অণুগল্প: ০১
প্রতিমা
আসছে সপ্তাহে কালী পুজো। তাই নিতাই পালের দম ফেলবার সময় নেই। তিনি প্রতিমা নির্মাণের কারিগর। প্রতিমা বিক্রি করেই কোনো রকম কায়ক্লেশে দিনাতিপাত করেন। ঐ দিকে গত কয়েকদিন ধরে ছোট ছেলেটা ম্যালেরিয়ায় ভুগতেছে কিন্তু টাকা নেই ডাক্তার দেখাবার। গরিবের শেষ ভরসা ভগবান। তাই নিতাইয়ের ঘরনি ছেলের সুস্থতা কামনার জন্য সারাদিন ঠাকুর ঘরেই পড়ে থাকেন। হে মা, আমার একমাত্র বুকের ধনকে সুস্থ্ করে দাও। কিন্তু অসহায় মায়ের আকুতি মা কর্ণপাত করেননি।
কালী পুজোর একদিন বাকি। প্রতিমা তৈরির শেষ মূহুর্তের প্রস্তুতি নিচ্ছেন নিতাই পাল। এখন প্রতিমার শরীরে কান দেওয়ার পালা। তারপর কাজ শেষ, হাটে নিয়ে বিক্রি করা হবে। এমন সময় হরিচরণ এসে বলল, দাদা আপনার ছেলে তো মারা গেছে। নিতাই আর প্রতিমার কান তৈরি করলেন না।
অণুগল্প: ০২
পশু পূজারি
বড় গিন্নি ছেলেকে বারবার কান্নার কারণ জিজ্ঞেস করে। কিন্তু ছেলের কান্না থামিয়ে কথা বলার প্রয়োজন বোধ করে না। শুধু কেদেঁই যাচ্ছে সে। জমিদার পুত্র ফটিকচরণ কান্নার রহস্য না উন্মোচন করলেও মা কিন্তু ঠিকই পুত্রের কান্নার কারণ বুঝে নিয়েছেন। নিশ্চয় পাশে দাঁড়ানো বাড়ির চাকরানি ছোট্ট দুষ্টু মেয়ে ফটিকের গায়ে হাত তুলেছে। তাই গিন্নি রাগে ঘৃণায় ধপাশ ধপাশ করে কয়েকটা কিল বসিয়ে দেয় মিলুর পিঠে। কিন্তু এবার মিলুকে মারতে দেখে জমিদার পুত্র ফটিকচরণের মুখে বুলি ফোটে!
বলতে লাগলো, মা। মিলুকে মেরো না। ও আমাকে মারেনি। পায়ে বিড়ালে কামড় দিয়েছে!
সত্যিই তো, মা দেখলেন ছেলের পা থেকে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। এতক্ষণ যে মা ছেলেকে মারার বিনা অপরাধে নিরীহ ছোট্ট মেয়েটির পিঠ গরম করতে পারে, সে মা চাইলেই অপরাধী বিড়ালের পরকালের টিকেট কেটে দিতে পারতেন। কারণ বিড়ালটি পাশেই ছিলো। কিন্তু তা তিনি করলেন না। কারণ এই তল্লাটের জমিদারদের একটা সুখ্যাতি আছে তারা নিরীহ পশুর গায়ে হাত তোলেন না।