পিন্টু রহমান
১৩ অক্টোবর ১৯৭৫ খ্রি: চুয়াডাঙ্গার কুমারী গ্রামে জন্ম, পৈত্রিক ঘরবসতি কুষ্টিয়া জেলার বাজিতপুর গ্রামে। মাতা: জিন্নাতুন নেছা ও পিতা: বীর মুক্তিযোদ্ধা আজিবর রহমান। তিনি একজন কথাসাহিত্যিক। গল্পের ছলে ভাষার আঞ্চলিকতায় চিত্রায়ণ করেন বাঙাল-জনপদের বহুমাত্রিক জীবনাচার। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ: পাললিক ঘ্রাণ (গল্পগ্রন্থ), পূরাণভূমি (উপন্যাস), কমরেড (উপন্যাস), পরাণ পাখি (গল্পগ্রন্থ)
পিন্টু রহমান

জালকেন্দ্রিক জটিলতা – পিন্টু রহমান

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

নির্জন দ্বীপের উন্মুক্ত প্রান্তরে একটি মানুষ অথবা একটি লাশ পড়ে থাকতে দেখে পথচলতি মানুষ কিংবা অমানুষদের মধ্যে বিশেষ কোনো ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয় না। বিষয়টি যেন তাদের গাঁ-সওয়া। সয়ে গেছে; অজানা অচেনা লাশ দেখতে দেখতে তাদের সহ্যযন্ত্রের স্বাভাবিকতা নষ্টপ্রায়। রক্তমাখা শরীরে পড়ে থাকা লাশটিকে মেছো বাঘ কিঙবা অকালপ্রয়াত শিয়াল ছাড়া অন্যকিছু ভাবতে পারে না। অথবা তাদের ভাবনাজুড়ে কেবলই মাছ। গভীর সমুদ্র হতে মাছ শিকার করতে না পারলে উনুনে আগুন জ্বলবে না ছেলে মেয়েদের নিয়ে না খেয়ে থাকতে হবে। জেলেপল্লীর মানুষদের এই এক স্বভাব- দিনরাত্রি কেবল উদরপূর্তি নিয়ে চিন্তা। জন্ম হতে মৃত্যু পর্যন্ত ওই চিন্তার কোনো অবসান হয় না। তাদের একদল, যারা ভেবেছিল স্বাধীনতার পরে সুদিন আসবে, পেটপুরে দু’বেলা খেতে পারবে, মানুষের মতো মানুষ হয়ে বাঁচবে; তারাও বুঝে গেছে এসব কেবল স্বপ্নের ফাঁনুস। স্বপ্ন কখনো সত্যি হয় না। একদিন মাছ না ধরলে সংসার চলে না। পরিবার-পরিজন নিয়ে অভুক্ত থাকতে হয়। অভুক্ত পরাণে একটি লাশ অথবা রক্তমাখা মানুষকে মেছো বাঘ কিঙবা অকালপ্রয়াত শিয়াল বিবেচনা করা মোটেও অমূলক নয়। এমনতর হত্যাকান্ডের সাথে তারা নিজেরাও প্রত্যক্ষভাবে জড়িত। ক্ষুধার্ত বাঘ কিঙবা শিয়াল শুটকি অথবা মজুদকৃত মাছ খেতে এলে, তারা বল্লম হাতে তুলে নেয়। সম্মিলিত প্রচেষ্টায় শত্রুকে ঘায়েল করে। ঘায়েল করতে পারে না কেবল অনুপ্রবেশকারী ভারতীয়দের। আন্তর্জাতিক জলসীমা অমান্য করে ভারতীয় জেলেরা মাছ শিকার করতে এলে তারা সাক্ষী গোপালের মতো ঠাঁই দাঁড়িয়ে থাকে। প্রতিবেশী রাষ্ট্রের বর্বরতা কিংবা নিষ্ঠুরতা প্রত্যক্ষ করে। নিজেদের মধ্যে ফিসফাস করে– এ কেমন স্বাধীনতা!

বালের স্বাধীনতা।

অন্য আরেকজন প্রতিবাদ করে- স্বাধীনতা অর্জন করাই আসল নয়, তাকে রক্ষা করতে হয়।

রক্ষার কথা শ্রবণ করে বিভীষণ ক্ষুব্ধ, হাতের বল্লম মাটিতে ছুঁড়ে হতাশা ব্যক্ত করে– ওই সশস্ত্র বাহিনীর বিরুদ্ধে কী খালি হাতে লড়াই করবো! অস্ত্র দাও। গোলাবারুদ দাও। কাউকে লাগবে না, ওই দস্যুদের বিরুদ্ধে আমি একাই লড়াই করবো, নিষ্ঠুর প্রতিশোধ নেবো।

ভোরের অন্ধকার দূর হলে, শস্যভূমিতে আলোকরেখা ছড়িয়ে পড়লে, মাটিতে পড়ে থাকা লাশ অথবা রক্তমাখা মানুষটিকে নিয়ে হঠাৎ-ই উত্তেজনার সৃষ্টি হয়। উত্তেজিত জনতার ভিতর থেকে কেউ একজন জানান দেয়– শিয়াল নয়, পড়ে থাকা মানুষটি বাঘের বাচ্চা; খাঁটি রয়েল বেঙ্গল টাইগার।

বাঘ তো বাঘই। জন্মেও যেমন বাঘ তেমন মরনেও।

রক্তমাখা লাশ কিঙবা বাঘের বাচ্চার মৃতদেহ দেখতে জেলেপল্লীর জনগণের উপস্থিতি ক্রমবর্ধমান। খবরটি আর নির্জন দ্বীপে সীমাবদ্ধ থাকে না, শহর-বন্দরে ছড়িয়ে পড়ে। বেঁচে থাকতে যাকে বা যাদের নিয়ে টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত হয়নি তাদের নিয়ে টিভি চ্যানেলসমূহ লাইভ অনুষ্ঠান আরম্ভ করে। হত্যাকান্ডের কারণ-ধরণ ও যৌক্তিকতা নিয়ে বিশ্লেষণ করে। দ্বীপবাসীর জীবনে নতুন আরেক সঙকট। ছেলেটি দেশপ্রেমিক আখ্যা পেলেও বিশেষ কিছু চ্যানেল তাকে চরমপন্থী হিসেবে চিহ্নিত করে। তাদের ধারণা– কোথাও কোনো সুবিধা করতে না পেরে ছেলেটি জেলেপল্লী টার্গেট করেছিল। সহজ-সরল জেলেদের মাছ লুন্ঠন করতে গিয়ে জনতার হাতে নিহত হয়েছে।

উপস্থাপক মেয়েটি স্বস্তির নিশ্বাস ফেলে দেশবাসীর উদ্দেশ্যে জানায়– যাক, প্রিয় মাতৃভূমি বড় বাঁচা বেঁচে গেল। এসব কুলাঙ্গারদের জন্যই বিদেশে আমাদের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হচ্ছিল।

হলুদ রঙের কতিপয় চ্যানেল অতিশয় তৎপর; তৎপরতার সাথে হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদঘাটনে দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্বরত সদস্যরাও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ– প্রতিপক্ষ যতোই শক্তিশালী হোক-না কেনো আমরা ভয় করি না, প্রাণের বিনিময়ে হলেও দেশবিরোধী অপতৎপরতা রুখে দাঁড়াবো; সমুলে ধ্বংস করবো তেরশত নদীতে বিছিয়ে রাখা জালের ফাঁদ।

ধ্বংসের সম্ভাবনা নিশ্চিত জেনে বিশেষ একশ্রেণীর মানুষ মুখ খোলে, নিজেদের তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা জনসমক্ষে বর্ণনা করে– নির্জন দ্বীপে মন্দ ছিলাম না আমরা। সন্তান-সন্ততি নিয়ে আরাম-আয়েশ দিনাতিপাত করতাম। কিন্তু ওইসব বাঘের বাচ্চা বন ছেড়ে লোকালয়ে প্রবেশ করলে জীবন বিপন্ন হয়ে ওঠে।

সুন্দরী এবঙ সুমিষ্ট কন্ঠের অধিকারিনী উপস্থাপক সংখ্যাতাত্বিক আলোচনার দ্বার উন্মোচন করে- ইয়ে মানে যা বলছিলাম আর কী!

বলুন! বলুন!

বলছিলাম, ওরা কী সফল হবে!

চায়ের কাপে চুমক দিতে-দিতে বিচিত্র অঙ্গভঙ্গির মাধ্যমে বাবা  ইমেরিটাস সঙবাদিক বলে– না না আমি আগেই বলেছি, ওরা কখনোই সফল হবে না; মানুষ সম্পর্কে ওদের নূন্যতম ধারনা নেই। মাত্র তো একটা গ্যাছে, বাকীদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

কোথায় যাবে ওরা!

সেটা তাদের ব্যাপার; আমি হলে মাদাগাস্কার কিঙবা আমাজানের জঙ্গলে পলায়ন করতাম।

দ্বীপবাসীর মধ্যে পলায়নপর মানসিকতা। টিভি ক্যামেরার সাংবাদিকদের মুখোমুখি হলে কৌশলে এড়িয়ে যায়। এমন ভাব করে যে, ভাজা মাছটি তারা উল্টিয়ে খেতে জানে না।

নাক বাড়িয়ে সিঁদর নিতে নারাজ তারা। বরঙ সাবধানে পা ফেলা উত্তম। মালোদের কতকজনের পা হড়কায়, উত্তমমধ্যম দিলে অকপটে স্বীকার করে- জ্বি, জ্বি ছ্যার বাঘের বাচ্চাকে আমরা চিনি ও জানি। রাত্রে আমরা একসাথেই ছিলাম।

জাঁদরেল অফিসারের কর্কশ কন্ঠস্বর– ছিলে মানে কী, হারামজাদা! কী কী অকাম করেছিস সেটা আগে বল।

দ্বীপের মহামান্য মেম্বর নরম স্বরে বলে– মুখ খোল বাবা গনেশ। ঠাকুর দয়া করলে এ যাত্রায় প্রাণে বাঁচবি। তা না হলে মায়ের ভোগে পাঠিয়ে দেব।

লাশের সৎকার বিষয়ে আলোচনা করার জন্য হেলিকপ্টারযোগে মহামহিম চেয়ারম্যান দৃশ্যপটে উপস্থিত হন। বিগত ডামি নির্বাচনে জনাব কেরামত আলী দ্বীপের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেছে। সেরের উপর বাটখারা হিসেবে লাভ করেছে একটি অত্যাধুনিক হেলিকপ্টার। না কোনো ব্যক্তিগত উপহার না, প্রতিবেশি দেশের সরকারের পক্ষ হতে রাষ্ট্রীয় উপহার। যুতসই উপহার বটে!  নির্বাচনপরবর্তী সময়ে কেরামত আলীর কর্মপরিধি বহুগুনে বৃদ্ধি পেয়েছে। অতিরিক্ত দায়িত্ব হিসেবে ভারতীয় কতিপয় দ্বীপবাসীদের সুযোগ-সুবিধা দেখতে হয়। এই দেখা বা ব্যস্ততা নিয়ে তিনি মোটেও বিচলিত নন বরঙ নিজেকে সৌভাগ্যবান মনে করেন। ভাগ্যের ছোঁয়ায় দ্বীপের বাসিন্দাদের বিপর্যয় রোধ করা না গেলেও দস্যুবৃত্তির মাধ্যমে ভারতীয়রা বহাল তবিয়তে আছে। কখনো-সখনো মাছের সঙ্গী করে স্থানীয় জেলেদের পণবন্দি করে নিয়ে যায়। মুক্তিপণ না পেলে হত্যা করে সমুদ্র লাশ ভাসিয়ে দেয়। এ-বিষয়ে বাসিন্দাদের মধ্যে চাপা অসন্তোষ। কিন্তু ভয়ে মুখ খুলতে পারে না। ডাঙার বাঘ জলে নামার আগঅব্দি চেয়ারম্যান ও মেম্বার ছিল সাক্ষাৎ মৃত্যুদূত। ঠুনকো বিষয়ে তারা জল্লাদের হাতে মৃত্যুর ফরমান ধরিয়ে দিত।

বাঘ কিঙবা বাঘের বাচ্চা নিয়ে উপর মহলের নির্দেশে রুদ্ধদ্বার বৈঠক আরম্ভ হয়। প্রতিবেশি রাষ্ট্রের দাবি লাশ তাদের হাতে তুলে দেওয়া হোক। ব্যবস্থা যা নেওয়ার তারাই নেবে। জলে বাস করে কুমিরের সাথে বিবাদে জড়ানোর কী ফল তা হাড়ে হাড়ে বুঝিয়ে দেবে। কিন্তু স্থানীয় জনগণ এসব বোঝাবুঝির মধ্যে নেই, তাদের যা জানা বা বোঝার বিবিসি কিঙবা আল-জাজিরার মাধ্যমে  বুঝে ফেলেছে। নিশ্চত হয়েছে, রক্তমাখা লাশ অন্য কারো নয় তাদের চলমান লড়াই-সঙগ্রামের অবিসংবাদিত নায়ক ফিনিক্স ভট্টাচার্যের! কিন্ত বুঝতে পারে না ওই লাশ এই নির্জন দ্বীপে কেনো! কারাই বা তাকে হত্যা করলো! হত্যার কারণ যে ভারত-বিরোধীতা এটা বুঝতে বেগ পেতে হয় না। দ্বীপের বাসিন্দা বিশেষত জেলেদের সাথে প্রতিবেশি ভারতের নাগরিকদের সাপেনেউলে সম্পর্ক। কোন কারণ ছাড়াই সীমান্তে পাখির মতো মানুষ হত্যা করে। আটক করে মুক্তিপণ আদায় করে। জলসীমা দখল করে নিয়মিত মাছ শিকার করে। এতসব অন্যায়ের বিরুদ্ধ নিয়মতান্ত্রিক প্রতিবাদ জানিয়েছে, কুটনৈতিক পন্থা অবলম্বন করেছে কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। বিষয়টি নিয়ে সরকারী দলসহ সমস্ত বিরোধী রাজনৈতিক দলের সাথে দফায়-দফায় বৈঠক করেছে। বিনিময়ে যা প্রাপ্ত তা কেবল শান্তনার অভয়বাণী। আকাশবাণী কোলকাতা তাদের বিশেষ বুলেটিনে ফলাও করে প্রচার করছে– ভারতবিরোধী বিদ্বেষ ছড়ানোর মূল হোতা কুখ্যাত ফিনিক্স ভট্টাচার্য্য মাছ লুণ্ঠন করতে গিয়ে অবশেষে জনতার হাতে প্রাণ হারিয়েছে। বিশেষ সঙবাদদাতার সূত্রমতে বেশ কিছুদিন যাবত মিস্টার ফিনিক্স অজ্ঞাত স্থান হতে ‘বয়কট ইন্ডিয়া’ কর্মসূচির নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন। ভারতীয় গোয়েন্দা সঙস্থা ‘র’- এর ভাষ্যমতে সর্বশেষ তার অবস্থান ছিল ইতালির পোভেগ্লিয়া দ্বীপে। কুখ্যাত ওই দস্যুর নিহত হওয়ার  খবর ছড়িয়ে পড়লে বঙ্গোপসাগর সঙলগ্ন দ্বীপাঞ্চলসহ সারা বঙ্গদেশে আনন্দের ফল্গুধারা প্রবাহিত হয়। আনন্দচিত্তে একে-অন্যকে মিষ্টি বিতরণ করান।

বুলেটিনের শেষাংশে পাঠিকা উল্লেখ করেন– ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষ শান্তিপূর্ণ ও গ্রহনযোগ্য জাতীয় নির্বাচনের পরে বিরোধী রাজনৈতিক দলের পরোক্ষ ইন্ধনে মিস্টার ফিনিক্স আন্দোলনের ক্যাম্পেইন পরিচালনা করে।

ম্লানমুখে শ্রীমান হারাধন হাসে। বুলেটিনের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে স্ত্রীকে অবহিত করে– বুঝলে গিন্নী, ভারত-নীতিতে বঙ্গদেশের সমস্ত রাজনৈতিক দলের অবস্থা প্রায় অভিন্ন। ক্ষমতার মসনদ পাকা করতে দাদাবাবুদের কেউ ঘাটাতে চায় না। অন্তত ফিনিক্সদা তা আন্দাজ করতে পেরেছিলেন। এজন্য কোন রাজনৈতিক দল বা গোষ্ঠী নয় সাধারন জনগনকে আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত করেছিলেন।

গিন্নিবউ বিষন্ন মুখে শংসয় প্রকাশ করেদাদা তো নেই, এখন কী হবে! আন্দোলনের হাল ধরবে কে!

গিন্নিবউ না, এ প্রশ্ন জনতার মুখে মুখে– একটা শুভ সম্ভাবনা কী তবে অঙ্কুরেই বিনষ্ট হবে!

না না কিছুতেই না; কেউ আমাদের দমিয়ে রাখতে পারবে না। বরঙ চলমান বয়কট আন্দোলন আরো বেগবান হবে।  দল-মত ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সমস্ত জনগন আমাদের সঙ্গে সম্পৃক্ত হবে। তাছাড়া এটি কোন রাজনৈতিক ইস্যু নয়, আত্মমর্যাদার সাথে বেঁচে থাকার প্রশ্ন।

প্রশ্নের উত্তর হিসেবে বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন কিঙবা একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ প্রাসঙ্গিক হিসেবে আলোচিত হয়। হারাধন ও হারাধনরা হাত গুটিয়ে বসে থাকে না, কাঁধের গামছা মাজায় জড়িয়ে খন্ড-খন্ড মিছিল সহকারে লাশের অভিমুখে রওনা হয়। নিপিড়ীত নির্যাতিত মানুষের নায়ক, ভারতীয় অবৈধ আগ্রাসন থেকে মুক্তির দিশারি ফিনিক্স ভট্টাচার্যের মৃত্যুতে অন্য সবার মতো হারাধনও ব্যথিত। ব্যথিতচিত্তে কতিপয় ভাবনায় ভাবিত হয়- ফিনিক্স ভট্টাচার্যের মরদেহ এই নির্জন দ্বীপে কেনো! এখানে কেমন করে এলো। মাছ লুন্ঠনের কাহিনিই বা কতটুকুন সত্য! সত্য-মিথ্যা যাচাই করতে পুলিশের আঁখড়া হতে তারা গনেশ ও তার দলবলকে ছিনতাই করে। বিক্ষুদ্ধ হয়ে জিজ্ঞেস করে- কীরে গনশা, রাত্রে তোরা ফিনিক্সদার সঙ্গেই ছিলি।

ওরা হাত জোড় করে অনুনয়-বিনয় করে– মিথ্যে দাদা, সব মিথ্যে। মেম্বার ও চেয়ারম্যান আমাদের দিয়ে মিথ্যে বলিয়েছে। নিরূপায় হয়ে মিথ্যে বলেছি আমরা।

দ্রোহের আগুনে যেনো ঘিঁ পড়ে।  লাঠির অগ্রভাগে মশাল প্রজ্বলিত করে আশেপাশের দ্বীপ হতে বিক্ষুব্ধ জনতা পঙ্গপালের মতো ছুঁটে আসে। লাইভ অনুষ্ঠান হঠাৎ-ই বন্ধ হয়ে যায়। সংবাদিকরা যে যার মতো নিরাপদ আশ্রয়ে সরে যায়। অত্যাধুনিক হেলিকপ্টারে চেপে কেউ কেউ ভিনদেশে উড়াল দেয়। লাশের কর্তৃক ছেড়ে দিয়ে প্রশাসনও নির্বিকার। নির্জন দ্বীপে কেবল শোকের মাতম। শোকগ্রস্ত জনতা শহীদ ফিনিক্স ভট্টাচার্যের মরদেহ লাল-সবুজের পতাকায় আবৃত করে, ফুলে-ফুলে সাজায়। কেউ কেউ লক্ষ করে তাঁর ঠোঁটের কোণে বিজয়ের হাসি। হাসিমাখা মুখচ্ছবি কিঙবা স্বপ্নচারী একজন মানুষকে কাঁধে তুলে ওরা মিছিল করে। সমস্ত দীপাঞ্চল প্রদক্ষিণ করে। তারপর জলের সান্নিধ্যে এসে দাঁড়ায়। সম্মুখে সমুদ্রের অথৈই জলরাশি। দূর-সমূদ্র হতে উত্থিত ঢেউ সাপের মতো ফনা তুলে আরো হিংস্র গতিতে বেলাভূমিতে আছড়ে পড়ে; ভয়ঙ্কর শব্দে জলেশ্বরীর মাটি খুবলে খুবলে খায় কেবল।

রচনাকাল- ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ খ্রি.

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu