তানির পড়ার ঘরে মাসুদ ঘণ্টা দুই ধরে ফিজিক্স পড়াচ্ছে। যেন-তেন বিষয় না ‘থিওরি অফ রিলেটিভিটি’। আজ একটা কিছু হবেই হবে। হয় তানি বুঝবে না হয় টিউশনির ইস্তফা।
– বুঝলে তানি আপেক্ষিকতত্ত্ব হচ্ছে আপেক্ষিক তত্ত্ব, এর সংজ্ঞা হচ্ছে যে তত্ত্ব আপেক্ষিক তাকেই আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে।
– বলতো এবার আপেক্ষিক তত্ত্ব কী?
– স্যার আপেক্ষিক তত্ত্ব হয় আপেক্ষিক তত্ত্ব অর্থাৎ যে তত্ত্বের নাম আপেক্ষিক ফিজিক্সের ভাষায় তাকেই আপেক্ষিক তত্ত্ব বলে।
– গুড।
– এবার বল টুইন প্যারাডক্স কী?
– স্যার টুইন প্যারাডক্স আপনি আমায় পড়াননি, তবে ছোটবেলায় কিন্তু টুইঙ্কল টুইঙ্কল পড়েছি। সেখান থেকে বলি একটু? টুইঙ্কল টুইঙ্কল লিটিল স্টার! হাউ আই ওয়ান্ডার হোয়াট ইউ আর!
– না না থাক! কী অদ্ভুত কথা টুইন প্যারাডক্স আমি পড়াইনি?
– না স্যার, একদম পড়াননি।
– বুঝাইনি ডিটেইলস?
– না।
– ধরো তানি, তোমার একটা যমজ বোন আছে।
– ভাই হলে হবে না ?
– না, হবে না।
– কেন হবে না স্যার?
– কারণ আমার মেয়েদের পড়াতে ভাল্লাগে।
– ও আচ্ছা, তারপর কী ধরবো স্যার?
– ধরো তোমরা দুজনই পড়ছো, তোমার পড়ায় মন নেই তোমার বোনের আছে, সে ছাত্রী ভালো, মনোযোগী।
– কেন আমার মন নেই কেন? আমিও তো ভালো, ক্লাসে ফার্স্ট না হলেও আমি ভালো, বলেন আমি ভালো?
– হু ভালো, এবার চুপ, ধরো এত ভালোর পরও তোমার মন একটু উড়ু উড়ু।
– তো?
– তো সেই উড়ু উড়ু মন নিয়ে তুমি একটু এদিক সেদিক বেড়াও।
– কোথায় বেড়াই?
– ধরো মাঝে মাঝে আকাশেও যাও বেড়াতে।
– তো আমার যমজ বোনটা কই থাকে? আপনার কাছে পড়ার টেবিলে?একা?
– হু, সে এক মনে পড়তেই থাকে,পড়তেই থাকে। সে পড়ে আর তুমি মনের সুখে পাখা লাগিয়ে ঘুরে বেড়াও । ধরো সেই পাখা গুলো ঘুরতে ঘুরতে একটা রকেট হয়ে গেলো, সেই রকেটের আবার পর্যায়ক্রমে গতি বাড়তে শুরু করবে, তারপর কী হবে বলতো?
– কী হবে ক্রাশ করবে? ঝুপ করে পড়ে মাটিতে, চিৎপটাং।
– আরে না, ঘুরতে ঘুরতে একটা সময় তোমার ঘোরার বেগ বেড়ে যাবে, আলোর প্রায় কাছাকাছি চলে যাবে তুমি। ধরো সেই বেগ হয়ে গেলো ১৪৭০০০ মাইল/সেকেন্ড, বুঝতে পারছ অবস্থা!
– জি স্যার বুঝেছি, আপনার এই স্পিচটা স্ট্যাটাস হলে আমি একটা wow রিঅ্যাক্ট দেবো, আর আমার রকেটে যদি ঝাঁকুনি লাগে তাহলে sad রিঅ্যাক্টও দিতে পারি।
– আচ্ছা যাও দিও, এরপর ধরো তুমি রকেটে করে বছর তিনেক ঘুরলে। মহাকাশ, গ্রহ, নক্ষত্র ঘুরে কেমন করে তোমার সময় কাটলো তুমি বুঝলেই না, তারপর একদিন হুট করে মনে হলো আরে আমারতো নিজের একটা ঘর আছে, একটা পড়ার টেবিল আছে, একটা ফিজিক্স বই আছে একজন ফিজিক্স টিউটরও আছে আমারতো ফিরতে হবে। ফিরবে না?
— হু ফিরবো। আর আমার যমজ বোনটা?
– সে তো আছেই। বলতো তোমার এই ঘোরাঘুরিতে কয় বছর কাটলো?
– জানি না তো স্যার কয় বছর। আপনি জানেন?
– হু জানি। ধরো মাঝে কাটলো তিন বছর।
– তিন বছর? মানে থ্রি ইয়ারস কি বলছেন স্যার! এই তিন বছর আমি ওয়াশরুমে যাবো না? দাঁত ব্রাশ করবো না, নিনজা টারটলস, কিং দ্যা হোয়াইট লায়নস দেখবো না, আন্দাজে আন্দাজে বোরিং আকাশ বাতাস ঘুরে বেড়াবো?
– হু বেড়াবে, এখানেইতো টুইন প্যারাডক্সের মজা। মহাকাশ আর পৃথিবীর পার্থক্য, সময়ের ডাইমেনশন। পৃথিবীতে ফিরে তুমি কী দেখবে জানো?
– কী দেখবো?
— দেখবে তোমার সবে বয়স বেড়েছে তিন বছর। আর তোমার বোনের বেড়েছে ত্রিশ বছর।
– তিরিশ বছর, তাও আমার যমজের? আহা আইনস্টাইন কত ভালো, স্মার্টফোনের বিউটি ক্যামেরা ছাড়াই আমার বয়স কমিয়ে দেবে, লোকটা কিন্তু স্যার আপনার চেয়েও ভালো, তাই না?
– হু। আইনস্টাইন গাণিতিকভাবে প্রমাণ করে দেখিয়েছেন ‘কম গতিশীল বস্তুর তুলনায় স্থির বস্তুর সময় অধিক দ্রুত যায়’ আর একারণেই বিউটি ক্যামেরা ছাড়াই তোমার বোন আর তোমার বয়সের এই অবস্থা হবে বুঝেছো, এখানে তোমার আইনস্টাইনের কোনো কেরামতি নেই।
– অ।
– অ না, ভালো করে বুঝেছো কিনা বলো?
– হু।
–যাক তাহলে এবার বলো টুইন প্যারাডক্স বা যমজ বিভ্রান্তি কী?
তানি মাথা নাড়ে! জোরে শ্বাস নেয়, একদমে গড়গড় করে বলতে শুরু করে– স্যার আমার যমজবোন হচ্ছে স্থির গতিশীল, আপনাকে আর আপনার এই ফিজিক্স বই ছাড়া সে আর কোনোকিছু চেনে না, দেখে না, শোনে না, আমরা ধরে নিতে পারি মনে মনে সে আপনাকে ভালোবাসে, আইনস্টাইন তার বয়স বাড়িয়ে দিলেও আপনার সুবিধার্থে তাকে আমার চেয়ে একটু সুন্দরী ধরে নিতে কোনো সমস্যা নেই। আমরা এও ধরতে পারি এই স্থির গতির মতির জন্য সে এই ঘর ছাড়া কোথাও যায়ও না তেমন। আমরা এই ধরতে ধরতেই দেখতে পাবো তার ফিজিক্স বইয়ে রোজ সে আপনার জন্য লাভ লেটার নিয়ে আসে আর আপনি পড়ানো শেষে নিয়ে যান। এমনকী রাতে সে ম্যাসেঞ্জারে আপনাকে হ্যালো স্যার, হাই স্যারও লেখে। এবার আসি আমার প্রসঙ্গে যেহেতু আমি কম গতিশীল হলেও আমার যমজের চেয়ে একটু বেশি গতিশীল তাই আমার ব্যাপার স্যাপার আলাদা। ধরেন এই ঘর আর এই ফিজিক্স বইয়ের বাইরেও আমার পাড়াতো মামাতো আর ক্লাসতো কাজিনদের সাথে ইমোশনাল গ্যাঞ্জাম লেগে যায়। সে সময় আমি অর্ডিনারি এদিক সেদিক পাড়া না বেড়িয়ে মাঝে মাঝে আকাশে ঘুরতেও চলে যাই। যেহেতু এখানে একটা সময়ের গ্যাঞ্জাম আছে তাই আকাশ থেকে ঘুরে আসার পর আমি তানি টিন গার্ল থেকে আরও ইয়ং গার্ল হয়ে যাবো, আমার বয়স তেমন একটা বাড়বে না। আমি হবো আরও গর্জিয়াস। আর ওদিকে আমি ফিরে আসতে আসতে আপনাদের কেটে যাবে ত্রিশ বছরের দাম্পত্য জীবন! যাই বলেন স্যার সংক্ষেপে এই হচ্ছে আপনার টুইন প্যারাডক্সের হিসেব! তিন বছর পর এই এক প্যারাডক্সের প্যারায় আপনি হয়ে যাবেন আমার তিরিশ বছরের দুলাভাই, আমি হয়ে যাবো আপনার তিন বছরের শালী। জয়তু আইনস্টাইন!