মনজুরুল ইসলাম
১৯৮১ সালে কুড়িগ্রাম জেলার পাঁচগাছী ইউনিয়নের কদমতলা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। পেশা শিক্ষকতা। শিক্ষাবিষয়ক প্রবন্ধ লেখক, গল্পকার এবং অনুবাদক। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: শ্রেষ্ঠ মানুষ (প্রবন্ধগ্রন্থ), কাঠের শহর (গল্পগ্রন্থ)
মনজুরুল ইসলাম

পরীক্ষার প্রহরে

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

লেখক সম্পর্কে: হেনরি স্লেসার (১৯২৭-২০০২) মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের একজন বিখ্যাত কথাসাহিত্যিক। তিনি তাঁর লেখনীতে ব্যাঙ্গাত্মক ভঙ্গির সংযোজন এবং জটিল সমাপ্তির সার্থকপ্রয়োগের জন্য সুপরিচিত। তাঁর গল্পগুলি অত্যন্ত সাবলীলভাবে সৃজিত বিধায় বিষয়বস্তুর গভীরতা জটিল হলেও সহজেই বোধগম্য। অনূদিত গল্পটি তাঁর মূল গল্প  ‘‘Examination Day’’ থেকে নেয়া হয়েছে। গল্পটি ফেব্রুয়ারি, ১৯৫৮ খ্রিস্টাব্দে রচিত হয়েছিল যার প্রকৃত নাম ছিল “Play Boy”। কোমলমতি শিক্ষার্থীদের পড়াশুনার ওপর মাত্রাতিরিক্ত চাপ এবং পরীক্ষা প্রথার ওপর বিবেকবর্জিত গুরুত্বারোপ করলে তার নেতিবাচক প্রতিফলন যে কতটা ভয়ংকর রূপ পরিগ্রহ করতে পারে তারই একটি সাবলীল চিত্র ফুটে উঠেছে গল্পটিতে।


ডিকি, বারো বছরের ছোট্ট বালক। এই বয়সে পৌঁছানোর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত একদিনও জর্ডান দম্পতি তাকে পরীক্ষার কথা বলেন নি। সেদিন তার জন্মদিন। এবং সেদিনই প্রথম মিসেস জর্ডান তাকে বিষয়টি বললেন। বিষয়টা বলবার সময় বেশ উদ্বিগ্ন দেখাচ্ছিল তাকে।

‘‘বিষয়টি ভুলে যাও, ও পরীক্ষায় ভালো করবে।’’, তার এই উদ্বিগ্ন ভাবখানি প্রত্যক্ষ করে মি. জর্ডান শান্তভাবে উত্তর দিলেন।

নাস্তার টেবিলটি পাশেই। বালকটি খুবই কৌতূহল নিয়ে প্লেটটি দেখছিল। তার দৃষ্টি তীক্ষ্ণতায় ভরপুর, চুলগুলি পরিপাটি এবং ভাবখানি অস্থির ও বিচলিত। সে বুঝতে পারছিল না বিষয়টি, হঠাৎ এত উদ্বিগ্নতার কারণ কী? সে শুধুই জানতো যে, সেদিন তার জন্মদিন। তাদের ছোট্ট কামরার কোনো এক জায়গায় জমকালোভাবে মোড়ানো একটি প্যাকেট উন্মুক্ত হবার জন্য অপেক্ষা করছিল। এবং ক্ষুদ্র রান্নাঘরের দেয়ালে স্বয়ংক্রিয় চুলোয় কিছু গরম হবার পাশাপাশি মিষ্টি তৈরী হচ্ছিল। ডিকি তার আরাধ্য দিবসটিকে আনন্দে মাতিয়ে রাখতে চায়। কিন্তু তার মায়ের ছল ছল করা চোখ এবং বাবার গোমড়া মুখটি সকাল বেলায় পাখির ডানা মেলে উড়ে বেড়াবার পরিকল্পনাকে পুরোপুরি ধূলোয় মিশিয়ে দিলো।

‘‘কিসের পরীক্ষা?’’, সে জানতে চাইলো।

টেবিল ক্লথের দিকে নিরস তাকিয়ে আছেন ডিকির মা।

‘‘এটি শুধু একটি সরকারি বুদ্ধিমত্তার পরীক্ষা। বারো বছরের প্রত্যেক শিশুকেই অংশগ্রহণ করতে হয়। সামনের সপ্তাহে তোমাকেও অংশগ্রহণ করতে হবে। এটি নিয়ে চিন্তার কিছু নেই।’’

‘‘তার মানে, স্কুলে যেমন পরীক্ষা হয় তেমন নাকি?’’

‘‘তেমনই আর কী! এখন টেবিল ছেড়ে উঠো এবং রুমে গিয়ে মজার মজার বই পড়ো।’’ ডিকিকে বললেন বাবা।

ডিকি উঠলো। অসংলগ্ন চিন্তা নিয়ে ঘুরতে থাকলো কক্ষের চারিদিক। শৈশব থেকেই এই কক্ষটিতে অবস্থান করে ও। এবার বুক সেলফে গাদাগাদি করে রাখা সবচেয়ে মজার বইটি স্পর্শ করলো। কিন্তু অল্প সময়ের মাঝেই বোধ করলো তীব্র অস্বস্তি। বই রেখে জানালার কাছে গেল। এবং পায়চারি করতে থাকলো। কুয়াশার আবরণে আচ্ছাদিত পুরু গ্লাসটি তার দৃষ্টির সীমায় এলো।

‘‘বৃষ্টি কি আজকেই হতে হয়? কালকেও তো হতে পারতো?’’, আক্ষেপের অনুরণনটি ছড়িয়ে পড়লো ওর মনজুড়ে।

সরকারি পত্রিকা হাতে চেয়ারে বসে আছেন ডিকির বাবা। মুখের মলিন ভাবটি স্পষ্ট। পত্রিকার কাগজের খসখস শব্দ বিরক্তির উদ্রেক ঘটাচ্ছে।

‘‘কারণ, এমনই হয়। এবং এটিই ঠিক। বৃষ্টি ঘাসের ডালপালা বৃদ্ধি করে।’’

‘‘কেন আব্বু?’’

‘‘কারণ, এটি ঘটে, এটিই নিয়ম।’’

ডিকি তার ভ্রু-কুচকালো।

‘‘কী এটাকে সবুজ করে তোলে আব্বু, ঘাস?’’

‘‘কেউ জানে না।’’ ফট করে তার বাবা ভেঙে পড়লেন। তারপর তার এমন আকস্মিকভাবের জন্য অনুতপ্ত হলেন।

তার পরের দিন। তখনও জন্মদিনের সময় ফুরোয় নি। তার মা মুখে আলোর রশ্মি নিয়ে প্যাকেটটি পুত্রকে দিল। তার বাবা ভাজ করা চুলে কৃত্রিম হাসি ফুটাবার চেষ্টা করলো। ডিকি তার মাকে চুমু দিল এবং বাবার সাথে এমনভাবে হাত মিলালো যেন এটিই তার সাথে শেষ করমর্দন। তারপর জন্মদিনের কেকটি বাইরে এনে কাটবার মধ্যে দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘটলো।

এর এক ঘণ্টা পর জানালার পাশে বসে ডিকি দেখলো সূর্য প্রবল বেগে মেঘের মাঝখানে পথ খুঁজে নেবার চেষ্টা করছে।

‘‘এখান থেকে সূর্য কত দূরে থাকে, আব্বু?’’, সে প্রশ্ন করলো।

‘‘পাঁচ হাজার মাইল দূরে।’’, বাবা বললেন।

নাস্তার টেবিলে বসলো ডিকি। এবং পুনরায় মায়ের ছলছল করে ওঠা চোখদুটি দেখতে পেল। তার বাবা পরীক্ষার প্রসঙ্গটি না টানলে হয়ত তাকে এমন অবস্থার মুখোমুখি হতে হতো না।

‘‘বেশ, ডিকি।’’,তিনি পুরুষোচিত সাহস নিয়ে বললেন, ‘‘তোমার আজ পরীক্ষা।’’

‘‘আমি জানি, আব্বু। আমি আশাবাদী।’’

‘‘এখনকার দিনে এটি কোনো দুশ্চিন্তার বিষয়ই নয়। প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষার্থী পরীক্ষা দিচ্ছে। সরকার শুধু এতটুকুই জানতে চায় কতটা বুদ্ধিমান তুমি। শুধু এতটুকুই। এর বেশী কিছু না।’’

‘‘আমি স্কুলে ভালো নম্বর পেয়েছি।’’, ইতস্তত ভাব নিয়ে সে বললো।

‘‘এটি ব্যতিক্রম। এটি বিশেষ এক ধরনের মূল্যায়ন। তারা তোমাকে পান করার জন্য কিছু একটা দেবে, তুমি দেখবে এবং তার পর একটি কক্ষে প্রবেশ করবে যেখানে এক ধরনের যন্ত্র আছে।’’

‘‘কী পান করতে হবে, আব্বু।’’, ডিকি জিজ্ঞেস করলো।

‘‘তেমন কিছু না। ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত পদার্থের মতো কিছু একটা।’’

