাঙল চালায় আর সকালে হাবির ফসলি জমিন পাট ক্ষেতে লাঙল চালায় হামেদার স্বামী।


 

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu