দর্পণ ডেস্ক
একটি পূর্ণাঙ্গ ম্যাগাজিন। শিক্ষা, সাহিত্য ও গবেষণামূলক ম্যাগাজিন দর্পণ। ২০১৯ সালে ব্যতিক্রমধর্মী ম্যাগাজিন দর্পণ তার যাত্রা শুরু করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দর্পণ "গল্পবাজ" ম্যাগাজিন আত্তীকরণ করে।
দর্পণ ডেস্ক

জ্বিনপনা – সাজিদ চঞ্চল

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

অনেক দিন আগে গভীর রাতে একটা ফোন আসে, আননোন নাম্বার থেকে। আমি ফোন রিসিভ করার পরে এক ভদ্রলোকের সুরেলা কণ্ঠে কোরআনের কয়েকটি আয়াত শোনালো। তারপরে সালাম দিলো।

আমি সালামের উত্তর নিলাম– ওয়ালাইকুম আসসালাম। কে বলছেন?

– আমি জ্বিনের বাদশা কইতাছি।

কথা শুনে টাস্কি খেলাম। জ্বিনের বাদশা আমাকে ফোন দিয়েছে। অবাক করা কান্ড। তাও আবার ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলছে। এটা কি ঢাকাইয়া জ্বিন? জ্বিনেরা কি ফোনও ব্যবহার করে? এটা তো জানতাম না। ছোটবেলায় শুনেছি, জ্বিনেরা যদি মিষ্টির দোকান থেকে মিষ্টি না কেনে, তাহলে নাকি সেই দোকানের বেঁচা কেনা ভালো হয় না। আবার কোনো বাজার থেকে যদি জ্বিনেরা বাজার সদাই না করে, সেই বাজারও নাকি জমে না। যদি কোনো জ্বিন বাজার থেকে আলু , মুলা, পটল এবং লাউ কেনে। তাহলে তারা এগুলো কিভাবে রান্না করবে? এখানে আমার একটা প্রশ্ন। আমার জানা মতে, জ্বিনেরা নাকি আগুন আর লোহার কাছে আসে না। ছোটবেলায় আরো অনেকের কাছ থেকে নানান ভয়ঙ্কর গল্প শুনেছি। অনেক রাতে কোনো জায়গা থেকে কোনো ব্যাক্তি বাড়িতে ফিরার সময়, নির্জন কোনো মাঠে অথবা রাস্তার পাশে এক সুন্দরী নারী এলো চুলে শাড়ির আঁচল ফেলে তার সাথে সাথে হাঁটছে। কী যে এক ভয়ঙ্কর অবস্থা। হাঁটতে গেলে পা চলে না। তখন বাড়ি ফিরার একমাত্র ভরসা ছিলো আগুন আর বিড়ি। বিড়ি একটার পরে একটা শেষ করে ভয়ে ভয়ে বাড়ি ফিরেছে। সাথে যদি বিড়ি আর আগুন না থাকতো… বাদ দেই এই প্রসঙ্গটা। তাহলে জ্বিনেরা কিভাবে কাঁচা সবজি রান্না করে খাবে? ধরলাম মুলাটা কাঁচা সালাদ হিসাবে খাওয়া যায়, কিন্তু যদিও খায় তাহলে তো জ্বিনেদের ইয়ার ফোর্সের চাপ বাড়বে। তখন ইয়ার ফোর্সের চাপ ঠেকাবে কিভাবে? তাহলে তো জ্বিনও রকেটের মতো বাতাস ছাড়তে ছাড়তে ওপরে উঠতে থাকবে। একসময় মহাশূন্যে। তাই যাদের জ্বিনে বশ করে, তারা ইচ্ছা করলে জ্বিনকে মুলা খাইয়ে মহাশূন্যে যেতে পারেন। এই সুযোগে মহাকাশটা দেখে আসতে পারেন জ্বিনের কাঁধে বসেই। যদি জ্বিনেরা ফোন ব্যবহার না করে, তাহলে কি ফোনে কথাও জমবে না?

যাই হোক ঘটনায় ফিরি।

– জ্বী বলেন।

– আফনের ভাগ্য অনেক ভালো। আফনের কাছে কিছু জ্বিন মিষ্টি খাইতে চাইছে, তাই তো আমারে কিছু জ্বিন কইছে, আফনের মাধ্যমে মিষ্টি খাওয়ানোর ব্যবস্থা করতে।

– যাই হোক, আপনাদের আমি মিষ্টি খাওয়াবো এটা তো আমার পরম সৌভাগ্য। আপনি তো জ্বিনের বাদশা, তাই না?

– হ, আমি জ্বিনের বাদশা।

– তাহলে আপনাকে কী বলে ডাকবো?

– আফনের কথা বোঝলাম না।

– আমি বুঝিয়ে বলছি। এই যে আমরা রাজা বাদশাদের মহারাজা, জাহপনা, আলামপনা বলি; আপনাকে কি বলবো?

– আফনের ইচ্ছা।

– আপনি যেহেতু মানুষ জাতির কেউ নন, তাই ভাবছি আপনাকে “জ্বিনপনা” বলে ডাকবো।

– জ্বী, জ্বিনপনা বলেন। আমার মোবাইলে ব্যালেন্স নাই, কল ব্যাক করেন।

আরেক দফায় টাস্কি খেলাম। গরিব জ্বিনের বাদশা। রাজ্যে বোধহয় অভাব চলছে। কী আর করা। তাই ফোন ব্যাক করার আগে জ্বিনপনাকে আমার বিকাশ থেকে গরিবিভাবে বিশ টাকা ব্যালেন্স পাঠালাম।

আমি বললাম, জ্বিনপনা আপনাকে গরিবিভাবে ব্যালেন্স পাঠিয়েছি।

– এটার দরকার ছিলো না।

– না, ছিলো। আপনি একজন জ্বিনপনা, আপনার মোবাইলে ব্যালেন্স থাকবে না, তা কি হয়?

– আফনে আমাগ আড়াই মোন মিষ্টি খাওয়াবেন।

আমি একটা হিসাব টানলাম। একশো কেজি মিষ্টির দাম ৩৫০ টাকা যদি ধরি তাহলে মোটামুটি ভালো মিষ্টি পাবো, তবে অনেক ভালো মিষ্টি হবে না। এখানে ৩৫০০০ টাকার হিসাব। তারপর আমি বললাম– জ্বিনপনা, আপনি জ্বিন সম্মেলনের ব্যবস্থা করেন। আমি জীবনে কোনোদিন জ্বিন দেখি নাই। এভাবে জ্বিন দেখার সুযোগ হবে আমি জানতাম না। তাই এই সুযোগ আমি মিস করতে চাই না। আমাকে স্থান বলেন, আমি মিষ্টি নিয়ে যথাস্থানে উপস্থিত থাকবো।

– আপনাকে মিষ্টি নিয়ে আসতে হবে না, টাকা দিলে আমরা মিষ্টির ব্যবস্থা করতে পারবো।

এখন আমার এক বান্ধবীর দুলাভাইয়ের কথা মনে পড়লো। বেচারা ইসলামী ব্যাংকে চাকরী করতেন, নরসিন্দির পলাশ শাখায়। ওনাকেও এই মিষ্টি খাওয়ানোর রোগে ধরেছিলো। সেই লোক গুলিস্থান পার্কে ২৭০০০ টাকা দিয়ে এসেছিলো এবং পিছনের দিকে তাকানো নিষেধ ছিলো। এভাবে আরো কয়েক দফায় টাকা চেয়েছে। তারপর কয়েক মাস পরে, বেচারা ব্রেন স্ট্রোকে নয় মাস কোমায় ছিলো ইসলামী ব্যাংক হাসপাতালে। তারপরে মারা যায়। না জানি, এই অবস্থা আমার আবার না হয়।

এখন জ্বিনপনার কাছে জানতে ইচ্ছা করছে, উনি এই নাম্বার কীভাবে কোথা থেকে পেলেন। জিজ্ঞেস করে ফেলি।

– জ্বিনপনা, আপনি কি বাংলাদেশ শাখার জ্বিনের বাদশা?

– কেন?

– না মানে, এমনিই জানতে চেয়েছি। আচ্ছা জ্বিনপনা, আপনার কি ঘরও আছে? বেয়াদবী নিবেন না জ্বিনপনা।

– ক্যান?

– এই যে আপনি এই নম্বর ব্যবহার করছেন। সিম তুলতে বা কিনতে গেলে ঘর লাগে, ফিংগার প্রিন্টও লাগে। এগুলো ক্যামনে?

ভদ্রলোক এবার লাইনে এলো। তারপর বললো, ভাইজান আমি আফনের লগে দুষ্টামি করছি।

– জ্বিনপনা, দুষ্টামি করবেন কেন? আপনি কি আমার দুলাভাই লাগেন নাকি আমি আপনার দুলাভাই লাগি?

– না মানে এমনেই।

– আসলে, এই করে কি কাজ হয়?

– স্যার, আফনে তো বোকার স্বর্গে বাস করতাছেন। ১৬ থেকে ১৮ কোটি জনগণের দেশে ১৮০০ মফিজ পাওয়া কোনো ব্যাপার না। এতও লাগে না। দুই চার জন পাইলেই যথেষ্ট।

আসলেই জ্বিনের বাদশার কথাই ঠিক।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu