ভোর রাত থেকে মোবাইলটা টুংটাং করে বেজেই চলছে অসহ্যকরভাবে। রিসিভ করতে মন সায় দিচ্ছে না। আবার ঘুমও আসছে না। এপাশ-ওপাশ হতে হতে সকাল সাতটা বেজে গেলো। তারপরও অনর্গল ফোনটা বেজেই যাচ্ছে। অনেকটা বিরক্তির সাথে ফোনের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে দেখলাম ১১১ টা মিসড কল। তাও আবার একটা অপরিচিত নাম্বার থেকে। কিছুটা চিন্তিত হয়ে ফোন রিসিভ করলাম। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজনের কন্ঠস্বর ভেসে উঠলো। অতি পরিচিত সে কন্ঠস্বর।
শাকিল– নম নম আছুয়া?
আমি– তুমি? তুমি আমাকে ফোন দিছো কোন সাহসে? আর আছুয়া কী, হ্যাঁ?
শাকিল– কোন উত্তর নাই!
আমি আবারও বললাম– তুমি ফোন দিছো কেন আমাকে?
শাকিল– নম নম মিছুয়া!
আমি– মিছুয়া কি হ্যাঁ?
শাকিল– কি করো?
আমি– এটা কার নাম্বার থেকে ফোন দিছো?
শাকিল– কার নাম্বার তাতো জানি না, তবে এখানে লিখা আছে এখান থেকে দেশে-বিদেশে মাত্র পাঁচ টাকায় কথা বলা যায়।
আমি– এতো ভোরবেলা তোমার কোন শ্বশুর দোকান খুলেছে শুনি?
শাকিল– দোকানের গায়ে লিখা ছিল লোকমান টেলিকম আর নিচে একটা ফোন নাম্বার দেয়া ছিল। সেই নাম্বারে ফোন দিয়ে দোকনদারকে ডেকে নিয়েছি। তার মানে লোকমান শ্বশুর খুলেছে।
আমি– খুব ভালো করেছো, প্লিজ আর জীবনেও ফোন দিবে না।
শাকিল– জ্বী আচ্ছা দিবো না।
আমি– এখন বলো, ফোন দিছো কেন?
শাকিল– ঐ যে তুমি বললে আর যেন জীবনেও ফোন না দেই, এটা শোনার জন্য।
আমি রেগে মেগে বললাম– রাখছি!
শাকিল– আছুয়া আর মিছুয়ার কাহিনী শুনবা না?
আমি– না!
শাকিল– আছুয়া মানে ভালোবাসি আর মিছুয়া মানেও ভালোবাসি।
আমি– কোন দেশের ভাষা এগুলো?
শাকিল– কোরিয়ান ভাষা। তোমার জন্য স্পেশালি শিখেছি। বাজার থেকে ১২০ টাকা দিয়ে লাইব্রেরি থেকে কোরিয়ান ভাষা শিক্ষা বইটা কিনেছি। বিকেলে টাকাটা বিক্যাশ করো কিন্তু?
আমি– কেন? আমি বিক্যাশ করব কেন?
শাকিল– আরে তোমার জন্যই তো কিনেছি, তাই তুমিই টাকাটা দিবা, সহজ হিসাব।
আমি– কিনতে বলেছি তোমাকে?
শাকিল– না তা বলোনি, আমি নিজে থেকেই কিনেছি। আসলে কিছু টাকার দরকার, কি বলে যে চাইবো খুঁজে পাচ্ছিলাম না। তাই এই বুদ্ধি করেছি। তুমি তো দিলে আর ১২০ দিবা না, সাথে আরো কিছু দিবা।
আমি– শয়তান, খচ্চর আর ফোন দিবি না!
তারপর ফোনের বাটনে চাপ দিলাম। টুট টুট শব্দে লাইনটা কেটে গেল। আমার মনে সংশয়, আছুয়া আর মিছুয়া কী সত্যিই কোরিয়ান ভাষা!