আনিফ রুবেদ
জন্ম ২৫ ডিসেম্বর, ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দ, চামাগ্রাম, বারঘরিয়া, চাঁপাইনবাবগঞ্জ। উল্লেখযোগ্য গ্রন্থ: জীবগণিত (২০২০), মন ও শরীরের গন্ধ (২০১৪), দৃশ্যবিদ্ধ নরনারীগান (২০১৭), এসো মহাকালের মাদুরে শুয়ে পড়ি (২০১৫)।
আনিফ রুবেদ

দুর্ঘটনা

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

দেলদ্বারভাঙ্গা স্টেশনে পৌঁছে গিয়ে সোনার ঘড়িতে সময় দেখে নীরব। আরো তেরো মিনিট সময় আছে ট্রেনটি ছেড়ে দিতে। সংক্ষিপ্ত সময়ের মধ্যে একটা সিগারেট জ্বালায় এবং খুব সংক্ষিপ্ত সময়ে শেষ করে সিগারেটটি। ছ’মিনিটেরও কম সময়ে সিগারেটটি শেষ হয় এবং ট্রেনে ওঠার পর প্রচুর মানুষের মধ্যে সে একটি মানুষ হয় এবং বসার কোনো জায়গা নাই। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে যাত্রা। সোনার ঘড়িতে সে সময় দেখে— আর দু’মিনিট পর ঘণ্টা বাজবে। প্যান্টের পকেটে ঘড়িসমেত হাত ঢুকিয়ে সে পাশের লোকটিকে জিজ্ঞাসা করে, ‘আর কতক্ষণ পর ট্রেন ছাড়বে?’ লোকটি রাবারের ঘড়ি থেকে সময় বের করে এবং বলে, ‘তিন মিনিটের মধ্যে ট্রেন ছাড়বে।’ নীরব লোকটিকে আড়াল করে আবার ঘড়িসমেত হাত বের করে এবং বিষণ্ণভাবে হাত ঢুকায়। সাড়ে তিন মিনিট পরে ঘণ্টা পড়ে এবং ট্রেনটি চলার জন্য চেতনা লাভ করে। হঠাৎ ঘুম থেকে জাগা পাখির মতো ট্রেনটি এদিক ওদিক যেন একটু দেখে নিল এবং চলতে শুরু করল। তার ঘড়ি, লোকটির ঘড়ি আর ট্রেনওয়ালাদের ঘড়ির মধ্যে মিল নেই। কারো ঘড়ির সাথে কারো ঘড়ির মিল নেই। কিছুক্ষণের মধ্যে বাতাস ভাঙ্গা শব্দ শোনা গেল। বাতাস ভেঙ্গে গুঁড়ো গুঁড়ো করে গোঁয়ারের মতো ছুটে চলছে ট্রেন।

আজ রোববার একথা তার স্মরণ আছে এবং দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সে সোনার ঘড়িতে কত বাজছে তা না দেখেই আন্দাজ করার চেষ্টা করে। চার পুরুষ আগের এই সোনার ঘড়িতে চড়ে প্রচুর সময় পার হয়েছে, কিন্তু ঘড়িটা চার পুরুষ আগের ধান আর ধন সম্পদ বয়ে আনতে পারেনি। চার পুরুষ পার করার পূর্বেই ওগুলো প্রায় ‘নাই’ হয়ে গেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার খরচ টিউশনি যোগায়। ট্রেন চলছে।

ব্রেন চলছে নীরবের। নীরব খেয়াল করে দেখে কয়েকটি স্টেশন পার হবার পর কম্পার্টমেন্টটি বেশ ফাঁকা হয়ে গেছে এবং ইচ্ছে করলে সে বসতে পারে। ইচ্ছে করে। কিন্তু বসে না। আবার এখন তার গর্ব চাঁড়া দিয়ে ওঠে, সোনার ঘড়ি আর শান্তর জন্য। সোনার ঘড়ি এবং শান্তর মতো বন্ধু থাকলে পৃথিবীতে আর কিছু লাগে না। এবার নীরব রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। এবং দাঁড়িয়ে থাকতে থাকতে ক্লান্তি ধরে গেলেও সে বসে না, যাতে শান্তর ভাবনায় বিন্দুমাত্র ছেদ না পড়ে। খুব চমৎকার করে কথা বলে শান্ত। নীরব মুগ্ধ হয়ে শোনে, প্রাণ বাজি রেখে সমস্ত সময় ঢেলে দেয় শান্তর পায়ের কাছে। জীবনকে ভালো বলে মনে হয় তার।

শান্তর যেদিন প্রেমিকা হলো সেদিন নীরবের মন খারাপ হলো। কারণ সে ভাবতে পারছিল, ‘শান্ত এবং নীরবের মধ্যে ভাল সম্পর্কটা থেকে শান্ত গড়িয়ে যাবে প্রেমিকার দিকে।’ তা, সেটা হলো এবং সে ব্যথা পেল নীরবে। বেশিরভাগ সময় সে প্রেমিকার সাথে দেয়। নীরবের সাথে যে কথাগুলো হয় সেসব কথার গায়ে লেগে থাকে প্রেমিকাপ্রসঙ্গ। নীরবের বুক পুড়ে যেত, বুকের ভেতর বিকট ব্যথা কাঁটার মত সবসময় বিঁধে থাকত। তবে, শান্তর চেষ্টায় একদিন প্রেমিকাদেবীর সাথে দেখা হলো নীরবের। সে মানিয়েও নিল‒ হ্যাঁ ঠিক আছে, আমরা পৃথিবীতে তিন মানুষ থাকলাম এক প্রাণে। দাম্পত্য হতে পারে, ত্রাম্পত্য কি হতে পারে না।

চমৎকার সময় কাটছে এখনো এই ভাবনা আসার পর। প্রেমিকাটি চমৎকার। এসব ভাবতেই আছে নীরব। নীরবের বসতে ইচ্ছে করে না। সে বসল জানালার দিকের একটা সিটে যেদিকে ট্রেনের গতি তার দিকে পিছন ফিরে। ট্রেন চলছে।

ব্রেন চলছে নীরবের। বিশ্ববিদ্যালয় ছুটি হলে শান্ত ফিরে গেছে গ্রামে, গতকাল। একদিন পরে নীরব পরিবারে ফিরে না গিয়ে শান্তকে সারপ্রাইজ দিতে যাচ্ছে শান্ত’র গ্রামে। সে চমৎকার ভালবাসা অনুভব করলো শান্ত’র জন্য। ‘শান্তও তার প্রতি ভালবাসা অনুভব করে’ ভেবে আনন্দবোধ করল। শান্ত নীরবের সোনার ঘড়িটা খুব পছন্দ করে। শান্ত মাঝে মাঝেই বলে, ‘নীরব তোর ঘড়িটা চমৎকার!’ শান্তর বাড়ি থেকে ফেরার সময় ঘড়িটা তাকে দিয়ে ফিরে আসবে, মনে মনে ভাবল নীরব।

দুটো ট্রেন যখন মুখোমুখি হলো তখন কিছুলোক মারা গেল। নীরব সিট থেকে ছিটকে পড়ল এবং উঠে দাঁড়াল শান্তভাবে। চিৎকার চেঁচামেচির মধ্যেও সে ভালবোধ করল। সে কিছুক্ষণ ঘুরে ঘুরে আর্তদের দেখল, কাউকে কাউকে সাহায্য করল বেঁচে ওঠার জন্য। কেউ কেউ বেঁচে উঠল না। কেউ কেউ বেঁচে ওঠার সময়ই পায়নি। কেউ কেউ বেঁচে ওঠার সময় পেল এবং পুলিশের বা স্থানীয়দের সাহায্যে হাসপাতালের দিকে গেল। সে নিজের অবস্থাটা বুঝে নেবার চেষ্টা করল। তার কিছু হয়নি, শুধু বুকে একটু ব্যথা করছে। শক্ত কোনো কিছুর সাথে ধাক্কা লেগেছে মনে হয়। সকাল হলে রেলকর্মীরা আসে। লাইনটা ক্লিয়ার করতে কী কী করতে হবে সেটা বোঝার জন্য তারা দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে। দাঁড়িয়ে দেখা শেষ হলে, দুর্ঘটনা কবলিত ট্রেন দুটো অনেকক্ষণ ধরে ঘুরে ঘুরে দেখে। ঘুরে দেখা শেষ হলে, আবার দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে, কথা বলে। কথা বলা শেষ হলে আবার ট্রেন দুটি ঘুরে ঘুরে দেখে। আবার দাঁড়ায়। দুর্ঘটনা স্থলে নিহত বা আহত কোনো মানুষ আর নেই। শুধু একজায়গাতে রেললাইনের ঠিক মাঝখানে একটা পা রেললাইনেই সমান্তরালে পড়ে আছে। কার যে পা, সে বেঁচে আছে কি নাই কে জানে। তার বুক ফুঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বের হয়ে আসে। আরো কিছুক্ষণ এগুলো নীরব দেখে। কিছু পরে সে শুনতে পেল দেলভাঙ্গা স্টেশন বেশিদূর নয়‒ কিলো দেড়েক মাত্র, সেখান থেকে আবার ট্রেন পাওয়া যাবে। ট্রেনে চেপে আবার যাত্রা শুরু হলে সোনার ঘড়ি বের করে দেখে দুপুর পার হয়ে গেছে নির্দিষ্ট স্টেশনে নামতে। ট্রেন থেকে নেমে হাঁটা পথ। হাঁটতে হবে সোনালি ঘড়ির প্রায় দু’ঘন্টা এবং রাবারের ঘড়ির দু’ঘণ্টারও বেশি।

ছোট ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে সে হাঁটছে বেশ খুশি মনে এবং রোমাঞ্চিত হচ্ছে, কঘণ্টা পরেই শান্তর চমকিত চোখ আর অভিব্যক্তি দেখতে পাবে বলে। প্রচণ্ড রোদ। দুপাশে আখের ক্ষেত ছাড়া তেমন কোনো গাছ নেই দুএকটা বাবলা গাছ ছাড়া। প্রচুর ক্লান্তি জমা হচ্ছে তার জুতার ভেতর আর পিঠের ব্যাগের ভেতর। মন বা শরীরে সে ক্লান্তি অনুভব করতে দিতে চাচ্ছে না। হাঁটছে তো হাঁটছেই। অহেতুক ধরনের তীক্ষ্ণ রোদ পোশাক ফুটো করে গরম তেলের মত ঢুকছে আর ঘাম হয়ে বেরিয়ে আসছে। আখের ক্ষেত পার হলে পা দুটো গোঁয়ার হয়ে ওঠে কোরবানির খাসি-বকরির মতো। সে মনে মনে বলল, ‘আমি কোরবানি করা দেখেছি। গলায় দড়ি বাঁধা গরু ছাগল। দড়ি ধরে টেনে ছুরির কাছে নিয়ে আসার সময় সামনের দুটি পা মাটিতে গেঁথে দিয়ে স্থির হয়ে যায় সমগ্র শক্তি দিয়ে, যতই টান দিক না কেন মানুষ, সে নড়ে না, মাটি খুবলে যায়, পা দেবে যায়। কিন্তু কোরবানি আটকায় না। ছুরি চলে।’ তার পা দুটিকে কোরবানির পশু ভাবার জন্য সে তৈরি হয়ে গেল। ‘আর খুব বেশিদূর নয় সামান্য গেলে একটা ফাঁকা মাঠ, ফাঁকা মাঠ পার হলে কয়েক মাইল মাত্র’ নীরব গরুগাড়িওয়ালার কাছে এই বর্ণনা পাবার পর আবার হাঁটতে থাকে এবং ফাঁকা মাঠটির ওমাথা দেখতে না পেয়ে ভাবে‒ এ মাঠ কোনোদিন পার হওয়া যাবে কি?

পায়ে ফোস্কা পড়ে হাঁটতে কষ্ট হচ্ছে। জুতো খুলে সে হাতে ধরে এবং এই মাঠের প্রচণ্ড রোদের ভেতরে একটা ছায়াবৃক্ষ কল্পনা করে। কল্পনার এ ছায়াবৃক্ষ মুহূর্তেই পুড়ে ছাই হয়ে যাচ্ছে। মাথার উপর গনগনে আগুন সূর্য। রোদের সমুদ্রে সে পড়ে গেছে। প্রচণ্ড তেষ্টাও পেয়েছে তার। এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে কোথাও পানি আছে কিনা। আরো কিছুদূর যাবার পর একটা বড় ডোবার মত দেখতে পায়। নোংরা শ্যাওলা-পানা-কাদা ভর্তি। শ্যাওলা পানা সরিয়ে সে পান করে। বুকের ভেতর একটু ঠাণ্ডা হয়। হাঁটতে থাকে। নিজের ছায়ার উপর পা দিয়ে হাঁটছে, ব্যাপারটা খেয়াল করে। কিছুদূর হাঁটার পর সে ছোট একটা গাছ দেখতে পায়। ছোট গাছটার গোড়া ঘেঁষে কপালের টিপের মত একটুকরো ছায়া অবহেলায় পড়ে আছে। মৃত ছায়া অথবা ছায়াটি নিজেই প্রচণ্ড রোদে পুড়ে ভুগছে। তবুও ঐ গাছটির কাছে পৌঁছতে পারলে একটু ভাল লাগবে ভেবে একটু জোরে হাঁটা দেয় এবং পা দুটো টনটন করে ওঠে। বুকের ব্যথাটা সে আবার অনুভব করে। ব্যথাটা বাড়ে। হঠাৎ করেই বুক আর বুকের ব্যথা তার সাথে দুর্ব্যবহার শুরু করে দিয়েছে। যে হাতে সোনার ঘড়ি আছে সে হাত দিয়ে বুকটা চেপে ধরে এবং গাছটির কাছে গিয়ে পৌঁছায়। গাছের ছায়াটাকে শান্ত মনে করে। ছায়াটির মুমূর্ষু শরীরের উপরেই সে ধপ করে বসে পড়ে। পা দুটো কুকুরের মতো হাঁপাতে থাকে। বুকটার ব্যথা দুগুণ তিনগুণ করে বাড়ে। একসময় সে দাঁড়িয়ে গিয়ে গাছটির সাথে বুক চেপে ধরে আরাম পেতে চায়। ব্যথায় তার চোখ দিয়ে পানি বের হয়। একসময় দাঁড়ানো অবস্থা থেকে ধপ করে পড়ে যায়, ছায়া যেদিকে তার বিপরীত দিকে। তার গায়ের সাথে ছায়ার কোনো স্পর্শ থাকে না। সে ছায়ার কাছে যেতে পারে না। সে তার জ্বলে ওঠা প্রাণ ঠাণ্ডা করার জন্য ছায়ার কাছে যাবার চেষ্টা করে। ছায়াটুকু পান করার জন্য তার প্রবল তৃষ্ণা জেগে ওঠে। ছায়ার কাছে যেতে না পেরে ছায়াটাকে নাক দিয়ে নিজের ভেতরে টেনে নেবার জন্য জোর করে শ্বাস নেয়। বাতাসও বিপরীত শক্তি প্রয়োগ করে তার ভেতরে প্রবেশ না করার জন্য। ‘রোদে বাতাস পুড়ে গেছে, বুকের ব্যথার তাপে বাতাস পুড়ে গেছে’ সে চোখ বন্ধ করার সময় ফিসফিস করে উচ্চারণ করে।

একদিন পর মানুষেরা মানুষের পচা গন্ধ পেয়ে সেখানে আসে এবং আরো একদিন পর পুলিশ আসে। দূর দূরান্ত থেকে মানুষেরা আসে একটি লাশ দেখতে। দুর্গন্ধের কারণে নাক চেপে ধরে দূর থেকে মানুষ দেখে মৃত মানুষ। গন্ধে কাছে কেউ যেতে পারে না। দুএকজন যাবার চেষ্টা করেছে কিন্তু পারেনি। কারণ, নাক চেপে কাছে গেলেও কান দিয়ে, চোখ দিয়ে, সারা শরীর দিয়ে যেন মৃত মানুষের গন্ধ ঢুকে যায়। লাশটাকে কেউ চিনতে পারে না। পুলিশ এসে কেরোসিন ছিটিয়ে দিলে মানুষেরা অনেকটা স্বস্তি পায় এবং লাশের কাছে গিয়ে গাঁয়ের লোকে দেখে অপরিচিত মানুষের লাশ। পুলিশ সকলকে জিজ্ঞাসা করে‒ কেউ চেনে কি না? কেউই বলে না‒ চিনি। পুলিশ অফিসার বিরক্ত হয়ে বিড় বিড় করে, ‘মরার লোকগুলো কোথায় যে জন্মে, জন্মার পর কোথায় যে মরতে আসে!’

শান্তও এসেছিল দেখতে। নাক চেপে আছে সেও, কারণ, মানুষের গন্ধ এবং কেরোসিনের গন্ধ, দুটো গন্ধই তার কাছে খারাপ লাগে। শান্ত সোনার ঘড়িটার দিকে তাকায় এবং চিনতে পারে নীরবকে। ‘আমি তাকে চিনি’ বলতে যাবার আগে মনে মনে বলল, ‘যদি পুলিশি কোনো ঝামেলায় পড়তে হয়।’ এটা মনে হবার সাথে সাথে বুকের কাছে এবং দুচোখে খোঁচা অনুভব করে। সোনার ঘড়ি থেকে কাঁটাগুলো হঠাৎ বিশাল বড় আর শক্ত হয়ে তার বুকে এবং চোখে খোঁচা দিয়েছে। সে চিৎকার দিয়ে চোখ আর বুক চেপে ধরে পড়ে যায়। তাকে পুলিশেরা ধরাধরি করে ওঠায় এবং জিজ্ঞেস করে, সে তাকে চিনে কিনা। শান্ত সোনার ঘড়িটার দিকে তাকায় এবং বলে, ‘আমি তাকে চিনি না।’ এটা বলার সাথে সাথে আবার উল্টে পড়ে। কারণ, নীরব তখন উঠে দাঁড়িয়ে সোনার ঘড়িটা খুলে শান্তর হাতে পরিয়ে দেয় এবং পুলিশের লাশটানা ভ্যানে গিয়ে শুয়ে পড়ে। অনেক মানুষের ভীড় ঠেলে পুলিশেরা নীরবের লাশ নিয়ে চলে যায়।

দেখতে আসা লোকদের মধ্যে মায়ের কোলে থাকা একটা শিশুর নাকের উপর একটা ভীমরুল বসতে চাইলে সে চিৎকার দিয়ে কেঁদে ওঠে এবং শিশুটির মা তার ছেলেকে আঁকড়ে ধরে বুকের সাথে। ভীমরুল চলে গেলে, স্ত্রীলোকটি তার সন্তানের দিকে তাকায় আর ভাবে শিশুটিকে জন্ম না দিলে আজ এই শিশুটিকে ভীমরুলের ভয় পেতে হতো না। যে ছেলেটির লাশ পুলিশের ভ্যানে চড়ে গেল, সেই ছেলেটির বাবা মা তাকে জন্ম না দিলে এত দুঃখ ভোগ করতে হতো না। মেয়েটি কান্না চেপে রাখতে পারল না।

দেখতে আসা মানুষের মধ্যে একজন সুন্দরী তরুণী ছিল। সুন্দরী তরুণীটি মনে মনে বলল, ‘লোকটি কিন্তু দেখতে দারুণ। লোকটি বেঁচে থাকলে তাকে প্রেমের ব্যাপারে বলা যেত। কিন্তু কি আর করা, মৃত মানুষ প্রেমিক হতে পারে না।’ সে বিষণ্ণ হেসে হাঁটা ধরে তার বাড়ির দিকে।

দেখতে আসা লোকদের একজন শান্ত। শান্ত সোনার ঘড়ি হাতে দিয়ে বাড়ির দিকে শান্ত মেজাজে হেঁটে চলে গেল, আর মনে মনে তসবি চলছে, ‘যাক, বাঁচা গেল অযথা পুলিশের হাঙ্গামা থেকে।’ এরপর সে মরা নীরবের মুখের দিকে মুগ্ধ হয়ে থাকা রূপবতীর দিকে তাকিয়ে ভাবল, ‘আমার প্রেমিকার চেয়ে এই মেয়েটি বেশি সুন্দরী, বিকেলের দিকে এসে খোঁজ নিতে হবে মেয়েটি কে?’


 

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu