মোহাম্মদ জসিম
জন্ম ৩ এপ্রিল ১৯৮৭ খ্রিস্টাব্দে বরিশালের বাকেরগঞ্জে। তিনি মূলত কবি এবং গল্পকার। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ: অসম্পাদিত মানুষের মিথ (কাব্যগ্রন্থ), তামাশামণ্ডপ (অণুগল্প), অশ্বক্ষুর ও অন্যান্য টগবগ (কাব্যগ্রন্থ)।
মোহাম্মদ জসিম

যুদ্ধশিশু ও অন্যান্য

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

যুদ্ধশিশু

—বাবার নাম?

—যুদ্ধ।

—মায়ের নাম?

—যুদ্ধ।

—ঠিকানা?

—এখনও কোনো দেশ স্বীকৃতি দেয়নি।

একরঙা

রাস্তা ও দেয়াল, এমনকি বাড়িঘরগুলোও লালে লাল—আকাশটা ধরাছোঁয়ার বাইরে, নইলে ওটাকেও লাল করে ছাড়তো এরা।

বললাম—এমন কেন!

তিনি জানালেন—তেমন কিছুই না। এই তো ভাইয়ে ভাইয়ে হাতাহাতি, খুনোখুনি, রক্তারক্তি।

কৌতূহলী হলাম আরো।

আর?

আমরা সম্ভোগকেও দিয়েছি নতুন মাত্রা। এই ধরুন নারীসঙ্গের কথা, রক্তারক্তি ছাড়া কি উৎসব জমে বলুন!

লোকটি হাসে। তার হাসিটিও লাল, খেয়াল করলাম। আমরা যে কোনো উপলক্ষেই রক্তলাল উৎসব করি। যেমন ধরুন বিয়ে, জন্মদিন, ভোটাভুটি। শিশুদের সব চকলেটও লাল।

পানশালায় লাল ব্যতীত আর কোনো রঙের পানীয় পাবেন না।

লোকটি হাসে। অন্য কোনো রঙ আমাদের সহ্য নয়। এমনকি হলুদ সবুজ কিংবা মেটেরঙ মানুষ দেখলে আমরা তাকে কতল করি, সেদিনও বড়সড় উৎসব হয়।

এই যে আপনি এলেন, আপনাকেও আমরা বিশেষ নিয়মে স্বাগতম জানাবো। আপনার জন্য ইতিমধ্যেই লালরঙ পোষাক আনানো হয়েছে।

অভাব

গাঢ় সুন্দর গায়ের রঙ, আটাশটা চকচকে দাঁত (তিনটা কালচে, একটা নাই), প্রমাণ সাইজ দৈর্ঘ্যে সবল ও স্বাস্থ্যবান—এই হইলাম আমি।
আমারে কিনুন।

বিজ্ঞাপন টানাইয়া দিলাম, শহরের আনাচ কানাচ, দেয়ালে, গাছে, এইহানে ওইহানে। নিয়ম কইরা সকাল সন্ধ্যা বটতলায় দাঁড়াইয়া থাহি, ওইডাই দোকান। নিজেরে বেইচা দিমু। বিজ্ঞাপনের আছড় ভালমতোই পড়তাছে। লোকজন আইতাছে, দরদাম করতাছে। কিন্তু, সমস্যা হইতাছে গিয়া কেউ পুরা শরীরডারে কিনতে চাইতাছে না। কেউ হাত কিনবো, কেউ পা। কেউ কেউ নিলোম বুকটায় হাত রাইখা ছুঁইয়া টুইয়া দেখতাছে, কেউ কয় বুকে লোম থাকলে ভালা হইতো।

এক বয়রা আইছে, একখান কান কিনবো। অন্য কানডারে কি ধুইন্যাক্ষেতে হালাইয়া রাখুম নাকি! মর জ্বালা, কান বেচলাম না।

একজন বুইড়া আইছে চোক্ষু নিবো, তাও একখান। কাইল্যা কুচকুইচ্যা এক মাইয়া আইলো, হ্যায় কিনবো লিঙ্গডা। বেলাজ, বেশরম যা-ই কন, তারে আমার সাহসী মনে হইলো, ভাল্লাগলো। কিন্তু কথা হইতেছে, পুরুষ মাইনষের লিঙ্গ না থাকলে বাকি শরীরডার দাম ঠিকঠাক পাওন যাইবো না। অহন ভাবতাছি, দুনিয়ার মাইনষের অভাবের শ্যাষ নাই। কিছু না কিছু একটার কমতি হগ্গলেরই আছে। অথচ মনে হইতাছে দিনে দিনে খয়রাতি হইতাছে মানুষগুলান। আস্তা একটা বডি কিনবার ক্ষ্যামতা কারো নাই।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu