আমার কি বাপু ছোট খাটো কাম কাজ করা যায়, একটা প্রেস্টিজ আছে তো! হাজার হোক পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে অনার্স, মাস্টার্স। মগজটা নিশ্চয়ই বিগড়ে গেল আপনার, নিজের মাথার দিব্যি দিয়ে বলছি, আমি কিন্তু সব কাজ করার ইচ্ছা রাখি, বা-পু। তো কিছু করি না ক্যান? খাঁটি প্রশ্ন। মাগার কারণটা খোলাসা করেই বলি, এতে অন্তত পাঠক আর কথকের মধ্যে ভুল বোঝাবুঝির অবসানটা ঘটুক। ধরুন, জমিতে যদি বেগার খাটি, কিংবা রিক্সা, গাড়ি, অথবা অন্যান্য যানবাহন চালাই, কন্সট্রাকশনের কাজ কারবার করি, অথবা আপনি যা ভাবছেন, সেটাই করি, এতে করে শ্রমের প্রতি আলাদা মাহাত্ম্য প্রকাশ পাবে ঠিকই, কিন্তু পরবর্তী পরিচিত প্রজন্ম পরবে বহুত মসীবতে। কিভাবে? আমি হলফ করে বলছি, মিঞাভাইরা কস্মিনকালেও তাদের বাচ্চাদের আর লেখাপড়া শেখাবে না। এক্সাম্পল হিসেবে আমায় দাঁড় করাবে, আর কনফিডেন্সের সাথে বলবে, এত বড় বড় ডিগ্রি পাইয়া এই অবস্থা, কী দরকার বাপু, এইসব পড়াশোনা করানোর, চল বাবা আমার সাথে মাঠে চল, চল বাবা দোকানে চল, চল বাবা বিড়ির কামে চল, চল বাবা, ইত্যাদি ইত্যাদি। রাস্তার কুকুরও এ ধরনের এক্সাম্পল হতে চাইবে বলে, মনে হয় না। আর আমি তো আশরাফুল মাখলুকাত। কে বাপু, এদের জ্ঞান, বিদ্যা, বুদ্ধি, এটিকেটের মাহাত্ম্য শেখায়। গালফোলা এসব উক্তি মেরে কী লাভ? ক্ষুধার রাজ্যে পৃথিবী গদ্যময়, পূর্ণিমা চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি, এখন ঠ্যালা সামলাও।
আমি কিন্তু গ্রামের পোলা। গ্রামের ভাষায় বললে, প্যাট আর চ্যাট যত মসীবতের আঁকর। ভদ্রতা আর বিনয়ের সঙ্গে বললে হয়তো মন্দ হতো না, মানে ফর্মালিটি আর কি! ওয়েট, ওয়েট, এক ঘটনা মাথার ভেতর ঘুরছে, জমাট বাঁধছে, এইতো। কী যেন বলছিলাম, ফরমালিটি। হ্যাঁ, শুনুন, অনার্স ২য় বর্ষে যখন পড়ি, তখন আমার ক্লাসমেট ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়, বহুত খরচাপাতির ব্যাপার, এ রোগ আবার অনিরাময়যোগ্য, বাংলাদেশের চেয়ে ভারতে ভালো থেরাপি পাওয়া যায়, যদি জীবনকে কিছুটা প্রলম্বিত করা যায়, অথবা ‘কমফোর্টেবল ডেথ’ একটা টার্ম বটে, যাই হোক, আমরা সব বন্ধুরা মিলে চারদিকে ধরনা দিয়ে কিছু অর্থ ম্যানেজ করার চেষ্টা চালাই, ইকোনোমিক্স ডিপার্টমেন্টের এক স্যারকে বলা হলো, আমাদের বন্ধুর ক্যান্সার, যদি কিছু অর্থ সহায়তা করতেন, তিনি ইংলিশে বেশ কিছুক্ষণ বকবক করলেন, যার অর্থ দাঁড়ায়, সবকিছুর একটা ফর্মালিটি আছে, এভাবে হুট করে মুখের কথার ওপর বেস করে তো অর্থ প্রোভাইড করা যায় না, অমুক অমুক সার্টিফিকেট নিয়ে আসুন, মহামান্য, জনাব, মহোদয়ের সুপারিশ, তারপর ইত্যাদি ইত্যাদি, বোঝা গেল, কথায় লজিক আছে। তো সেখান থেকে বেরিয়ে যে যা মুখে এলো বলে চললো অনর্গল, এক বান্ধবী কী বললো জানেন, বললো, আজরাইল যখন এই মাস্টারের জান কবজ করবে তখন ফর্মালিটি পাছা দিয়ে বেরিয়ে যাবে, শালা বাইঞ্চোদ।
মানিক বন্দ্যোপাধ্যায় জীবনকে যে দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতেন, মূলত লিখতেন বটে আমাদের ওপর করুণা করে, সেই দৃষ্টিভঙ্গি কিংবা অভিজ্ঞতার ভাগটুকু দেয়ার জন্য, নইলে সমগ্র জীবন খুঁড়ে হয়তো এক গণ্ডুস জল মিলতো কিনা সন্দেহ। কথাটিতে যদি অহমিকা প্রকাশ পায়, পাক। ঊনি কিন্তু আমার প্রিয় কথাসাহিত্যিকদের একজন, ‘চতুষ্কোণ’ পড়ে ভালোলাগা, ‘দিবারাত্রির কাব্য’ পড়ে ভালোবাসা, ‘পুতুলনাচের ইতিকথা’ পড়ে প্রণয়, তারপর সেই থেকে ধেই ধেই করে উপন্যাসে চষে বেরাই সমগ্র বিশ্বসাহিত্য। নালিশ হিসেবে শোনা যায়, ধৈর্য পান না অনেকেই উপন্যাস পড়ার, বিশাল কলেবর, তারপর কাহিনির ঘনঘটা, অজস্র চরিত্র, শব্দের কুহকজাল ভেদ করা কখনো কখনো কারো পক্ষে সহ্যসীমার বাইরে চলে যায়, অপরদিকে ফেসবুক আর ইউটিউবে ডুবে থাকা মূদ্রিত কাগজ পাঠের চেয়ে ঢের সহজ, তা ধিন ধিন তা করে সেটাই চলছে ভদ্র মনুষ্য সমাজে, তো সেটাই চলুক। ট্রাকের পেছনে যেমন লেখা থাকে একশ গজ দূরে থাকুন, আমি কিন্তু বাপু ফেসবুক ইউটিউব থেকে একশ গজ দূরে দূরে চলি, আমি কিছুটা সেকেলে কিনা! বহুক্ষণ থেকে তো ‘আমি’ ‘আমি’ করে বহুত প্যাঁকপ্যাঁক করছি, আসল কথা কি জানেন, নিজের কথা কাউকে বললে বুকের ভেতরটা হালকা হয়ে যায়, আমার বুকের ভেতর হালকা হোক সেটা আমার একান্ত কাম্য হলেও আপনারা সেটি পজিটিভ সেন্সে নাও নিতে পারেন। স্রেফ যদি মুখের ওপর বলে দ্যান, তুমি কোন দেশি নবাব যে তোমার এই আমি’র আজাইরা প্যাঁচাল শুনবো।
দূর নক্ষত্রের বলয় থেকে পূর্ণিমা তিথি পৃথিবীর উঠানে ফেলে নির্মল আলো। আর সেই আলোয় স্পষ্ট ধরা পড়ে তিস্তায় ভেসে আসা লাশ। চিত্রশিল্পী এস. এম. সুলতানের মতো লম্বা চুল, ফণীমনসার ঝোপের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চাঁদের মতো অস্বচ্ছ মুখ, সেই লাশ হতে পারে পুরুষের, নারীর, অথবা হতে পারে অন্য কোনো গ্রহের। সেটি আদৌ লাশ কিনা সে ব্যাপারেও সন্দেহ থেকে যায়। কৌতূহল মানুষের আজন্ম সঙ্গী। হয়তো সেই কৌতূহলবশে কিংবা নিজের অজ্ঞাতসারে, শাকের আলী অন্ধকারের ভেতর ক্রমশ লাশ অথবা ঐ জীবিত আগন্তুক অভিমুখে যাত্রা শুরু করে, নৌকা বায়। নৌকা চালনায় সুস্পষ্ট ধরা পরে শাকের আলীর অপটুতার ছাপ। রোজ না হোক, অন্তত দুদিন অন্তর অন্তর, তিস্তার শাখা নদী খারুভাজে নৌকা বেয়ে জাল ফেলে সে মাছ ধরার প্রচেষ্টা চালায়। অথবা মাছ ধরা আদৌ কোনো নেশা নয়, বরং রাতের অন্ধকারে একাকীত্ব নির্জন মুহুর্তে প্রকৃতির সান্নিধ্যে আসার সুযোগ সে হাতছাড়া করতে চায় না। শাকের আলীর নৌকা লাশ কিংবা জীবিত আগন্তুকের কাছে গিয়ে থামে। দূর থেকে শেয়াল কুকুরের ডাক ভেসে আসে। শাকের আলীর দৃষ্টিগোচর হয়, সেই লাশ কিংবা জীবিত আগন্তুক মূলত শ্যামলা রঙের মায়াবী চেহারার একটি মেয়ে। সে পাঁজাকোলা করে মেয়েটিকে নৌকায় উঠায়। প্রথমত স্পর্শ করবে কিনা ভেবে পায় না শাকের, কিন্তু নিজের হৃদয় অভ্যন্তরে শুনতে পায়, প্রাণ বাঁচানো ফরজ এবং আজ প্রথম সে একটি নারী শরীর স্পর্শ করে, আর রক্তের ভেতর অনুভব করে এক নিবিড় উষ্ণতা। যে উষ্ণতার কোনো রঙ নেই, বর্ণ নেই, গন্ধ নেই, আছে এক অনাবিল স্বাদ। মেয়েটির শরীর থেকে শাড়ির আঁচল খসে পড়া মাত্র দৃষ্টিগোচর হয় স্ফীত যুগল স্তন। উন্মুক্ত আকাশের নিচে সে নারীর উন্মুক্ত বুক দেখতে পায়। শাকের আলীর উন্মুক্ত স্তনের দিকে দৃষ্টি মেলে ধরতে ভালো লাগে। শাকের আলী চন্দ্রিমার বুক চিরে ভেসে আসা মায়াবী ভৌতিক আলোয় মেয়েটির স্তন, গলা, চিবুক, মুখ, মুদিত চোখ, আর চিত্রশিল্পী এস. এম. সুলতানের মতো চুলে নিষ্পলক তাকিয়ে থাকে।
শাকের আলী মেয়েটির ঠোঁটে চুমু দেয়ার বাসনা নিজের প্রাণের ভেতর অনুভব করে। ঠোঁট সে বাড়ায় ঠিকই, কিন্তু ফুটফুটে সকালের আলোয় গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তি কুদ্দুস মণ্ডল তার বৌকে নিয়ে রাস্তা দিয়ে হেঁটে আসে, এই দৃশ্য দেখার পর চুমু দেয়া থেকে নিজেকে ক্ষান্ত দ্যায় শাকের। এত ভোরে কোথা থেকে ফিরলো কুদ্দুস মণ্ডল? নৌকায় শ্যামলা রঙের মেয়েটির শাড়ির আঁচল ঠিক করে দিয়ে, যেন কিছুই ঘটে নি এমন ভাব নিয়ে শাকের ৫/৭ টি রুই, ২/৩ টা পাঙ্গাস মাছ নিয়ে সটান কুদ্দুস মণ্ডলের সামনে এসে হাজির হয়, স্লামালেকুম চাচা। কুদ্দুস মণ্ডল থতমত খেয়ে বলে, অলাইকুম সালাম, কী ব্যাপার শাকের, এত ভোরে? যে প্রশ্ন উপেক্ষা করার জন্য কুদ্দুস মণ্ডলের এত আয়োজন, সেই প্রশ্নটি কুদ্দুস মণ্ডলকে শুনতে হয়, কই গেছিলেন চাচা? কী বলবে কুদ্দুস মণ্ডল ভেবে পায় না। কেননা কুদ্দুস মণ্ডলের ছেলে-মেয়ের বিয়ে হয় না, তাই শেষ রাতে কবিরাজ হায়াৎ খিজিরের কাছে গিয়েছিল কুদ্দুস মণ্ডল। কাজেই মিথ্যের আশ্রয়ে গোঁজামিল দিয়ে বলে, এই হাঁটতে, সকালে হাঁটলে মন প্রফুল্ল থাকে, তো এতদিন পর আজ তোমার চাচাকে মাছ দেয়ার ফুল ফোটলো তাহলে, হ্যাঁ? জবাব দ্যায় শাকের আলী, চাচা, মাছের পোনা এখনো ছোট, সেখান থেকে তবু এ কয়টা মাছ (সংলাপটি অসম্পূর্ণ রেখে) মাছ কয়টি কুদ্দুস মণ্ডলের বাসায় পৌঁছে দিয়ে শাকের আলী নিজের টিনশেড বিশাল বারান্দাযুক্ত ঘরে যায়। শ্যামলা রঙের মেয়েটির কথা মনে পড়ে, কিন্তু সে ক্লান্ত শরীর নিয়ে আর ওঠে না। অঘোরে ঘুমায়। ঐ লাশ কিংবা জীবিত আগন্তুক শ্যামলা রঙের মেয়েটি নৌকায় পঁচুক, আর খাক শেয়াল টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যাক, তাতে যেন তার কিচ্ছুটি এসে যায় না।
বিকেলে হাঁটা আমাদের হয়ে উঠেছে এক নিত্যদিনের অভ্যেস। আমাদের বলতে আমি আর মাহির। আমরা চাচাতো ভাই, বয়সে চার পাঁচ বছরের ব্যবধান। কিন্তু অদ্ভুতভাবে মিলে যায় দুজনের চিন্তাচ্ছন্ন মন এবং মনন। সমগ্র পথ জুড়ে সাহিত্য নিয়ে কথাবার্তা হয় অগাধ। চোখের পরতে পরতে বদলে যায় দৃশ্যপট। দিগন্ত বিস্তৃত ধানক্ষেত, অসীম নীলিমা, ঘাস, গ্রামীণ ঘরবাড়ি, দোকানপাট, জটলা পাকানো মানুষ, উলঙ্গ শিশু, চেনা অচেনা অসংখ্য বৃক্ষ, পাখি, কাশ, মসজিদ, উলুধ্বনি, কখনো আজানের স্বর, কখনো মন্দির আমাদের অভিজ্ঞতাকে সচেতন অথবা অসচেতনভাবে সমৃদ্ধ করে চলে নিরন্তর। হিটলারের জীবনে দারিদ্রতার ঘ্রাণ, মার্ক্সিজম, সাঁত্রের অস্তিত্ববাদ দর্শন, কাফকা, প্রথম বিশ্বযুদ্ধ, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ, ফরাসি বিপ্লবে গিলোটিনের প্রয়োগ, রুশ বিপ্লব, হোমার, আপামর বাঙলা সাহিত্যের রূপরেখায় সৈয়দ শামসুল হক, আহমদ ছফা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শামসুর রাহমান, সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ হয়ে ওঠে আমাদের প্রসঙ্গ। আর আমরা ঘ্রাণ নিতে শুরু করি মগজে চিন্তার স্রোতে ফুটন্ত শাপলার। হাঁটি। খোলা আকাশের নিচে গ্রামীণ সবুজ বাতাসের শ্বাস টেনে টেনে এগিয়ে চলি পথ থেকে নতুন পথে, অচেনা গন্তব্যে। এভাবে হাঁটতে হাঁটতে আমরা নতুন এক গ্রামে এসে পৌঁছাই। ক্লান্ত পরিশ্রান্ত জিরোবার সাধ পেতে বসে পড়ি ভাঙা পুলে। তাকিয়ে দেখি দিগন্ত বিস্তৃত বাংলার সৌন্দর্যের আঁচল। বাংলার মাটি। ট্রেন চলার শব্দ কানে এসে আমাদের বিভ্রান্ত করে, কিংবা শব্দের কম্পন ভেসে এসে আমাদের চেতনাকে জানায় স্বাগতম। নিকটবর্তী অতীতে ঘটে যাওয়া স্মৃতি রোমন্থনে বাক্য ব্যয় করে মাহির। বাক্য প্রয়োগে মোহাচ্ছন্ন সরব অষ্টপ্রহর, আর চিন্তায় নিরবচ্ছিন্ন ভালোলাগার নিপুণ আমেজ। সেদিনটি ছিল শরতের নির্মল দুপুর, তৃতীয় শ্রেণিতে অধয়নরত মাহির সরকারী কৃমির ওষুধ খেয়ে যথারীতি টিফিন পিরিয়ডে খেলাধূলায় মগ্ন। হঠাৎ পাছায় কৃমির উপস্থিতি টের পেয়ে সুতি কাপড় দিয়ে গড়া হাফ প্যাণ্টের ভেতর হাতের অনুঃপ্রবেশ ঘটিয়ে কৃমির আগাল ধরে ধীরে ধীরে টান দ্যায়। অস্বস্তি, নতুন উন্মাদনা, আর কৌতূহলের সংমিশ্রণ, সব মিলিয়ে মাহির সিদ্ধান্তে উপনীত হতে পারে না যে, মূলত সে এরকম পরিস্থিতিতে পায়খানায় যাবে কিনা। কৃমিটি যখন পূর্ণাঙ্গ শরীর নিয়ে বের হতে উদ্যত তখন টিফিন পিরিয়ডের সময় পেরিয়ে যায়। ছোট্ট বাঁশঝাড় থেকে, মাঠ থেকে, টয়লেট থেকে সবাই ছোটে ক্লাসের উদ্দেশ্যে। অগত্যা মাহিরকেও ক্লাসে যেতে হয়। ক্লাসের ১ম সারির শিক্ষার্থী মাহির। প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন মাহিরকে সামনে ডাকে এবং ব্লাকবোর্ডে অঙ্ক করার নির্দেশ প্রদান করে, চেয়ারে মাথা কাৎ করে ঝিমোয়। মাহিরের পাছার কৃমি তখন আউট অফ কন্ট্রোল। সে পাছা দেয়ালে ঠেস দিয়ে বাঁশের কাবাড়ি দিয়ে অঙ্ক বুঝাতে মগ্ন, আর কৃমি কর্তৃক প্রদত্ত সমস্যা থেকে সমাধানের পথ খুঁজে পেতে চিন্তাচ্ছন্ন। অবশ্য একসময় সে সমাধান পেয়ে যায়। সে শিক্ষকের পুরো অথোরিটি নিজের মধ্যে এনে আকালু নামের এক ছেলেকে দাঁড় করায় এবং বলে, কি আকালু অঙ্ক বুঝেছো? আকালু বলে, জ্বী। সামনে এসে বুঝাতে পারবে? আকালু জবাব দ্যায়, একদম। আকালু যখন অঙ্ক বুঝাতে ব্যস্ত, সবাই ক্লাসে যখন আকণ্ঠ ডুবে, প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন যখন গভীর ঘুমে অচেতন, ঠিক কাঙ্ক্ষিত সেই মুহুর্তে মাহির দেয়াল থেকে সরে দাঁড়ায় এবং কৃমি পেটের গহ্বর থেকে নরম পাছার পথ অতিক্রম করে নির্গত হয়। ঘটনাটি সংঘটিত হওয়ার সাথে সাথে সমগ্র ক্লাসে শোরগোল পড়ে যায়। প্রধান শিক্ষক ঘুম থেকে তড়িঘড়ি করে উঠে, আর মাহির সেই সুযোগে কৃমির দিকে নির্দেশ করে স্যারকে বলে, দ্যাখেন স্যার, আকালুর কারবার দ্যাখেন। আকালু যথাসম্ভব মিথ্যে অভিযোগ অস্বীকার করার চেষ্টা চালায়। তখন প্রধান শিক্ষক মোজাফফর হোসেন বাঁশের কাবাড়ি দিয়ে কৃমিটি তুলে জানলার বাইরে ফেলে দ্যায়। মাহির এই ঘটনাটি আমায় সবিস্তারে শোনানোর পর এখনও খটখট করে হাসে।
বাংলার উর্বর পলিমাটি, মাটির গভীর থেকে টেনে নেয়া রস, রসের ভেতর শুদ্ধতার প্রতিশ্রুতি, একবার নয়, দুই বার নয়, কিংবা নয় তৃতীয়বার, বরং বারবার এই মাটির কাছে ফিরে আসে জল, আষাঢ়ের জল, শ্রাবণের জল, হাঁটু সমান জল জমে, গলা সমান জল জমে, একসময় বন্যার তোড়ে ভেসে যায় মানুষের ঘর, হাড়ি পাতিল, স্বপ্ন, সাধ, আশা, আকাঙ্ক্ষা, গোবর, গবাদি পশু, এমনকি পায়ের স্যাণ্ডেল, হাঁস মুরগীর মল, মানুষের গু। মানুষ তবু বাঁচে, এতসব দুর্ভোগের মধ্য দিয়ে সংগ্রাম করে বাঁচে, দারিদ্রের মধ্য দিয়ে সংগোপনে প্রাণ ধারণ করে, বাঁচে! কুসংস্কারের মধ্য দিয়ে শ্বাস টেনে বাঁচে, এই যে বাঁচা, অনবদ্য না হোক তবু তো বাঁচা, শোষণ প্রক্রিয়ার ভেতর প্রবিষ্ট হয়ে বাঁচা, আহা, মানুষের কিমশ্চার্য বাঁচা। পৃথিবীতে প্রায় সাড়ে সাতশো কোটি মানুষের বসবাস। বৈচিত্র্যময় পৃথিবীতে একেকজন মানুষ, একেকজন আলাদা ইউনিক। বায়োমেট্রিক্স পদ্ধতিতে চোখের রেটিনা, হ্যাণ্ড জিওমেট্রি আলাদা। মানুষে মানুষে এই যে প্রভেদ, চিন্তায়, আচরণে, ভাষায়, সংস্কৃতিতে, আসলে কি মাহির, এইসব খেটে খাওয়া মানুষদের জীবন আকাঙ্ক্ষা বলতে রাত্রি হলে এক বিকৃত সহবাস, আর দিনের আলোয় দুমুঠো অন্ন সংস্থানের জন্য হাড় ভাঙা পরিশ্রম। কেন জন্মেছি, কে আমি, স্পিরিচুয়াল পাওয়ার, আত্মা, অমরত্ব, ঐশ্বরিক চিন্তা স্রেফ অবান্তর ঠেকে তাদের কাছে। এরাও তো এই বাংলার মানুষ, যদিও তারা পরে আছে পশুস্তরে, কিন্তু মানুষ তো বটে।
আসলে কি দাদা, দু একশো জন মানুষ পৃথিবীকে নিয়ে ভেবেছে। মূলত এই ভাবনাগুলো আমরা ভাবছি। আধুনিকতা বলো, মানবিকতা বলো, বিজ্ঞানের জয় জয়গান বলো, সাহিত্যের কথা বলো, এই দু একশো জন মানুষের চিন্তার ফসল আসলে। দু একশো জনের মধ্যে কিন্তু প্লেটো, সক্রেটিস, টলস্তয়, আইনস্টাইন, মার্ক্স, কাফকা পরেন। আর এই দু একশো জনের বাইরে কোটি কোটি মানুষ সব সাধারণ কাতারের।
মাহিরের কথা শুনে আমার বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘আইনস্টাইন ও ইন্দুবালা’ গল্পের কথা মনে পড়ে, আমি মাহিরকে গল্পটি পড়ার জন্য সাজেস্ট করি, সে কাহিনী শুনতে চাইলে, আমি তাকে কাহিনি শোনাই না, বরং বলি, কাহিনি বললে, মজাটাই নষ্ট হয়ে যাবে, পড়ে নিস ভালো লাগবে।
রবীন্দ্র সাহিত্যে বৃষ্টি পেয়েছে এক আলাদা দ্যোতনা, স্বাদ, বৈচিত্র্য। সেই বৃষ্টি এসে আমাদের হতচকিত করে। আমরা পুল ছেড়ে দৌঁড়াই, আশ্রয় খুঁজে পেতে আমাদের বিলম্ব হয় না। পাশেই একটি টিনশেড বিশাল খোলামেলা বারান্দাযুক্ত ঘর। আমরা সেখানে প্রবেশ করি এবং এক নতুন অধ্যায়ের সাক্ষী হয়ে উঠি। মানুষ আসে দূর থেকে, মানুষ আসে নিকট থেকে, মানুষে মানুষ উপচে পরে টিনশেড খোলামেলা বিশাল বারান্দাযুক্ত ঘরে। আমরা দুজন দুজনের চোখের দিকে তাকিয়ে সিদ্ধান্তে উপনীত হই, হয়তো এই বৃষ্টির বড় বড় ফোঁটা, তুমুল ঝড় থেকে ক্ষণিকের জন্য মানুষ পেতে চায় আশ্রয়, তাই মানুষ আসে গঞ্জ থেকে, মানুষ আসে গ্রাম থেকে, মানুষ আসে পায়ে হেঁটে। কিন্তু এত মানুষ, মনে হয় আজ ঐতিহাসিক ৭-ই মার্চ, বঙ্গবন্ধুর ভাষণ শোনার অধীর অপেক্ষমাণ নীরবতা।
কুত্তার জিভ ঘাউস ঘাউস করে লুটেপুটে নেয় সদ্য একদম টাটকা মনুষ্য বাচ্চার গু, স্বাদ পেয়েছে নিশ্চয়ই, কিন্তু হয়তো সাধ মেটেনি এবং পুনরায় গুয়ের সত্ত্বাধিকারী পেয়ারার গাছ ধরে দাঁড়িয়ে থাকা শামসুল মিয়ার ২ বছরের পুত্র খোকার পাছা চেটেপুটে পরিতৃপ্তির ঢেকুর তুলতে তুলতে যখন বাদামী রঙের কুত্তাটি সেই স্থান ত্যাগ করে, তখন সেই দৃশ্য বয়ান করে হাসি, হাসতে হাসতে মাটিতে গড়ায়, কিন্তু চিন্তায় পরে খোকার আম্মা ফাতেমা তুঝ জোহরা, ইশ, খোকার যদি বড় ধরনের কোনো অসুখ হয়, আর যাই হোক কুকুরের বিষাক্ত লালা, হেলনাফেলনা নয়, সটান সে কবিরাজ হায়াৎ খিজিরের কাছে যাওয়ার জন্য মনস্থির করে এবং ফলশ্রুতিতে বৃষ্টি বাদলের দিনে সে ও আশ্রয় গুঁজে নেয় এই টিনশেড বারান্দাযুক্ত ঘরে। আমি ফাতেমা তুঝ জোহরাকে জিজ্ঞেস করি, সত্যিই যদি মনের ভিতর সন্দেহ থেকে থাকে, তাইলে ডাক্তার ভি দেখাইবার পারেন, আপনি কবিরাজ দেখান ক্যালায়? সে বাক্যের অর্থের ওপর গুরুত্ব না দিয়ে বরং বাক্য কাঠামোর ওপর জোর দ্যায় এবং বলে, কোন ভাষায় কথা কও বাবা, তোমার বাড়ি কই? লে শালা, আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের উপন্যাসের ঘোর দেখি মাথার ভেতর টোঁ টোঁ করে ঘুরছে। পুনরায় বলি, ডাক্তার দেখিয়ে একটা পরীক্ষা তো করাতে পারতেন। জবাব দ্যায় ফাতেমা তুঝ জোহরা, দীর্ঘ বারো বছর বাচ্চার মা হতে পারিনি, কত চিকিৎসাপাতি করলাম, শেষে আল্লার রহমত আর কবিরাজের ওসিলায় খোকাকে পেটে ধরছি, তুমি এইসব বুঝবে না বাবা।
এক কিশোর ছেলের চেহারায় ফুটে ওঠে আনন্দের প্রহর ঘনিয়ে ওঠা নির্মল সকাল। বাকি সকলের চোখে মুখে শোকের ছায়া। বৃষ্টিতে ভিজে আসে অটো, অটোর ভেতর এই গ্রহের শ্রেষ্ঠ মানুষেরা, হু হু করে কাঁদতে কাঁদতে এসে ঢুকে পরে টিনশেড খোলামেলা বিশাল বারান্দাযুক্ত ঘরে। কিশোরটিকে জিজ্ঞেস করি, কোথা থেকে আসছে এত মানুষ, মানুষের চোখে মুখে কেন শোকের ছাপ, আর ঐ মহিলা অমন ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে কেন? কিশোরটি জবাব দ্যায়, এক যুবক স্ট্রোক করে মারা গেছে। যুবকের মৃত্যু সংবাদ শুনে বুকের ভেতরটা কেমন হাহাকার করে ওঠে। আমি তো সেই যুবককে চিনি না, কথাবার্তা হয়নি কখনো, জানি না পরিচয়, তবু কেন শোকাচ্ছন্ন হয়ে যাচ্ছি, আমিও তো এক যুবক, আরেক যুবকের মৃত্যুতে কেন বিচলিত হয়ে যাচ্ছি, বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে আছি, কখন বৃষ্টি থামবে, কখন এই লাশটির দাফন কার্য সমাধা হবে? মাহিরকে বলি, ফেরার পথে শুধু একবার লাশটির দিকে তাকাবো, যেভাবে সৈয়দ শামসুল হক তাকায় শামসুর রাহমানের মৃত লাশের দিকে, মুখের দিকে মুখ রেখে। মাহির রাজী হয় না, হৃদয়ের প্রকোষ্ঠে জমে থাকা ভয় তাকে বাঁধা দ্যায়, আমিও লাশ দেখা থেকে নিজেকে নিরস্ত করি। মাহিরকে বলি, আমরা এক পরিস্থিতির স্বীকার। মাহির বলে, মাহফুজ ভাই এটাও এক নতুন অভিজ্ঞতা, কাজে দেবে, লেখালেখিতে কাজে দেবে।
কিশোরটিকে জিজ্ঞেস করি, এখানে কে থাকে? কিশোরটি বলে, চেয়ারে বসে থাকা চিন্তামগ্ন ঐ মানুষ, যার নাম শাকের আলী। মাহির শাকের আলীর দিকে তাকায় এবং বলে, লোকটি কি এখানে একাই থাকে, বউ বাচ্চা নাই? কিশোরটি বলে, বউ নাই, তবে বউ বোধহয় জুটলো কপালে। আমি বলি, মানে? কিশোরটি বলে, আজ সকালে এক মেয়ে ভেজা শরীর নিয়ে ঘরের মধ্যে এসে ঘুমায়, কেলেঙ্কারির একশেষ, কুদ্দুস মণ্ডল দাদার উঠানে আজ বিচার। আমি বলি, ও আচ্ছা। মাহির জিগ্যেস করে, কী করেন ইনি? চাপল্যমেশা কণ্ঠস্বরে কিশোরটি বলে, ঊনি পেছনে এক বিশাল নদী দেখাশোনা করেন, নদীর নাম খারুভাজ নদী।
বৃষ্টি থামলে আমরা গ্রামে ফিরে আসি, যুবকের দাফন কিংবা শাকের আলী আর যুবতীর বিচারের অপেক্ষায় থাকি না। আমি সটান ঘরে ফিরে ডায়েরিটা টেনে নিয়ে মধ্যম পুরুষে লেখা শুরু করি, ‘তুমি বসে খেলছো লুডু, তোমার বয়স আমি আন্দাজ করছি, বড়জোর সতেরোর কাছাকাছি, এক হাঁটু ভাজ করে বেঞ্চের ওপর বসে আছো, আমি বসে আছি কক্ষে, সোফায়। তুমি আমায় চেনো না, জানো না আমার নাম ধাম, পরিচয়। সাদা পাজামা, আর শরীরে সোনালী সুন্দর ছোপ ছোপ আঁকা বর্ণালী জামা, মাথায় ওড়না, বেরিয়ে পড়ছে কিছু চুল, অপরূপ। তোমার হাত খেলায় মগ্ন, তুমি আকণ্ঠ তন্ময় ডুবে আছো খেলায়। কী অদ্ভুত, তুমি একটি বারও আমার দিকে আড় চোখে তাকাচ্ছো না, এর প্রমাণ হিসেবে বলা যায় তুমি আমার প্রেমে পড়োনি, ভবিষ্যতেও পড়বে বলে মনে হয় না, কেননা আমাদের প্রথম দর্শন হয়ে গ্যাছে, আর আমি প্রথম দেখা প্রেমে পড়ায় আস্থা রাখি। চিত্রশিল্পী হলে আমি তোমায় ক্যানভাসে অপরূপ আঁকতাম, এখন হৃদয়ের সন্নিকটে তোমায় অনুভব করছি। যে ঘরে আমি অবস্থান করি, বর্ণনা করা যাক সেই ঘর, শাল কাঠ দিয়ে নির্মাণ করা সোফা, হাঁটু সমান টেবিল, শরীফ বীজগণিতিয় রাশির সমাধান করছে, কেননা কাল তার ক্লাস টেস্ট। বিদ্যুৎ চলে গেলে চার্জারের সুব্যবস্থা। বৃষ্টি বাদলের দিন, ঘরের ভেতর তোমার সেমিজ, পাজামা, ওড়না ফ্যানের বাতাসে শুকাচ্ছে। বিশেষ করে এই সেমিজ, যেটি তুমি জামার ভেতর পরিধান করো, আর তোমার নরম লাজুক স্ফীত স্তন আবৃত রাখার প্রয়াস চালাও, সেই যুগল স্তন আমি কল্পনায় যেন পিকাসোর আঁকা ছবিতে স্পষ্ট দেখতে পাই। কলেজ থেকে ফিরে ব্যাগটি তুমি রেখে দিয়েছো টেবিলে, পাশে প্লাষ্টিকের দুইটি চেয়ার, একটি হলুদ কালো রঙের ছাতা, একটি আলমারী, দেয়ালে একটি ঘড়ি, সময় বিকাল ৪ টা ৪৫ মিনিট, আমি শরীফকে আর ১৫/২০ মিনিট পড়িয়ে চলে যাবো। তুমি একটি ছক্কার জন্য ব্যাকুল হয়ে খেলছো, সেসময় মাথা থেকে ওড়নাটি খসে পড়ে, আর আমি অবলোকন করি তোমার সৌন্দর্য। পাশের কক্ষ থেকে ভেসে আসে টেলিভিশনের শব্দ, কে যেন নাটক দেখছে। এইতো তোমার আরেক সৌন্দর্য, তুমি বেইমান বলে গালি দিচ্ছো তোমার পার্টনারকে, খেলাটি যেন ভেস্তে না যায়, মনে মনে এই প্রার্থনা করি। আমার বেশ ভালো লাগছে, কেননা পুনরায় তোমরা খেলা শুরু করলে। এই ঘরেই তুমি থাকো, যে ঘরে আমি শরীফকে পড়াই, হঠাৎ দৃষ্টিগোচর হলো বিন্যস্ত বিছানায় একটি নরম তুলতুলে কোলবালিশ, রাতে যখন ঘুমাও, কোল বালিশ টেনে নিয়ে কি যাকে হৃদয় দিয়েছো তাকে ভেবে কাল্পনিক আলাপে মগ্ন হও? হও নিশ্চয়ই, আর অনাবিল পুলক অনুভব করে একসময় স্বপ্ন দেখো মিলনের। শরীফের অঙ্ক দেখা শেষে আবার যখন তোমার দিকে তাকাই, দেখি ওড়নাটি স্বস্থানে ফিরে গ্যাছে, যেন বাসর শয্যায় বসে থাকা বধূর মত লজ্জায় টেনে নিলে ঘোমটা। কক্ষে একটি আয়না, কলেজ যাওয়ার প্রারম্ভে তুমি নিশ্চয়ই সেখানে দাঁড়াও, ঠোঁটের নিচের তিলটির দিকে তাকিয়ে থাকো কিছুক্ষণ, একান্ত একাগ্রমনে কী জানি কী ভাবো, তারপর নিজের মনেই হাসো, হাসলে তোমার হৃদয়ে টোল পড়ে, সেই দৃশ্য আমার জানা, কেননা আমি কল্পনা করতে পছন্দ করি। অথচ আর কখনো তোমায় আমি দেখি না, কারণ শরীফ নানুবাড়িতে শেষ ঐদিন প্রাইভেট পড়ে তারপর নিজ বাসভূমে চলে যায় এবং আমি তাকে এখন সেখানে পড়াই। শরীফকে কখনো জিগ্যেস করিনি তোমার নাম, তোমার যাপিত জীবনের প্রাক ইতিহাস, কেননা কবিগুরুর ভাষায়, অর্ধেক মানবী তুমি, অর্ধেক কল্পনা। তুমি যেন এক স্বতন্ত্র দ্বীপ, অধিষ্ঠিত অজ্ঞাতদেবী আমার হৃদয়ে।’
মধ্যম পুরুষে লেখাটি কমপ্লিট করে আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘চিলেকোঠার সেপাই’ বইটা টেনে নিই, পাতা ওল্টাই, পড়া শুরু করি– ‘তোমার রঞ্জু পড়ি রইলো কোন বিদেশ বিভুঁয়ে, একবার চোখের দেখাটাও দেখতি পাল্লে নাগো!’ কুয়োতলায় দাঁড়িয়ে ওসমান একটার পর একটা লেবুপাতা ছেঁড়ে আর মায়ের বিলাপ শোনে। তিনটে আঙুলে লেবুপাতা চটকাতে চটকাতে—–