‘‘তুমি যে সত্যি সত্যি প্রশ্নের উত্তর দিবে সেটিই নিশ্চিত করবার জন্য। তার মানে এই নয় যে, তুমি সত্য বলা থেকে বিরত থাকবে। কিন্তু এই উপাদানটি সে বিষয়টিকে নিশ্চিত করবে।’’, ডিকির মুখাবয়বে বুদ্ধিহীনতার ছাপ ফুটে উঠলো। এবং তাতে ভীতির অপচ্ছায়া দেখা গেল। সে তার মায়ের দিকে তাকালো এবং তার মা মুখখানিতে আবছা হাসি ফুটিয়ে তুললেন।

‘‘সব ঠিক হয়ে যাবে, আব্বু।’’, তিনি আশ্বাস দিলেন।

‘‘অবশ্যই, তাই হবে।’’, তার বাবা সম্মত হলেন। ‘‘তুমি খুব ভালো ছেলে ডিকি, তুমি খুবই ভালো করবে। তারপর আমরা বাসায় যাবো এবং অনেক মজা করবো, ঠিক আছে।’’

‘‘ঠিক আছে আব্বু।’’, ডিকি উত্তর দিলো।

এরপর তারা সরকারি শিক্ষাভবনের দিকে গেল। এবং প্রবেশ করলো নির্ধারিত সময়ের পনের মিনিট পূর্বে। মার্বেল পাথরের বিশাল বিশাল সিঁড়িটিও অতিক্রম করে ফেললো। অতঃপর তোরণ পথের অভ্যন্তর অতিক্রম করে স্বয়ংক্রিয় লিফটে প্রবেশ করলো। লিফটে করে পঞ্চম তলায় এলো। সেখানে কটিদেশে বেলসহ হাঁটু পর্যন্ত পদবীযুক্ত হাতাবিহীন পোশাকে একজন তরুণ ৪০৪ নম্বর কক্ষের সামনে একটি মসৃণ ডেস্কে বসে ছিলো। তার হাতে একটি ক্লিপবোর্ড ছিল এবং সে লিস্টের নিচের অংশটি পর্যবেক্ষণ করার পর তাদের ভেতরে প্রবেশ করতে দিলো।

কক্ষটি এত ঠাণ্ডা এবং আনুষ্ঠানিক ছিল যা কিনা দেখতে একদম আদালত কক্ষের মতো। যেখানে লম্বা লম্বা বেঞ্চ এবং ধাতব পাতযুক্ত টেবিল ছিল। ইতোমধ্যে সেখানে কয়েকজন অভিভাবক তাদের সন্তানসহ বসে ছিলেন। এবং একজন সরু ঠোঁট ও গোছানো কালো চুলো মহিলা কাগজের সিট নিয়ে বের হচ্ছিলেন। মি. জর্ডান ফরমটি পূরণ করলেন। এবং ফেরত দিলেন কেরানিকে।

এরপর তিনি ডিকিকে বললেন, ‘‘এখন আর বেশি সময় লাগবে না আব্বু। যখন তারা তোমাকে ডাকবে তুমি শুধু দরজা দিয়ে কক্ষের শেষ প্রান্তে যাবে।’’  তিনি তার আঙুল দিয়ে প্রবেশ দ্বারটি দেখিয়ে দিলেন।

নিঃশব্দ থাকা স্বরবর্ধক যন্ত্রটি ককর্শ স্বরে বেজে উঠলো। উচ্চারিত হলো প্রথম নামটি। ডিকি দেখলো একটি বালক বিতৃষ্ণা নিয়ে তার বাবার পাশ থেকে চলে গেলো এবং ধীরে ধীরে দরজার দিকে হাঁটতে থাকলো।

যখন এগারোটা বেজে পাঁচ মিনিট তখনই তারা জর্ডানের নামটি উচ্চারণ করলো।

‘‘শুভ কামনা, আব্বু। পরীক্ষা শেষ হলেই আমি তোমাকে ডেকে নিবো।’’, তার দিকে না তাকিয়েই বললেন।

ডিকি দরজার কাছে গেলো এবং হাতলটি ঘুরালো। কক্ষের অভ্যন্তর ভারী অস্বচ্ছ ও আবছা। এবং যিনি তাকে ডাকলেন তার একটি প্রতিচ্ছবি তৈরী করা গেল মাত্র।

‘‘বসো।’’, মৃদুস্বরে বললেন লোকটি। তিনি তার ডেস্কের পাশে বসার একটি উঁচুটুল দেখিয়ে দিলেন। ‘‘তোমার নাম কি রিচার্ড জর্ডান?’’

