দশটার অফিস দশটায় না।
আসলে শুরু হয় সাতটায়।
তা না হলে কিভাবে হবে বলুন?
সকাল হলেই এলাহি কাণ্ড শুরু হয়ে যায়। অথচ সকালের ঘুমটাই নাকি মিষ্টি। কিন্তু মিষ্টি ঘুমিয়ে মিষ্টি মিষ্টি স্বপ্ন দেখলে তো আর অফিস চলে না। অফিস না চললে জীবন চলাও দুষ্কর। একপ্রকার অসম্ভবই বলা চলে। অফিসের বদৌলতে মাসকাবারি বেতন। সেই বেতনে দিন পনেরো ভালোই লেরেলাপ্পা করে চলে। তারপর পকেট অনেকটাই ফাঁকা। পরের পনেরো দিন খানিকটা ঠেলে, খানিকটা গুতিয়ে অনেকটা কোষ্ঠকাঠিন্যের মতো করে চলে। মাস শেষে, শেষ কর্মদিবসে পকেটে বেতন ঢুকলে তবেই ধরে প্রাণ ফিরে আসে। নিঃশ্বাস স্বাভাবিক হয়। অনেকটা বসন্তের এই মাতাল সমীরণের মত। তাই অফিস করতে হবে ঠিকঠাক। আর অফিস করতে হলে সকালে উঠতে হবে এবং সকালে উঠেই ঐ যে বললাম, এলাহি কারবার।
উঠেই প্রকৃতির ডাক। সাড়া দিন, না দিয়ে উপায় নেই। কিন্তু আমি না হয় সাড়া দিলাম, বিপরীত দিক থেকে প্রকৃতিরও ঠিকমত সাড়া দিতে হবে। যদি সাড়া দেয় তো ভালো। না হলে ল্যাও ঠ্যালা সামলাও। তখন খানিকটা এদিক-ওদিক পায়চারী। নাচন কুদন। কাজ হচ্ছে না তো, ঢোক ঢোক পানি খাও। না হলে ইসবগুল, তোকমাদানার ককটেল সাপোর্ট। এতেও কাজ না হলে কিছুই টয়লেটে বসে হালকা জিকির আজগারের মতো চেষ্টা করা। না হলে কিছু করার নেই। অফিসের বাস ধরতে হবে। তাই বের হয়ে বউকে করুণ কণ্ঠে বলা,
‘পায়খানাটা মনে হয় কষা হয়ে গেলো। ক্লিয়ার হচ্ছে না।’
বউ নিয়মিত মুখ ঝামটা দিয়ে বলবে, ও তোমার ক্লিয়ার হয়েছে কবে? ও হবে না। যাও, গোসল কর গে। না হলে একটু পর দেরি হয়ে গেছে বলে চিল্লাবা।
দাড়িমোচ একটু বড় হলে শেভ। তারপর গুনগুন করতে করতে গোসল। ততক্ষণে প্রায় সাড়ে আটটা বেজে গেছে। আর যদি একটু ইতি-উতি মোচড়ামুচড়ি করি, তবে পৌনে নয়টা। তখন গায়ে পোশাকটা জড়িয়ে কোনোমতে নাকে মুখে নাস্তা ঠেলো। এর মধ্যে বউয়ের মেজাজ তেড়িয়া হয়ে জ্বলন্ত উনুন। মুখ ঝামটা, দু’একটা বাক্যবান। ভাতের গ্রাসের সাথে ওসব হাসিমুখে ভেতরে ঠেলে দু’ঢোক পানি খেয়ে টিফিনের ব্যাগটি নিয়ে ভো-দৌড়। ঠিক নয়টা দশে অফিসের বাস। ধরতে পারলে কোনোমতে বাসের পেটের ভেতর তনুটা ঢুকিয়ে দিতে পারলেই আজকের মতো মোটামুটি নিশ্চিন্ত। তখন বাসের সিটে বসে ঝিমুনি দিন কিংবা ভৈরবি টানে গুনগুন করেন,‘এমন করেই যায় যদি দিন যাক না’– ব্যাস, নিশ্চিন্ত মনে অফিসে পৌঁছে যাবেন। আর তা না হলে একেবারে বাঁশ।
মাঝে মাঝে আমার বদ খাসলত জাগে। রাত জেগে সিনেমা দেখা। তার জন্য অবশ্য খানিকটা চেষ্টা চরিত্র করতে হয়। বউকে জোর করিয়ে রাজি করাতে হয়। এই গতকালের কথাই ধরুন, অফিসের এক কলিগের কাছে টানটান উত্তেজনার থ্রিলারের খোঁজ পেলাম। তার রসিয়ে রসিয়ে বর্ণনা শুনে লোভ জাগল, দেখে ফেলি। মুভিটা ছিলও তার কাছে। তাই সংগ্রহ করতে বেগ পেতে হলো না। অফিস শেষে বাসায় পৌঁছে খেয়ে-দেয়ে, একটু তোষামোদ করে বউকে রাজি করিয়ে বসে গেলাম মুভি দেখতে। আহ! কি সিনেমা বানিয়েছে হিচকক সাহেব। একদম খাসা মাল। দেখতে দেখতে কখনও চক্ষু ছানাবড়া হলো, কখনো দম আটকানোর অবস্থা হলো, কখনও গা শিউরে উঠল। মুভি যখন শেষ হলো, ঘড়ির দিকে তাকাতেই চক্ষু চড়ক গাছে চড়ে বসল। দুইটা বেজে গেছে। ঘুমাতে হবে তো। সকালে উঠেই দৌড়াতে হবে অফিসে।
ফ্রেস হয়ে বিছানায় যেতে যেতে রাত্র আড়াইটা। কিন্তু বিছানায় গেলেই তো আর ঘুম আসে না। আসবে কি করে? যখন ঘুমের উপযুক্ত সময় ছিল তখন ঘুমাইনি। এখন এই লেট নাইটে ঘুম আসবে না এটাই স্বাভাবিক। তারপর এমন গরম উঠেছে যে গায়ে পোশাক রাখা দায়। গায়ে অবশ্য পোশাকের বালাই নেই। লুঙ্গিটা কটিদেশে উঠিয়ে রেখে আমি এদিক ওদিক করি। বউ উসখুশ করে। আমি একবার বলি, নাহ ঘুম আসছে না।
বউ একটু পরে বলে, নাহ ঘুম আসছে না।
দু’একবার এসব বলতে গিয়ে দুজন কোরাসে বলে ফেলি নাহ ঘুম আসছে না।
এইরকম করতে করতে কখন দুজন ঘুমিয়ে পড়েছি বুঝতে পারিনি।
ঘুম ভাঙল মোবাইলের বিকট অ্যালার্মে। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি সাতটা বেজে গেছে। অফিসের বাস ধরতে হলে এই সময়েই উঠতে হবে। কিন্তু উঠতে গিয়ে দেখি মাথার ভেতর চক্কর দেয়। তাই অ্যালার্ম বন্ধ করে আবার শুয়ে পড়লাম। আধো ঘুম আধো জাগরণের ভেতর বউ আমাকে মাঝে মাঝে ঠেলে বলে, এই ওঠো অফিসের সময় হয়ে গেছে। বলে উল্টো দিকে ঘুরে শোয়।
আমি তাকে ঠেলে বলি, আরে ওঠো না, দেরি হয়ে যাচ্ছে। বলে অন্য দিকে কাত হয়ে শুই।
এইরকম ঠেলাঠেলি একাত ওকাত করতে করতে যখন উঠলাম, তখন আর বাস ধরার সময় নেই। যাগকে কি আর করা। অন্যভাবে যেতে হবে।
নেয়ে খেয়ে রোজকার মতো টিফিন নিয়ে একটু ধীরে সুস্থেই বের হলাম। দেরি যেহেতু হয়েছে, অত তাড়া দিয়ে কি হবে। চিন্তা করলাম সরাসরি রিকশা নিয়ে অফিসে চলে যাব। গলির মাথায় দেখলাম দু’একজন রিকশাওয়ালা উদাস নয়নে বসে আছে। তারই একজনকে জিজ্ঞেস করলাম, মামা যাবা নাকি মতিঝিলে। সে কোনো কথা বলল না। উদাস চাহনি দিয়ে মুখ ঘুরিয়ে নিল। হ্যাঁ কিংবা না কিছু একটা বলবে তো। ব্যাটা বোবা না কালা? কিংবা রবি ঠাকুরের জাতভাই– মনে মনে বসে কবিতা ভাবছে। অথবা হতে পারে, ওর আরামের ব্যাঘাতের কারণে নির্ঘাত আমাকে গালি দিচ্ছে। সামনে আরেকটা রিকশা দাঁড়ানো ছিল। জিজ্ঞেস করতেই বলল, হ যায়াম।
বললাম, চল।
বলে উঠতে যাচ্ছি রিকশাওয়ালা বলল, ভাড়া কিন্তু একশ বিশ টাকা দিতে হইব।
ভাড়ার কথা শুনে আঁতকে উঠে পড়ে যেতে ধরছিলাম। কোনোমতে সামলে উঠে তেড়িয়া হয়ে বললাম, ষাট টাকার ভাড়া, সেখানে সত্তর কি আশি টাকা চাইতে পারো। ডাবল চাও কেমনে? তুমি কি গাঁজা খাইছ না আমারে গাঁজাখোর মনে হয়?
রিকশাওয়ালা আমার দিকে অগ্নিদৃষ্টি হেনে বলল, গেলে চলেন, না গেলে নাই। অত কথার কি আছে।
আর কথা বাড়িয়ে লাভ নেই। তাই গজগজ করতে করতে সামনে আগালাম। এরপর বেশ কয়েকজনকে জিজ্ঞেস করলাম, মামা যাবা নাকি? তাদের অবস্থা ঐ আগের মতোই। কেউ উদাস হয়ে রবীন্দ্রনাথ হবার চেষ্টা করছে। কেউ ডাকাতের মতো ভাড়া হেঁকে বসে আছে। রিকশা খুঁজতে খুঁজতে প্রায় মিনিট দশেক চলে গেছে। আর দেরি করা যায় না। বেশি দেরি হলে আবার বসের ধাতানি খেতে হবে। তার চেয়ে ভালো বিশ্বরোডে গিয়ে বাস ধরা। ওখান থেকে সরাসরি বাস আছে। ভাড়াও দশ টাকা। আমি ছাপোষা সরকারি চাকুরে। টাকা তো আর গা কামড়ায়নি যে ডাবল টাকা ভাড়া দিয়ে রিকশা করে যেতে হবে।
কিন্তু আমি যাই বঙ্গে আমার কপাল যায় সঙ্গে। বিশ্বরোডে উঠে দেখি এলাহি কারবার। সেখানে আমার মতো অনেকেই বাস ধরার জন্য অপেক্ষা করছে। সেদিন বাসের সংখ্যাও কম। একটা করে বাস আসে মানুষে ঠাসা। কিন্তু ঐ বাসে উঠতেই সবাই ঝাঁকে ঝাঁকে দৌড়ায়। যারা তাগড়া জোয়ান টাইপের তাদের জন্য সুবিধা। তারা অন্যকে ঠেলে গুতিয়ে বাসে উঠে যায়। আমার মতো যারা শুকনো অম্বলে ভোগা দুর্বল টাইপের তাদের সমস্যা। তাগড়া লোকদের গুতা খেয়ে হড়কে পড়ে যাচ্ছে। আমি দুএকবার চেষ্টা করে উঠতে পারলাম না। আরেকবার উঠতে গিয়ে ভিড়ের মধ্যে কারও কনুইয়ের গুতায় ঠোঁটের কোণা কেটে গেল। মহা মুশকিল দেখছি। চারিদিকে যুদ্ধাবস্থা বিরাজ করছে। কিন্তু অফিসে তো যেতে হবে। মিনিট দুয়েক পরে দেখলাম আরেকটি বাস আসছে। আগের মতোই মানুষে ঠাসা। প্রস্তুতি নিলাম যেমনেই হোক এবার উঠতেই হবে। বাস থামার সাথে সাথেই সবাই দৌড় শুরু করে দিল। আমিও বিসমিল্লাহ বলে দিলাম দৌড়। ভিড়ের মধ্যে হাতড়ে কোনোমতে বাসের দরজার ডান্ডার হদিস পেলাম। কোনোমতে সেটা ধরে ইয়া আলী মা কলি বলে দিলাম এক চাপ। চাপে সামনে একটু ফাঁক হল। আমি হুড়মুড় করে গিয়ে একজনের গায়ের উপর পড়লাম।
ব্যাস কেল্লা ফতে। যার গায়ের উপর পড়লাম সে অবশ্য দু’এক কথা শুনিয়ে দিলো। আমি খুশিমনে সেগুলো হজম করলাম। বাসে তো উঠতে পেরেছি।
বাসের ভেতরে এক আজব কারখানা। একে তো গরম, তার উপরে মানুষে ঠাসা। ফ্যান লাগানোর জায়গা আছে কিন্তু ফ্যান নেই। প্রাগৈতিহাসিক আমলের বাস বলে কথা। এত মানুষ নড়াচড়া করব সে উপায় নেই। গরমে ঘেমে নেয়ে একাকার। শিরদাড়া বেয়ে ঘাম চুইয়ে পশ্চাৎদেশের জাঙ্গিয়া ভিজিয়ে দিচ্ছে। সেটা পেছনে লেপ্টে কুটকুট করে চুলকাচ্ছে। কিন্তু চুলকাবো সে বড় অসম্ভব ব্যাপার। কারণ আমার জায়গা হলেও আমার হাত দুটির জায়গা দিতে পারছি না। কোথায় রাখি এটা নিয়ে মহা দুশ্চিন্তায় আছি। হাত নড়ালেই অন্য মানুষের গায়ে লেগে যাচ্ছে। আশেপাশে মহিলা মানুষ আছে, তাদের গায়ে লাগলে কেস খেয়ে যাব। চুলকানি এক পর্যায়ে অসহ্য হয়ে গেলে কোনোমতে পকেটে হাত ঢুকিয়ে চুলকানো শুরু করলাম। দেখি আরাম লাগে না। তাই একটু জোড়ে খামচি দিতেই পাশ থেকে একজন চেঁচিয়ে উঠল। দ্রুত পকেট থেকে হাত বের করে নিয়ে এসে বুঝলাম, ওটা আমার পকেট ছিল না, যে চেঁচিয়ে উঠেছে তার পকেট। ভাগ্যিস লোকটা বুঝতে পারেনি। বুঝলে পাবলিকের ধোলাই একটাও মাটিতে পড়ত না। পেছনে ঘুরতেই দেখি এক মহিলা আমার দিকে কটমটে দৃষ্টি দিয়ে তাকিয়ে আছে। চোখে চোখ পড়তেই মুখ দিয়ে বেরিয়ে গেল, আপা আমি না।
মহিলা রাগতস্বরে বলল, আমি যে দেখলাম আপনি ওনার পকেট থেকে হাত বের করলেন।
মিনমিনে স্বরে বললাম, নিজের পকেট মনে করে ভুল করে ঢুকিয়েছিলাম।
মহিলা আর কিছু বলল না। আহ এ যাত্রায় বেঁচে গেলাম।
এর মধ্যে যমদূতের মত বাসের হেলপার এসে হাজির। গুতা দিয়ে বলল, ভাড়া দেন। ভাড়া দিতে হলে মানিব্যাগ বের করতে হবে। মানিব্যাগ বের করতে গিয়ে যদি আবার অন্যের পকেটে হাত ঢুকিয়ে দেই তাহলে দ্বিতীয়বার আর ক্ষমা পাবো না। তাই আর ঐ রিস্ক নিলাম না। বললাম, ভাড়া তো দেব, কিন্তু মানিব্যাগ বের করব কেমনে? যা ভিড়।
কেমনে বের করবেন আপনি জানেন, আমারে ভাড়া দিলেই হলো।
নামার সময় দেব বলে হেলপারকে আশ্বস্ত করলাম। সে খুব আশ্বস্ত হয়েছে বলে মনে হলো না। বিড়বিড় করতে করতে সামনের দিকে আগালো। বিড়বিড় করে গালি দিলে দিক। আমি তো আর শুনছি নে।
এই ভিড়ের মধ্যে এমনি দাঁড়ানোর জায়গা নেই তারপর আবার হেলপার গুতিয়ে সামনে আগাচ্ছে। এতে মানুষের ঠাসাঠাসি হচ্ছে আরও বেশি। আমি খাটো মানুষ। মানুষের চিপায় পড়ে দম বন্ধ হওয়ার উপক্রম হল। কুমিরের বাচ্চার মতো উপরের দিকে মুখ করে কোনোমতে নিশ্বাসটা চালু রাখলাম।
হেলপার একটু সামনে আগাতেই ছোকড়ামত স্কুল ড্রেস পড়া একজনের সাথে ভাড়া নিয়ে ঝগড়া বেধে গেল। ওর সাথে দেখলাম আরও দুএকজন আছে। তারাও গলা চড়াচ্ছে। ছোকড়াদের দাবি ছাত্রদের হাফভাড়া নেয়ার নিয়ম। তাই হাফভাড়া নিতে হবে। হেলপারের দাবি, এ বাসে হাফ ভাড়ার নিয়ম নাই। তাই ফুল ভাড়া দিতে হবে।
বাকবিতণ্ডা ক্রমেই বাড়ছে। ছোকড়াদের মধ্য থেকে ষণ্ডামত একজন বলল, ব্যাটা বেশি ত্যাড়িবেড়ি করলে কিলায়া হাগায়া ফালামু কিন্তু।
এর বিপরীতে হেলপার কিছু বলতেই মার শুরু হয়ে গেল। সেকি মার। আমাদের এলাকার ভাষা অনুযায়ী ’আন্দিকুন্দি মাইর’। সাথে শুরু হল যাত্রীদের ঠেলাঠেলি। সবাই গায়ের উপর উঠে যায় আর কি? যাত্রীদের মধ্যে কয়েকজন ছোকড়াদের কোনোমতে শান্ত করল।
এর মধ্যে সিগন্যালের জ্যাম। আর কাহাতক সহ্য করা যায়। জানালা দিয়ে তাকিয়ে দেখি বাস প্রায় অফিসের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে। হেঁটে যেতে মিনিট পাঁচেক লাগবে। বাসের ভেতর যা শুরু হয়েছে, তাতে নেমে যাওয়াই যুক্তিযুক্ত মনে হলো। হেলপারকে অনুরোধ করলাম, আমাকে একটু নামিয়ে দিতে। কিল-ঘুষি খেয়ে হেলপারের অবস্থা কাহিল। চোখেমুখ ফুলে আলু উঠে গেছে। আমার কথা শুনে সে কটমট করে আমার দিকে তাকাল। ভাবখানা এমন যে, ওর এই অবস্থার জন্য আমিই দায়ী। আবার অনুরোধ করলাম, আমাকে একটু নামিয়ে দিতে।
বলল, নামেন। আরে চলন্ত বাস থেকে নামবো কি করে? একটু থামাও না ভাই।
হেলপার তখন হাফ ছেড়ে বলল, ওস্তাদ একটু স্লো করেন, একজন নামবো।
আমি দরজার কাছাকাছি আগাতেই কন্ট্রাকটার একপ্রকার আমাকে ঠেলে দিল। পড়তে পড়তে কোনোমতে সামলে নিলাম। নেমে যে বুক ভরে নিঃশ্বাস নেব সে উপায় নেই। রাস্তার পাশে যত্রতত্র মূত্রত্যাগের জন্য বিচ্ছিরি গন্ধ বেরুচ্ছে। অগত্যা নাক চেপে হাঁটা। হাঁটতে হাঁটতে লক্কর-ঝক্কর অফিস বাসের মর্ম হাড়ে হাড়ে টের পেলাম। তার সাথে মনে পড়ল, আমাদের মমতাজ বেগমের গাওয়া সাম্প্রতিক একটা গান–
‘বন্ধু তুই লোকাল বাস
আদর কইরা ঘরে তোলস
ঘাড় ধইরা নামাস।’
গানের মর্ম অক্ষরে অক্ষরে বুঝতে পারলাম।