কাম শেষে পাপিয়া আক্তার কথামতো তার হিসেব বুঝিয়ে নিয়েছিল এবং সরঞ্জাম গোছাচ্ছিল, আর ভীষণ বিষন্ন ড. মাহতাব সাহেব সাপের চামড়ার মতো খসখসে ছোফায় গা এলিয়ে দিয়ে কাগজে বানভাসী মানুষ ও ভেসে আসা হাতির খবর পড়ছিল।
ভেসে আসা হাতির পিছে ছুটে চলা বানভাসী মানুষের একজন ছিল বাছিতনের বাবা খয়রুদ্দি। টানা দুই দিন পর দুপুরবেলা যে কই মাছ ভাজি দিয়ে ভাত খেয়ে ঘুমিয়েছিল। যেহেতু সে টানা কয়দিন শুধুই হাতি দেখেছিল এবং সে একটা ঘোরের মধ্যে ছিল, ঘুমের মধ্যে ছিল। তারপর থেকে এই ঘুমকথা আমাদের অনেকেরই জানা।
– যহন ঘুমাইছি, দেখছি যে হাতিডা মইরা গেছে গা, আর আমিও। তারপর শালার মাজার বিষে ঘুম ভাইঙ্গা গেল। আবার ঘুমাই, আবার দেহি হাতির কী কষ্ট! দেহি হাতির লগে আমি ভেস্তে (বেহেস্ত) গেছিগা। হাতিরে দেহায়া দেহায়া সবাই আরবিতে কয়, বুঝি না; একজন বুঝায়া দেয় আমারে দেহায়া কয়, বাঙালি এরা বাংলা কয়। আমি কই আল্লা…! আর ভেস্তের হুড়ি কী সুন্দর! ঊই বেদেনি গো মতো, ঝাঁটা খোপা চুল, চিকচিকা ত্যাল, কপালে বড় ফোটা, গোড়া মাজা। বেদেনি আমারে দেহায়া দেহায়া মাজা দোলায়, কয়, বাপজান দাঁতের পোকা ফালাই, মাজার বিষ ছাড়াই! এবং যেহেতু বাছিতনের বাবার বিষ ছিল, বেদেনি বলেছিল–
বাপু লজ্জা করিস কিসক, কুটি বিষায় মাজায়, না?
বাছিতনের বাপ কয়– হ
মাজার সামনে, না পেছনে?
– সামনে।
ওপরে না নিচে?
দ্যাখ্ বাপজান লজ্জা করিস না! হামি তর বেটি লাগি বা। বেটির কাছত লজ্জা কিসের। শরম করলি গরম ভাত পাবু?
(এই সরো সব! শ্যাঠা দেখবার বাদে ভির করছু, কাইয়ার মতো, ভাগো)
হ্যা, বাবা এ্যাহন ক তো, বিষ কুটি?
– নিচে, বিষায়!
যেহেতু বিষায় এবং বিষ ছিলই এবং থাকে, আর বেদেনি বিষে পারঙ্গম, কামরু কামাখ্খার দোহাই, এবং সে খুব সহজে বিষস্থল ধরে ফেলেছিল।
বলেছিল– খোল তো বাপ, দেহি।
যেন বহুবছরের শুকিয়ে যাওয়া মরা কালো বিষ বেদেনি ধরে ফেলেছিল। আর পূর্ব-প্রস্তুতি স্বরূপ তার হাত কালো শিংগায় এবং শিংগা মুখে পুরে হাত ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে চুষছিল। বেহেস্তি হুরিদের মতো বেদেনির টোল খাওয়া গাল বেয়ে থোকা থোকা মরবিষ ঝরছিল।
থু!
(ক্যা বা, মা-জি কতদিন ঘরে পড়িছে?)
– ৩ বছর।
(তা, এত বিষ লিয়ে আছিস কেবা করি বা!)
বেদেনি চুষছিল আর বিষ উদগীরণ হচ্ছিল এবং এক সময় তা শিংগা উছলিয়ে চোখে, কপালে, বুকে…।
বলেছিল– ক্যা বা, আরাম পাছু?
যেহেতু বাছিতনের বাবার বিষ ছিল, সেহেতু সে আরাম পেয়েছিল এবং চোখ কুঞ্চিত করে বলেছিল, ‘আ…, পাছি মা’! আর তা অন্য মতন, অন্য অনুভূতিতে গিয়ে ঠেকেছিল। আর বেদেনি শিংগা, ব্লেড ব্যাগে পুরছিল পাপিয়া আক্তারের মতো একই ভঙ্গিতে।
বলেছিল– দে বা, বিদায় কর!
বাছিতনের বাবা যা নিয়েছিল এবং দিয়েছিল সামান্যই এবং বিষ যেহেতু অসীম দূর হবার নয়, তাই বাইরের মানুষদের শুনিয়ে শুনিয়ে দরদ মাখা এবং আতুর কণ্ঠে বলেছিল– বিষায়, বেশি কাটছ মা, উহ্ অত রক্ত!
বেদেনি বিরস হয়েছিল। বলেছিল– টেকের টাকা দিবু না, চোষাইতে তো আরামি লাগে, ক্যা। ঘরের মাগ্ দিয়া চুষা, দ্যাখ কিংকা লাগে বেশ্যার বেটা!
আর যেহেতু বাছিতনের বাবার বিষ ছিলই ফলত তার মুখ কুঞ্চিত হয়েছিল, বলেছিল– যা বেটি, আবার আসিস, বেশি কইর্যা দিমুনে।
বেদেনি ব্যাদান মুখে বলেছিল– কাম শ্যাষ, নাকি! বলেছিল–
খা খা রে খা
বক্কিলারে খা
কিপটারে খা
কঞ্জুসরে খা
গাঁইটের ট্যাকা বাইন্দা যে
না দেয় বেদেনিরে
মা মনসার চেড়ি তাদের
খা খা করে খা
কিড়া থাকল, ব্যাটা বিষ মাথায় উইঠা মরবি। ঘরের মাগ্ বিছনায় পরিছে, বিষ ছড়ায়া যাবানে!
যেহেতু বেদেনি কিড়া দিয়েছিল, ফলত বাছিতনের বাবার বিষ ছিল এবং থেকেই গেল। কারণ বিষ অসীম। আর বেদেনি অসীমের সন্ধানে বলেছিল– দাঁতের পোকা ফালাই, মাজার বিষ ছাড়াই…