‘‘জ্বি স্যার।’’

‘‘তোমার বিন্যাসিত নম্বর ৬০০-১১৫, তাই না। এটা পান করে ফেলো, রিচার্ড।’’

তিনি ডেস্ক থেকে প্লাস্টিকের একটি পেয়ালা উঠালেন এবং বালকটিকে দিলেন। কক্ষের অভ্যন্তরে যে তরল পদার্থ রয়েছে তার সাথে দেয়া ঘোলের সামঞ্জস্য রয়েছে বলে মনো হলো যার স্বাদ অসার ও ঝাঁঝালো গন্ধযুক্ত। ডিকি এটি নিচের দিকে নামালো এবং লোকটির কাছে শূন্য পেয়ালাটি দিলো। সে নিশ্চুপ হয়ে বসে রইলো। অনুভব করলো তন্দ্রার ভাব। যেখানে লোকটি কাগজের সিটে অত্যন্ত দ্রুত লিখে চলেছেন। তারপর পরিচারক তার ঘড়ির দিকে তাকালেন এবং ডিকির মুখ থেকে সরে দাঁড়ালেন এক ইঞ্চি দূরে। তিনি তার কটিদেশে বেলসহ হাঁটু পর্যন্ত পদবীযুক্ত হাতাবিহীন পোশাকের পকেট থেকে কলমসৃদশ একটা কিছু বের করলেন এবং বালকটির চোখে এক ঝলক আলোর স্ফুরণ ফেললেন।

‘‘ঠিক আছে, এখন আমার সাথে চলো রিচার্ড।’’, লোকটি বললেন। তিনি ডিকিকে কক্ষের শেষপ্রান্তে নিয়ে গেলেন যেখানে একটি একক কাঠের হাতলযুক্ত চেয়ারের সামনেই বহুমাত্রিক গণন যন্ত্র রয়েছে। চেয়ারের বাম পাশের বাহুতে ছিল একটি স্বরযন্ত্র । এবং যখন বালকটি বসলো তখন তার মুখের সুবিধাজনক অবস্থানে এটি অনুভব করলো।

“এখন একদম হালকা হও রিচার্ড। তোমাকে কিছু প্রশ্ন করা হবে এবং তুমি যত্ন সহকারে সেগুলো চিন্তা করবে। তারপর স্বরযন্ত্রের মাধ্যমে উত্তর প্রদান করবে। অন্যান্য বিষয়ের প্রতি যন্ত্রটি লক্ষ রাখবে।”

“ঠিক আছে স্যার।”

আমি এখন তোমাকে একা রেখে কক্ষ থেকে বের হবো। যখনই তুমি শুরু করবে শুধু স্বরযন্ত্রে ‘শুরু’ বলবে।

লোকটি তার কাঁধে হাত রাখলেন এবং চলে গেলেন।

“শুরু”, ডিকি বললো।

যন্ত্রের উপর আলো এসে পড়লো। এবং স্বয়ংক্রিয়ভাবে যন্ত্রটি ঘুরতে থাকলো। একটি কণ্ঠ বললো

‘‘এই পর্ব শেষ। এক, চার, সাত, দশ—————।’’

মি. এবং মিসেস জর্ডান বাসাতেই ছিলেন। কথা বলছিলেন না, এমনকি কোনো চিন্তাও করছিলেন না, একদম নিশ্চুপ।

এখন সময় প্রায় চারটা। টেলিফোন বেজে উঠলো। ভদ্রমহিলা ধরবার চেষ্টা করলেন, কিন্তু জর্ডান আগেই ধরে ফেললেন।

‘‘মি. জর্ডান?’’

কণ্ঠস্বরটি আঁটকে গেল। চটপটে। পদস্থ আমলার কণ্ঠ।

‘‘জি, বলছি।’’

‘‘সরকারি শিক্ষা সহায়তা অফিস থেকে বলছি। আপনার পুত্র রিচার্ড যার বিন্যাসিত নম্বর ৬০০-১১৫, সরকারি পরীক্ষা শেষ করেছে। আমরা অত্যন্ত দুঃখের সাথে জানাচ্ছি যে, তার বুদ্ধিমত্তার স্তর নতুন কোডের সূত্র ৮৪, বিভাগ ০৫ অনুযায়ী সরকারি নিয়মকে অতিক্রম করেছে।’’

এবার মিসেস জর্ডান তার স্বামীর বিষন্ন মুখখানি পাঠ করেই চিৎকার করে কাঁদতে থাকলো।

“আপনি টেলিফোনে আলাপ করে নিতে পারেন যে, আপনার ছেলের মৃতদেহ সরকারিভাবে দাফন করবেন নাকি কোনো ব্যক্তিগত সমাধি স্থলে? সরকারিভাবে দাফন করলে খরচ পড়বে দশ ডলার।”, এটা বলার পরই টেলিফোনের অপর প্রান্ত থেকে পিং পিং শব্দ ভেসে আসতে থাকলো।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu