আবু এন এম ওয়াহিদ
The Author is an Economics Professor and an Academic Journal Editor in the U.S. Email: wahid2569@gmail.com
আবু এন এম ওয়াহিদ

হ্যারল্ড

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটির (টিএসইউ) দু’টো ক্যাম্পাস। একটা ছোট, একটা বড়। ছোটটা ‘ডাউন টাউন’-এ এবং এখানেই আমাদের ‘কলেজ অফ বিজনেস’। বড়টা মাইল দু এক দূরে, যাকে বলা হয় ‘মেইন ক্যাম্পাস’। আমার অফিস ‘ডাউন টাউন’-এ। এটি একটি বড় চারতলা বিল্ডিং। এই দালানটি শিক্ষক, কর্মকর্তা ও কর্মচারি মিলে প্রায় দুশো লোকের কর্মস্থল। তার ওপর ক্লাসরুম এবং ল্যাব তো আছেই। আরো আছে  ছোট্ট একটি পোস্ট আপিস, কপিয়িং রুম, সিকিউরিটি বক্স, বুক স্টোর, কনভিনিয়েন্স স্টোর, ক্যাফেটেরিয়া, লাইব্রেরি, মিডিয়া সেন্টার, টেস্টিং সেন্টার, স্টক ট্রেডিং রুম, ইত্যাদি, ইত্যাদি। উইক ডে-তে এই স্থাপনায় সকাল আটটা থেকে রাত সাড়ে আটটা পর্যন্ত বিরতিহীন ক্লাস চলে।

তিনতলাতে ‘ওপেন টু বিলো’ একটি প্রশস্ত লবি এরিয়া আছে। লবির একপাশে আছে বড় অডিটোরিয়াম– যেখানে সব সময় সেমিনার, সিম্পোজিয়াম, বক্তৃতা, ইত্যাদি লেগেই থাকে। অন্যপাশে চারতলা বরাবর লবির ওপর দিয়ে চলে গেছে একটি লম্বা হলওয়ে। অডিটোরিয়াম এবং হলওয়ের মাঝখানে উন্মুক্ত লবি-চত্বরে হয় সেমিনারে অংশগ্রহণকারী এবং আগত অতিথিদের আপ্যায়ন এবং খাওয়া-দাওয়া। এখানে সহজে এক সাথে দুই থেকে আড়াই শ’ লোকের স্থানসঙ্কুলান হয়। এই লবি সময় সময় বিয়ে এবং অন্যান্য সামাজিক অনুষ্ঠানেও ব্যস্ত থাকে। লবিতে আরও অনেক কর্মযজ্ঞ চলে, যেমন বুক ফেয়ার, জব ফেয়ার, এক্জিভিশন, পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান, সংগীতানুষ্ঠান, ট্রেনিং ওয়ার্কশপ।

আমার আপিস থেকে ক্লাসরুমে যাওয়া-আসার সময় খোলা লবির গা ঘেঁষে ওই হলওয়ে দিয়ে চলাচল করতে হয়। আমার নিত্যদিনের চলার এ পথে প্রায়ই শোনা যায় মানুষজনের হৈ চৈ আর বাসন-কোসনের ঠুংঠাং আওয়াজ। অনুষ্ঠান না থাকলেও ছাত্রছাত্রীদের আনাগোনায় লবি এবং হলওয়ে সবসময় গমগম রমরম করতে থাকে। তারুণ্যের আনন্দোচ্ছ¡াস এ কোলাহলের নির্যাস। ছুটির দিনে আপিসে এলে কাজ হয় বটে, কিন্তু জীবনের সজীবতা ও প্রাণচাঞ্চল্যের ছোঁয়া পাওয়া যায় না।

যে মানুষটির সতেজ ও স্বতঃস্ফূর্ত পদচারণা ছাড়া টিএসইউ-র ‘ডাউন টাউন’ ক্যাম্পাসের কর্মচাঞ্চল্যে গতি আসে না, যার অনুপস্থিতি গোটা পরিবেশকে ম্রিয়মাণ করে তুলে, সকালে এসে যার সদাহাস্য মুখ না দেখলে দিনটাই সুন্দরভাবে শুরু হয় না, সে আর কেউ নয়, সে আমাদের প্রিয় হ্যারল্ড! তার একটা আপিস আছে, কিন্তু কদাচিৎ সেখানে  সে বসে। সারাদিন ধরে সে বিল্ডিংব্যাপী চক্কর মারতে থাকে। আপনি বিল্ডিং-এ চলাফেরা করতে গেলে কোথাও না কোথাও হ্যারল্ড-এর দেখা পেয়ে যাবেন। তার মাথায় ক্যাপ, গায়ে সুয়েটার, আর হাতে কিছু না কিছু থাকবেই। তাকে কখনো কোথাও অলস বসে থাকতে দেখবেন না। সবসময় সে কাজের মাঝে ব্যস্ত, কাউকে না কাউকে সাহায্য করছে।

হ্যারল্ড, টিএসইউ-র ডাউন টাউন ক্যাম্পাসের ‘চিফ জ্যানিটার’। তাকে শুধু জ্যানিটার বললে কম বলা হয় বৈকি। এ তো তার মামুলি পোশাকি পরিচয়। তার আসল পরিচয় তার কাজে। সে যে কত কাজ করে এবং কী কী করে, শুনলে আপনারা অবাক হয়ে যাবেন! সরাসরি তার অধীনে ছয়জন জ্যানিটার আছে। এদের কাজ তাকে সার্বক্ষণিক তদারকি করতে হয়। শিক্ষক-কর্মচারিদের কেউ বাড়িতে আপিসের চাবি ফেলে গেলে হ্যারল্ড দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেবে, কেউ আপিসে ‘লক্ড আউট’ হয়ে গেলে সবার আগে হ্যারল্ড-এর ডাক পড়ে। ভিজিটার এলে কে, কোথায়, কার কাছে যাবে, হ্যারল্ড পথ দেখিয়ে দেবে, গন্তব্যে পৌঁছে দেবে, সেমিস্টারের শুরুতে নতুন ছাত্রছাত্রীরা ক্লাসরুম খুঁজে না পেলে হ্যারল্ড দেখিয়ে দেবে, সাথে করে নিয়ে রুমে ঢুকিয়ে দিয়ে আসবে। চারতলা এই বিল্ডিং-এ এতগুলো মানুষ বসে, কার আপিস কোথায়, কে কী করে, মোটামুটি সবই হ্যারল্ড-এর মুখস্থ। অধিকাংশ শিক্ষক-কর্মচারির নামও তার জানা। সে ছাত্রছাত্রীদের সাথে একান্তে কথা বলে।কী কথা? তা শুনে তো আমি হতবাক! শিক্ষক হিসেবে আমাদের যা করার কথা, সেইকাজের কিছুটা হলেও হ্যারল্ড আমাদের হয়ে সেরে ফেলে। এর সাথে তার নিজের জন্য আরো একটি কাজ করে,  যার মূল্য আরো বেশি, অনেক বেশি। সে ছাত্রছাত্রীদেরকে কাউন্সেলিং করে, তাদেরকে বোঝায় ভালো করে একজন ভালো মানুষ হতে, মনোযোগ দিয়ে পড়ালেখা করতে, অযথা আজেবাজে কাজে সময় নষ্ট না করতে। তাদেরকে সে আরো বলে, এটা জীবন গড়ার উপযুক্ত সময়, সময়ের কাজ সময়ে না করলে পরে পস্তাতে হবে। চার বছরের প্রোগ্রাম সাড়ে তিন বছরে শেষ করার জন্য  সে ছাত্রছাত্রীদের উৎসাহ দেয়, উদ্বুদ্ধ করার চেষ্টা করে।

বিদেশি শিক্ষার্থী, বিশেষ করে আফ্রিকানদের সাথে তার কথা হয় অন্য মাত্রায়। যে, যেদেশ থেকেই আসুক না কেন, প্রতিটি আফ্রিকান ছাত্রছাত্রীর সাথে তার অন্য রকম সম্পর্ক, তাদের প্রতি সে বাড়তি একটা নাড়ির টান অনুভব করে। এদের মতন সেও কৃষ্ণাঙ্গ, তারও আদিপুরুষদেরকে আফ্রিকা থেকেই মার্কিন মুল্লুকে আনা হয়েছিল। সে জানে না,কবে,কত পুরুষ আগে, কারা, কিভাবে তার বংশধরদের আফ্রিকা থেকে ধরে এনে আমেরিকায় দাসত্বের শৃঙ্খলে আবদ্ধ করেছিল। বাপ-দাদাদের আফ্রিকার কোন দেশের কোন অঞ্চল থেকে আনা হয়েছিল এ সবের কোনো হদিস জানা নেই হ্যারল্ড-এর। আফ্রিকান ছেলেমেয়েদের সে খোঁজখবর নেয়, তাদের সাথে আন্তরিকতার সাথে এ-কথা সে-কথা অনেক কথা বলে, আশায় আশায়, যদি কারো কাছ থেকে কোনো দিন কোনো যোগসূত্র (ঈষঁব) পায়, যা দিয়ে সে তার পূর্বপুরুষদের নামঠিকানাসহ না জানা সব রহস্যের জট খুলতে পারে! হ্যারল্ড দেশহারা হয়েছে যুগ যুগ আগে, কিন্তু এখনো আফ্রিকার সাথে তার নাড়ির টান অনুভব করে, ভীষণভাবে, তীব্রভাবে! তার আশা একদিন সে অ্যালেক্স হেইলির মতো সফল হবে, তার শেকড়ের সঠিক সন্ধান খুঁজে পাবে!

আমি একদিন প্রশ্নপত্র ছাপাতে কপিয়িংরুমে গিয়েছি। লগইন করে দেখি মেশিনে স্ট্যাপ্ল শেষ হয়ে গেছে। আশেপাশে সেক্রেটারিরা কেউ নেই, আমার কাছে মেশিন-রেডি স্ট্যাপ্ল নেই এবং আমি মেশিন খুলে স্ট্যাপল বক্স রিপ্লেস করতেও জানি না। কাজটা একটু জটিল ও কঠিন। ট্রে-তে কাগজ ভরা বা পেপারজ্যাম ক্লিয়ার করার মতোন সহজ-সরল নয়। মন খারাপ করে আমি আপিসে ফিরে আসব, এমন সময় হঠাৎ দেখি কোথা থেকে হ্যারল্ড এসে হাজির। আমার সমস্যাটা কী, জানার আগেই সে বলে বসল, ‘Don’t worry, I will fix it.’ হ্যারল্ড স্টোররুম খুলে এক বক্স স্ট্যাপ্ল বের করে আনলো, মেশিনের ডালা খুলে অতি সহজেই স্ট্যাপ্ল বক্স রিপ্লেস করে দিলো। আমি অবাক হয়ে তাকে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি এ কাজ কেমন করে শিখলে? সে কিছুই না বলে, গালভরা একটা হাসি দিয়ে চলে গেল। আমার আপিসে আমি একদিন লক্ড আউট হয়ে গেলে সে এসে আমার দরজা খুলে দিল। এরপর আমাকে দেখলেই বলে, ‘Are you alright? Do you need any help?’

তিনতলার লবিতে যখন অনুষ্ঠানাদি হয়, তখন রুম সাজানো, চেয়ার-টেবিল গোছানো, মাইক্রোফোন লাগানো, ইত্যাদির তদারকিতেও আজকাল হ্যারল্ড-কে দেখা যায়। খাওয়াদাওয়ার আয়োজন যখন হয়, তখনও আছে হ্যারল্ড-এর সরব এবং সক্রিয় উপস্থিতি। সব অনুষ্ঠানে হ্যারল্ড-এর জন্য এক প্লেট খাবার রিজার্ভ থাকে। বিয়ে বাড়িতে কাজী সাহেবের খাওয়া যেমন নিশ্চিত, তেমনি টিএসইউ-র ডাউন টাউন ক্যাম্পাসের যে কোনো অনুষ্ঠানের ভোজপর্বে হ্যারল্ড-এর শরিক হওয়া প্রশ্নাতীতভাবে অবধারিত। এ যেন তার জন্মগত দাবি, পেশাগত অধিকার!

হঠাৎ একদিন দেখি হ্যারল্ড-এর বেশভ‚ষায়, পোশাকআশাকে চোখে পড়ার মতন পরিবর্তন। মাথায় নতুন ক্যাপ, সুন্দর ফুলহাতা সুয়েটার, পায়ে চকচকে জুতো এবং কেতাদুরস্ত বেশভূষা। ভাবলাম, হয়তো বিশেষ কোনো কারণে আজ সেজেগুজে এসেছে। দেখলাম, না, আমার ধারণা ভুল। হ্যারল্ড এখন বদলে গেছে। সে এখন নতুন মানুষ, রোজ রোজ পরিষ্কার ছিমছাম কাপড় পওে ফিটফাট হয়ে কাজে আসে। ভাবলাম, হয়তো বা নতুন গার্লফ্রেন্ড জুটেছে, ডেটিং চলছে, শিগগির বিয়ে করবে। পরে বুঝলাম তাও নয়। সেদিন এলিভেটরে পেয়ে তাকে বললাম, হ্যারল্ড, আজকাল তুমি খুব সেজেগুজে আস, ব্যাপার কী? ‘আমি তো এখন ইভেন্টস্ কোওর্ডিনেটার-এর দায়িত্বেও, তাই আমাকে জনসমক্ষে বেরোতে হয়, পাবলিক ফোর ফ্রন্টে থাকতে হয়, তাই’– হ্যারল্ড উত্তর দিল। আমি তার কাছে একটা অনুরোধ রেখে আমার আপিসে চলে এলাম। বললাম, হ্যারল্ড, তুমি একদিন আমার রুমে এসো। তোমার সাথে আমার কিছু কথা আছে।

ঘন্টা দু’য়েক পরে দেখি হ্যারল্ড আমার আপিসে এসে হাজির। আমি ক্র্যার্কাস(নোন্তা বিস্কুট) খাচ্ছিলাম। তাকেও শরিক হতে বললাম। সে একখানার বেশি নিল না। বসতে বলায় খুশি হলো। আমি কিছু জানতে চাওয়ার আগেই সে আমার দিকে ছুঁড়ে দিলো এক প্রশ্ন, ‘সবাই তো আমাকে কাজের জন্য ডাকে, আমার সাথে কথা বলার জন্য তো কেউ কোনোদিন আমাকে ডাকেনি। তুমি আমাকে কেন ডাকলে?’। আমি বললাম, একটু ধৈর্য ধর, আমার কথা শুনলেই তুমি বুঝতে পারবে আমি আজ কেন তোমাকে ডেকেছি। আমি তোমার ওপর একটা ‘শর্ট পিস’ লিখব। শুনেই হ্যারল্ড যেন খুশির ঢেউয়ে ভাসতে লাগলো। তাকে নিয়ে কেউ কিছু লিখবে, এটা সে ভাবতেও পারেনি। কথোপকথনে তার কাছ থেকে যা পেলাম, সংক্ষেপে তা এরকম।

হ্যারল্ড-এর বয়স ষাটের কোঠায়। সে টেনেসি স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে নার্সিং-এ ডিগ্রি করেছে ঊনিশ শ’ আশির দশকের গোড়ার দিকে। তারপর ২৫ বছর বিভিন্ন জায়গায় নার্স হিসেবে কাজ করে আবার টিএসইউ-তে ফিরে এসে এই চাকরি নিয়েছে। ঘরের ছেলে ঘরে ফিরেছে, কিন্তু এতদিনে সে আর ছেলে থাকেনি, একজন বিজ্ঞ, পরিপক্ক, প্রৌঢ় মানুষে পরিণত হয়েছে। তার জব টাইট্ল হলো ‘বিল্ডিং অ্যাটেন্ডেন্ট অ্যান্ড ইভেন্ট্স কোওর্ডিনেটার’। বিল্ডিং অ্যাটেন্ডেন্ট-এর কাজ হলো বিল্ডিংটিকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। এ ছাড়াও বিল্ডিং-এর কোথাও মেরামতির কোনো দরকার পড়লে সঙ্গে সঙ্গে যথাযথ কর্তৃপক্ষের নজরে আনা। ইভেন্ট্স কোওর্ডিনেটার-এর দায়িত্ব একটু অন্য রকম। এখানে যেসব সামাজিক, প্রশাসনিক এবং অ্যাকাডেমিক অনুষ্ঠানাদি হয় তার সুষ্ঠু সমন্বয় করা।

বাংলাদেশের সামাজিক ও প্রশাসনিক রীতিনীতি এবং মূল্যবোধের সাথে তুলনা করলে এখানে কয়েকটি মজার বিষয় বেশ স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে। প্রথমত, আমাদের দেশে পুরুষ মানুষ নার্সিং পড়তেই যাবে না। দ্বিতীয়ত, একজন প্রশিক্ষিত নার্স ২৫ বছর সফলভাবে নার্সিং-এর কাজ কওে কোথাও চিফ জ্যানিটারের চাকরিও নেবে না। বাংলাদেশে যেটা কল্পনা করা যায় না সেটা পশ্চিমা দেশে হয়। কেন হয়, তারও কারণ আছে। এ-সব দেশে যে, যে-কাজই করুক না কেন, যে যত ছোট কাজই করুক না কেন, তার আত্মসম্মানবোধ অন্য যেকোনো চাকরির মতোনই সমান। সে ছোট কাজ করে বলে তার বস কেন, কেউই তাকে  তুচ্ছতাচ্ছিল্য করবে না, তার সাথে দুর্ব্যবহারের  তো প্রশ্নই ওঠে না। এটা এদেশের আইন এবং প্রচলিত সামাজিক রীতিনীতির একেবারেই বরখেলাপ। তৃতীয়ত, বাংলাদেশে হলে হ্যারল্ড-এর জব টাইট্ল হতো, ঝাড়ুদারদের সরদার বা এ-জাতীয় কিছু, কিন্তু পশ্চিমা দেশে এটাকে ঝাড়ুদারদের সরদার তো বলছেই না, এমন কি ‘চিফ জ্যানিটার’-ও বলছে না, বলছে ‘বিল্ডিং অ্যাটেন্ডেন্ট’; কোনো কোনো জায়গায় এটাকে ‘বিল্ডিং ম্যানেজার’-ও বলে। চতুর্থত, বাংলাদেশে ঝাড়ুদারের সরদারকে কখনো কোনো সামাজিক অনুষ্ঠানের সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হবে না এবং সেও এ জাতীয় কাজ করবে না। এখানে যেহেতু তার যোগ্যতা আছে তাই তাকে একসাথে দুটো দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। এতে তার যেমন সময়ের পূর্ণ ব্যবহার হচ্ছে, তেমনি দুই কাজ একজনকে দিয়ে করানোতে বিশ্ববিদ্যালয়েরও অর্থ সাশ্রয় হচ্ছে।

হ্যারল্ড-এর কাছ থেকে আরো জানলাম, তার মা-বাবা কেউ বেঁচে নেই। ভাইবোন আছে বেশ ক’জন। সবাই যার যার মতোন থাকে। সে কোনোদিন বিয়ে করেনি, সংসার করেনি, একা একা থাকে, তবে তার একটি পালিত পুত্র আছে। এখন ৩৫ বছর বয়স। পুত্র নিয়মিত পিতার খোঁজখবর রাখে। এ-দেশে ব্যক্তিগত প্রশ্ন কেউ কাউকে করে না। আমি অনুমতি নিয়ে হ্যারল্ড-এর কাছে যখন জানতে চাইলাম, সে কেন বিয়ে করল না; তখন হ্যারল্ড একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল, তার চোখেমুখে একটি দুর্বোধ্য মিশ্র প্রতিক্রিয়া ও অনুভূতি বিদ্যুতের মতোন ঝিলিক মেরে উঠলো! বুঝতে পারলাম না, সেটা সুখের না দুঃখের। আধামিনিট নীরবতার পর সে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল, ‘সে অনেক কথা, আমার মনের কথা শোনার যদি তোমার সময় হয়, ধৈর্য থাকে, তবে হবে আরেক দিন, কিন্তু সে গল্প একদিনে শেষ হবে না।’


This is an original content which is written by a DORPON author. Copying and publishing any part of the content is strictly prohibited.

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu