দর্পণ-এর গল্পবিষয়ক বিশেষ সংখ্যা ‘শিশিরভেজা গল্প’-তে প্রকাশিত
কবীর রানা
কী কী অতিরিক্ত থাকলে কিংবা কী কী কিছুই না থাকলে সেগুলো ভাড়া দেয়া যায়, ভাড়া নেয়া যায়? এটা একটা ভাড়া করা প্রশ্ন এবং এর থাকে ভাড়া করা উত্তর। ভাড়া করা প্রশ্ন জলে ভেসে যায়, ভাড়া করা উত্তর জলে ভেসে আসে। এই যে জল, জল থাকে জলে, জল থাকে স্থলে, জল থাকে বাতাসে। বলি তবে এবার, শুনি তবে এবার জানা অজানা ভাড়া করা প্রশ্ন এবং ভাড়া করা উত্তর। এইসব প্রশ্ন মুখে নিয়ে পাখি এসেছে, এইসব উত্তর মুখে নিয়ে পাখি এসেছে। পাখিরা ভেসে আছে জলে, স্থলে, আকাশে। পরিযায়ী পাখি। ভাড়া দেয়া পাখি, ভাড়া নেয়া পাখি। তারা উড়ে যাবে চলে, প্রশ্ন ছেড়ে উত্তর ছেড়ে।
মাঠের শস্যের চেয়ে, মানুষের শস্যের চেয়ে, মাঠ ও মানুষের কীটপতঙ্গ অতিরিক্ত হয়ে গেলে কীটপতঙ্গ ভাড়া দেয়া যায়। তবে কীটপতঙ্গ ভাড়া নেয়া লোকজন না পাওয়া গেলে অতিরিক্ত কীটপতঙ্গ নির্মূলের চিন্তা আসে। তারপর তো আবিষ্কৃত হয়েছে কীটনাশক। কত রকম যে কীটনাশক আবিষ্কার হয় তার ইয়ত্তা কোথায়। শস্যের সকল শিকড়ে কীটনাশক, মানুষের সকল শিকড়ে কীটনাশক। লিখিত অলিখিত যুদ্ধ কীট এর বিরুদ্ধে কীটনাশকের চলতে থাকলে জন্ম হতে থাকে ,আবিষ্কার হতে থাকে নানারূপ কীটনাশকের ও কীটতত্ত্ববিদের । কীটতত্ত্ববিদেরা নিজেদের ভেতর পরিচয় নিয়ে লড়াই শুরু করে নিজেদেরকে তারা অভিহিত করে বিষতত্ত্ববিদ, পুরানতত্ত্ববিদ, ধর্মতত্ত্ববিদ, বিজ্ঞানতত্ত্ববিদ, দর্শনতত্ত্ববিদ, কাব্যতত্ত্ববিদ, সাহিত্যতত্ত্ববিদ হিসাবে। তারা দাবি করে তারা জানে সকল শিকড়। তারা বলে সকল শিকড়ের নিচে আছে তাদের আবিষ্কৃত বিষ।
এবার সংসারে আসি, সংসার মানি, সংসারের কথা বলি। সংসার প্ররোচণা দিলে জয়নাল আবেদীন কীটনাশকের ব্যবসায়ী হিসেবে নিজস্ব দোকান খোলে। সে কীটনাশক ব্যবসায়ী। তার স্ত্রী তাকে বলেছিল কিছু? বলেনি। তার বন্ধুরা তাকে বলেছিল কিছু? বলেনি। ব্যবসায় সবার জন্মগত অধিকার থাকলে, সে অধিকার জয়নাল আবেদীনেরও থাকে। সে তার ব্যবসার জন্য রৌদ্রের নিকট কৃতজ্ঞ, কারণ কোনো এক রৌদ্রময় দিনে সে এই চিন্তাটা পেয়েছিল। সে সব সময় সিদ্ধান্তে যায় রৌদ্রময় দিনে। বিয়ের পর বাজারের পাশ দিয়ে যেতে যেতে তার চোখে পড়ে বাজার ভর্তি রোদ। রোদের ভেতর হঠাৎ তার চোখে পড়ে কয়েকটা মৃত ইঁদুর। আর ঠিক সে সময় তার মনে হয়, সে হবে কীটনাশক ব্যবসায়ী। মৃত ইঁদুরের সঙ্গে কীটনাশকের একটা সম্পর্ক সে আবিষ্কার করে কিংবা মৃত সবকিছুর সঙ্গে সে কীটনাশকের একটা সম্পর্ক আবিষ্কার করে। এরপর আরো কয়েকদিন সে খেয়াল করে দুপুরের রৌদ্রের নিচে মৃত ইঁদুর থাকে। সে আরো খেয়াল করে রোদ থেকে ঝুপ ঝুপ করে ঝরে পড়ছে নানারকম কেনাবেচা। আর কেনাবেচা থেকে ঝরে পড়ছে মৃত ইঁদুর। এ সময় তার আরো মনে পড়ে তার শৈশবের গৃহের কথা, যে গৃহে অসংখ্য ইঁদুর তার কিংবা তার পরিবারের বসবাসকে অসম্ভব করে তুলেছিল। তার বাবা বাজার থেকে ইঁদুর ধরার ফাঁদ কিনে এনেছিল। তার মা সে ফাঁদ ইঁদুর ধরার জন্য বাড়িতে পেতেছিল। কিন্তু ইঁদুর ফাঁদ চিনে ফেললে ধরা পড়ে না তারা সে ফাঁদে। তার মা ফাঁদের ভেতর সুগন্ধি খাবার রাখত ইঁদুর ধরার কৌশল হিসাবে। জয়নাল আবেদীন জেনে যায় সকল কীটপতঙ্গ ফাঁদ বিদ্যা আয়ত্ত করে ফেলেছে। কিন্তু বিষ বিদ্যা সবার চির-অনায়ত্ত থাকলে , বিষ বিদ্যা কাজ করে সর্বত্র।
জয়নাল আবেদীন এক রৌদ্রময় দিনে প্রবেশ করে বাজারের কেনাবেচায়। কীটপতঙ্গ ও কীটনাশক বিষয়ে কোনো বিদ্যা না থাকলেও কীটনাশকের দোকান চালু করে সে। শুধু এই দৃশ্য সে স্মৃতিতে জীবন্ত রাখে, সে দেখেছে মৃত ইঁদুর। সে ভাবে সংসার আর মৃত ইঁদুর তাকে প্ররোচিত করেছে কীটনাশকের ব্যবসায় নামতে।
কীটনাশকের দোকান দেবার কিছুদিন পর তার এ বিদ্যা অর্জিত হয় যে, কোনো জিনিস কেনাবেচার জন্য সে বিষয়ে কোনো বিদ্যা অর্জন করতে হয় না। শুধু জানতে হয় কেনাবেচার কৌশল। কেনাবেচার কৌশলে গড়ে উঠেছে বিপুল বিদ্যালয়, বিপুল বিদ্যা, অর্থনীতি, রাজনীতি, সমাজনীতি, সাহিত্যনীতি, পরিবারনীতি। আরো কিছুকাল পর সে জানে কিংবা মানে, কেনাবেচা কৌশল অনেকখানি জন্মগত। সে তার বাবা মাকে জানায় সুপ্রভাত, সুসন্ধ্যা। প্রভাতে এবং সন্ধ্যায়, আলোর শুরুতে, অন্ধকারের শুরুতে, আলোর শেষে, অন্ধকারের শেষে, তার উন্নতি হচ্ছে, উন্নতি হচ্ছে ইঁদুর মারা বিদ্যায়। সে অনুভব করে, ইঁদুর মারা বিদ্যা আয়ত্বের ভেতরে আছে উন্নতির শেষ কথা। তার বাবা-মা কবরে শায়িত থাকলেও সে বলে তাদের কবরের কাছে গিয়ে, মা আমার বাড়ি হচ্ছে, বাবা আমার বাড়ি হচ্ছে। বাবা মা’র চেয়ে বাড়িকে সে বড় আশ্রয় জ্ঞান করলে, তার একতলা বাড়ি হয়, দোতলা বাড়ি হয়। বাড়ির তলা গণনার প্রয়োজন কি, এই কথা ভাবলে সে বাড়ির তলা গণনা বাদ দেয়। বাড়ি জমতে থাকলে তার গুদামঘরের কথা বলতে হয়। কীটনাশক বাণিজ্য বিস্তার লাভ করলে তার গুদাম ঘরের প্রয়োজন হয়। সে যে বাড়িতে বাস করে সে পাঁচতলা বাড়ির তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম তলা কীটনাশক গুদামজাত করার গুদামঘর হিসেবে ব্যবহার করে। দোতলায় থাকে সে। আর গ্যারেজ বাদ দিয়ে নিচতলার দুটো ছোট ছোট ফ্ল্যাটে থাকে দুজন ভাড়াটে।
চিলেকোঠার ঘরটাকে সে ব্যবহার করে ইঁদুর পোষার জন্য। ইঁদুরের ছোটাছুটির শব্দ তার ভালো লাগে। রাতের বেলা ঘুম ভাঙলে সে শুনতে চায় ইঁদুরের ছোটাছুটির শব্দ । মাঝে মাঝে সে ছাদে ওঠে ইঁদুরের ছোটাছুটি দেখবার জন্য। মাঝে মাঝে ছাদে চাঁদ এলে, ইঁদুর এলে, তার মনে হয় কীটনাশক ব্যবসা টিকে আছে চাঁদ আর জীবিত ইঁদুরের জন্য। মানুষ চাঁদ আর ইঁদুরকে জীবিত রেখেছে কীটনাশক ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য। সে সকল বিদ্যার ভেতর চাঁদ, ইঁদুর আর কীটনাশকের বর্ণমালা দেখতে পায়।
জয়নাল আবেদীনের বাড়ির নিচ তলার ফ্ল্যাটের ভাড়াটে আব্দুর রাজ্জাক সারাক্ষণ প্রশ্ন করেন তার চারপাশের লোকজনকে। তিনি সারাক্ষণ প্রশ্ন নিয়ে পথ চলেন, পথ স্থগিত করেন, পথ অন্ধকার করেন, পথ আলোকিত করেন। খুব বেশি প্রশ্ন করার ক্ষমতা তার নাই, কারণ তার খুব বেশি পথ নাই অথবা তার কোনো পথই নাই। অল্প কয়েকটা মুখস্থ প্রশ্ন দিয়ে তিনি চারপাশের মানুষকে প্রমাণ করতে চান, তাদের কোনো পথ নাই, তাদের কোনো গন্তব্য নাই, তাদের কোনো চিন্তা নাই জীবনকে এগিয়ে নেবার জন্য। সে প্রমাণ করার চেষ্টা করে তার চারপাশের লোকজন কীটের মতো, পতঙ্গের মতো, ইঁদুরের মতো, যে জীবন মানুষের নয়।
আজ ছুটির দিন। আজ দাঁড়াবার সময় আছে, পথ খোঁজার সময় আছে। আব্দুর রাজ্জাক থামিয়েছে জয়নাল আবেদীনকে পথের শুরুতে কিংবা পথের মাঝখানে কিংবা পথের শেষখানে। নামাজ পড়েছেন? ছুটিরও শেষ থাকলে জয়নাল আবেদীন সরে গেছে সে প্রশ্ন থেকে। আব্দুর রাজ্জাক দেখে ছুটির দিনেও তার প্রশ্নের উত্তর দেয় না জয়নাল আবেদীন।
আজ ছুটির দিন না। দাঁড়াবার সময় নাই, তাকাবার সময় নাই। আব্দুর রাজ্জাক তবুও তার প্রশ্ন নিয়ে পথে পথে। মাঝে মাঝে রাস্তার পাশের বৈদ্যুতিক খুঁটিকেও সে প্রশ্ন করে। কোথা থেকে সে প্রশ্ন শিখেছিল, প্রশ্ন পেয়েছিল, মনে নাই তার। তবে সবাই মনে রাখে আব্দুর রাজ্জাক প্রশ্ন নিয়ে পথে পথে আছে সর্বদা।
এই কথা আরও জানা হয়– তার স্ত্রী, এক ছেলে, এক মেয়েও প্রশ্ন করার বিদ্যা নিয়ে ঘুরে বেড়ায় নানান পথে। তাদের পাঠ্য যে সকল বই, সে সকল বই কেবল শেখায় প্রশ্ন করা, উত্তর তারা নিজেরাও জানে না হয়তোবা। মাঝে মাঝে তারা ভাবে এটা, কে প্রথম এ সকল প্রশ্ন বিক্রি করেছিল প্রশ্ন করার জন্য, কিংবা কে প্রথম তার উত্তর দেয়ার চেষ্টা করেছিল বিক্রি করার জন্য। তারা জানে এবং মানে, প্রশ্ন বিক্রি এবং উত্তর বিক্রি করার রেওয়াজ আছে বিদ্যালয়ের এবং বিদ্যালয়ের বাইরের সকল জ্ঞানতত্ত্বে।
আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রী একবার অনুভব করে নারীদের প্রশ্ন কেউ তেমন শোনে না এবং উত্তরও দেয় না। তার স্ত্রী প্রশ্ন করার জন্য পৌরসভার মহিলা কাউন্সিলর পদে দাঁড়ায়। তার নির্বাচনী প্রতীক বরাদ্দের সময় একটা সমস্যার সৃষ্টি হয়। নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে সে চেয়েছিল প্রশ্নবোধক চিহ্ন। সে জানায় দলের নয়, তার পরিবারের প্রতীক প্রশ্নবোধক চিহ্ন। এই চিহ্ন তার পারিবারিক ঐতিহ্য ও শিক্ষাকে ধারণ করে। সে চায় তার পরিবারের মতো এলাকার সকল পরিবার প্রশ্নবোধক চিহ্ন দ্বারা জ্ঞানী হোক। পৃথিবীর সকল জ্ঞান প্রশ্নবোধক চিহ্নে জমা আছে। কিন্তু তার এ প্রতীক নির্বাচন কমিশনের না থাকায় সে নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে প্রশ্নবোধক চিহ্ন পায় না। এবং তখন সে বিবেচনা করে প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো আর কী কী প্রতীক আছে। একজন তাকে জানায় বিষণ্ণ মানুষের বসে থাকা কিংবা গর্ভের সন্তান প্রশ্নবোধক চিহ্নের মতো। কিন্তু নির্বাচন কমিশন এসব প্রতীক গ্রহণ না করলে তাকে গ্রহণ করতে হয় নির্বাচন কমিশন কর্তৃক নির্ধারিত প্রতীক। গোলাপ ফুলকে সে পায় নির্বাচনী প্রতীক হিসাবে। সে বুঝতে পারে না গোলাপ ফুল নিয়ে মানুষের কাছে ভোট কিভাবে চাইবে। গোলাপ ফুল বিষয়ে তার তেমন ধারণা নাই, তার কোনো প্রশ্ন নাই গোলাপ ফুল বিষয়ক। কিংবা তাদের পরিবারেরও কারো প্রশ্ন নাই গোলাপ ফুল বিষয়ক। তার পরিবারের কেউ কখনো গোলাপ ফুল পছন্দ করেনি। তারপর দেখা যায় সে সবচাইতে কম ভোট পেয়ে হেরে গেছে।
নির্বাচনে গোলাপ হেরে গেলেও গোলাপ হারায় না। আব্দুর রাজ্জাকের বাড়িতে গোলাপ আসে। তার মেয়ে, যার নাম মিম, সে যে রাস্তা দিয়ে বাড়ি ফিরে আসে সে রাস্তায় এখন গোলাপ পাওয়া গেলে সে গোলাপ নিয়ে আসে বাড়িতে। সে বাড়ি থেকে প্রশ্ন নিয়ে বের হয় ফিরে আসে গোলাপ নিয়ে। মিম তার মায়ের ভোট করতে গিয়ে দেখে, প্রশ্নের চাইতে তার বেশি ভালো লাগে গোলাপকে। সে গোলাপ দখল করতে চায়, কিংবা গোলাপ তাকে দখল করতে চায়, জানে না সে।
রাতে শোবার সময় সে দেখে গোলাপ তাকে দখল করছে ক্রমে ক্রমে, আর সেও গোলাপের কাছে যেতে চাচ্ছে ক্রমে ক্রমে। পারিবারিক প্রশ্ন তাকে ধরে রাখতে পারছেনা। ভুলে যাচ্ছে সে এ সকল প্রশ্ন, ভুলে যাচ্ছে সে পারিবারিক ঐতিহ্য।
আব্দুর রাজ্জাকের পরিবারে সপ্তাহে একদিন পারিবারিক মিটিং হয়। এই মিটিংয়ে আলোচনা হয় প্রশ্ন বিষয়ে। আব্দুর রাজ্জাক তার মেয়ে মিমকে প্রশ্ন বিষয়ক প্রশ্ন করে। তাদের পরিবারে এই নিয়ম চালু আছে যে, এ পরিবারের সকল সদস্য সারাদিন নানা ব্যক্তিকে প্রশ্ন করবে। এ পরিবারের মোট চারটা প্রশ্ন আছে। এ চারটা প্রশ্ন তারা উত্তরাধিকারসূত্রে পেয়েছে। নতুন কোনো প্রশ্ন তারা তৈরি না করতে পারলে চারটা পুরাতন প্রশ্ন নিয়ে এ শহরের বিভিন্ন মহল্লায় গেছে তারা নানা জনের কাছে। তবে একথা ঠিক যে তারা চেষ্টা করেছে নতুন প্রশ্ন তৈরি করার এবং সংগ্রহ করার। কিন্তু নতুন প্রশ্ন তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য অনুযায়ী না হওয়ায় সেগুলো তারা গ্রহণ করেনি। আজ পারিবারিক মিটিং এ আব্দুর রাজ্জাক তার মেয়ে মিম ও তার ছেলে হামজাকে জিজ্ঞেস করে তাদের পরিবারের চারটা প্রশ্ন মনে আছে কিনা। মিম ও হামজা কেবল দুটো করে প্রশ্ন মনে করতে পারে। আর দুটো প্রশ্ন তারা ভুলে গেছে। আব্দুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রী এটা জানার পর ভীষণ ক্ষিপ্ত হয়ে যায়। তারা বিস্মিত হয় কিভাবে তাদের দুই সন্তান প্রশ্ন ভুলে যেতে পারে। এ চারটা প্রশ্ন তাদের পরিবার পেয়েছিল পারিবারিক গ্রন্থাগারের বই থেকে। তারা তাদের দুই সন্তানকে নির্দেশ দেয় যেন তারা দ্রুত তাদের হারিয়ে যাওয়া প্রশ্ন উদ্ধার করে পারিবারিক গ্রন্থাগারের গ্রন্থ থেকে। এসকল প্রাচীন গ্রন্থ সংরক্ষিত আছে তাদের পারিবারিক গ্রন্থাগারে।
এ সময় চিঁ চিঁ শব্দ আসে গ্রন্থাগারের গ্রন্থগুলোর ভেতর থেকে। আব্দুর রাজ্জাক খুব ভয় পায় এই ভেবে যে, ইঁদুরেরা বোধহয় তাদের পারিবারিক গ্রন্থাগারের গ্রন্থগুলো কাটছে, নষ্ট করছে।
একদিন ভোর আসে। প্রতিদিন ভোর আসে। ভাড়া করা প্রশ্নের মতো ভোর। তারপর একদিন ভোর আসে ভাড়া করা প্রশ্ন হারিয়ে যাওয়ার মতো। আব্দুর রাজ্জাক এবং তার স্ত্রী দেখে তাদের মেয়ে মিম বাড়িতে নাই। তার বিছানায় একটা গোলাপ। তারা মিমকে খোঁজ করে তাদের পরিবারের সেই চারটা প্রশ্ন দিয়ে। তারা সব সময় জেনেছে প্রশ্ন দিয়েই খোঁজ করতে হয় সবকিছু। কিন্তু তাদের প্রশ্ন এবং তারা মিমকে খুঁজে পায় না। মিম চলে গেছে তাদের প্রশ্নের বাইরে, তাদের পরিবারের বাইরে, তাদের পরিবারের গ্রন্থের বাইরে। তারা তাদের প্রশ্নের বারান্দায় দাঁড়ায়। দূরে গেছে পথ, দূরে গেছে মিম। আরেকবার তারা মিমের বিছানার উপরে রাখা গোলাপটার দিকে তাকায়। তারা গোলাপটাকে পড়তে চায়। গোলাপের শরীরে কোনো প্রশ্ন আছে, পড়তে পারে না তা তারা। তারা কখনো গোলাপ পড়া শেখেনি। তাদের পরিবারে গোলাপের ইতিহাস পড়া হয় না এবং কখনো পড়া হয়নি। অথচ তাদের মেয়ে মিম গোলাপ পড়তে গিয়ে চলে গেছে তাদের প্রশ্নের বাইরে। তারা এখন এই কথা ভাবে ভোটের সময় গোলাপ প্রতীক নিয়ে ভোট করা একেবারেই ঠিক হয়নি।
ভোর যদি একাধিক, তবে আরও ভোর তাদেরকে ডাকে। তারা প্রতিটা ভোরের কাছে আসে। তা সত্ত্বেও শুধু একটা ভোরের কথা বলি। ইঁদুরের ধ্বনি শুনে কিংবা তাদের মারামারিতে ভোর ভাঙ্গে, তাদের ঘুম ভাঙ্গে। আব্দুর রাজ্জাক ও তার স্ত্রী জেগে দেখে তাদের পুত্র হামজা বাড়িতে নাই। তার বিছানায় একটা গোলাপ ফুল। গোলাপ ফুল হরণ করে নিয়ে গেছে তাদের সন্তান হামজাকে। গোলাপ ফুলকে তাদের এখন বড় প্রশ্ন মনে হয়। তারা তবুও তাদের পারিবারিক প্রশ্ন দিয়ে খোঁজ করে হামজাকে সব জায়গায়, যেসব জায়গায় তারা যাওয়ার ক্ষমতা রাখে। তারা তাকে তবুও খুঁজে না পেলে ভাবে আজকাল কত যে লুকানোর জায়গা, কত যে হারানোর জায়গা, কত যে নতুন প্রশ্ন, যে সকল প্রশ্ন তারা জানে না কিংবা মানে না। আব্দুর রাজ্জাকের মনে হয় তাদের পরিবারের চারটা প্রশ্ন থেকে দুটো প্রশ্ন হারিয়ে গেছে। আর এও মনে হয় চারটা প্রশ্ন আসলে তারা চারজন ছিল। সে তার স্ত্রী এবং তার দুই সন্তান– চারটা প্রশ্ন। তারা পুনরায় এসময় একথা ভাবে যেদিন থেকে তারা গোলাপ ফুল প্রতীকে নির্বাচন করেছে সেদিন থেকে তারা দেখেছে তাদের পারিবারিক প্রশ্ন সমস্যা ও সংকটের ভেতরে প্রবেশ করেছে।
বাড়িওয়ালা জয়নাল আবেদীনের সঙ্গে দেখা হলে আব্দুর রাজ্জাক তাকে জিজ্ঞেস করেছে জয়নাল আবেদীনের পারিবারিক ঐতিহ্য কী। জয়নাল আবেদীন তাকে জানায় কীটনাশক তাদের পারিবারিক ঐতিহ্য। আব্দুর রাজ্জাক এসময় ভাবে প্রশ্নের সঙ্গে কীটনাশকের সমরূপতা কোথায়। তারপর সে কোন যুক্তি ছাড়া ভাবে, প্রশ্ন সম্ভবত কীটনাশকের সমার্থক শব্দ।
আব্দুর রাজ্জাক ভাবে সে প্রশ্ন দিয়ে পরিবারকে রক্ষা করতে চেয়েছিল, সমাজকে রক্ষা করতে চেয়েছিল, কিন্তু পারেনি। তবুও সে প্রশ্ন ত্যাগ করে না, পরিবার ত্যাগ করে না, সমাজ ত্যাগ করে না, কারণ প্রশ্নে তার আছে অগাধ বিশ্বাস। সে ভাবে প্রশ্ন থেকেই মানুষ সৃষ্টি, পরিবার সৃষ্টি ,সমাজ সৃষ্টি।
জয়নাল আবেদীনের বাড়ির নিচতলার ফ্ল্যাটের আরেক ভাড়াটে চরাচর সাদিকও জয়নাল আবেদীনকে প্রশ্ন করে। সে কবি। চরাচর সাদিক তার সাহিত্যিক নাম। চরাচর সাদিক তাকে বলেছে, সে কবিতা লেখা শুরু করার পর থেকে এই নাম গ্রহণ করেছে। কবিতা তার নাম ও জীবনকে পাল্টে দিয়েছে। সে কবিতার বিষপান করে বদলে গিয়েছে। কোথাও ফুল ফুটেছে কবিতায় অথবা কবিতার বাইরে। বৃষ্টি হবে নাকি? চরাচর সাদিক জিজ্ঞেস করে জয়নাল আবেদীনকে, বুনুয়েলের সিনেমা দেখেছেন কি? কোথাও নদীর ওপারে বাতাস বইছে, কবিতার ওপারে বাতাস বইছে– পাল তুলেছে কি কেউ সে বাতাসে। চরাচর সাদিক জিজ্ঞেস করে জয়নাল আবেদীনকে, বোর্হেসের কবিতা পড়েছেন কি? ওয়েটিং ফর দা বার্বারিয়ানস পড়েছেন কি? জয়নাল আবেদীন বই থেকে দূরে, যেখানে ইঁদুর বই কাটার জন্য অপেক্ষা করছে, সেখানে আছে কীটনাশক নিয়ে।
চরাচর সাদিকের সঙ্গে দেখা হয় শহরের গ্রন্থাগারগুলো, ফুলগুলো, সিনেমা হলগুলো যেখানে প্রশ্ন হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সেখানে। চরাচর সাদিক তার স্ত্রী, দুই কন্যা নিয়ে যায় নানা প্রশ্নের সন্ধানে, প্রশ্নের সংগ্রহে। চরাচর সাদিক মনে করে মানব জীবনের শ্রেষ্ঠ কাজ প্রশ্ন সংগ্রহ ও প্রশ্ন অনুসন্ধান। প্রশ্ন সংগ্রহের মাধ্যমে একজন মানুষ তার শ্রেষ্ঠ বিকাশ সাধন করতে পারে। একবার তাকায় চরাচর সাদিক ও তার পরিবারের দিকে, দেখি কয়টা প্রশ্ন সংগ্রহ করতে পেরেছে তারা। একরাতে ঘুমাতে যাবার আগে তারা সেটা গণনা করে। একবার গণনা করে অনেক বার গণনা করে। তারা গণনা ঠিক জানলে দেখে তাদের রয়েছে চারটা প্রশ্ন। তারা গণনা শেষে খুব বিস্মিত হয় এই ভেবে যে, তারা এত এত ভ্রমণ শেষে আয়ত্ত করতে পেরেছে কেবল চারটা প্রশ্ন। তারা এখন দেখে সর্বত্র এই চারটা প্রশ্ন। একটা উপন্যাস পড়ে, চারটা প্রশ্ন; একটা সিনেমা দেখে, চারটা প্রশ্ন; একটা ফুল দেখে, চারটা প্রশ্ন; একটা নদী দেখে, চারটা প্রশ্ন। অথবা কথা এরকম যে, তারা হয়তো চারটার বেশি প্রশ্ন ধারণ করতে পারে না। কিংবা সত্য এরকম যে, কোনো মানুষই চারটার বেশি প্রশ্ন ধারণ করতে পারে না।
কত সব প্রশ্নের উত্তর জানে না জয়নাল আবেদীন, জানে না সে। তার ভাড়াটে আব্দুর রাজ্জাক ও চরাচর সাদিকের প্রশ্ন শুনে তার মনে হয়, প্রত্যেকটা কীট এক একটা প্রশ্ন। আর এক একটা কীটনাশক তার উত্তর। দুনিয়ায় হাজার হাজার কীট থাকলেও মাত্র কয়েকটা কীটনাশক বা বিষের সাহায্যে তার উত্তর দেয়া সম্ভব। কিন্তু এ প্রশ্নের উত্তর সে কীটনাশকের বা বিষের সাহায্য দিতে পারছে না। সে বিবেচনা করে প্রশ্ন বিষয়টা কী। প্রশ্নের আসলে উদ্দেশ্য কী। যাকে প্রশ্ন করা হয় তাকে কি বাতিল করে দেবার জন্য তা করা হয়। প্রশ্নের মূল উদ্দেশ্য কারো সম্বন্ধে বা কোন কিছু সম্বন্ধে জানা নয় বরং তার অস্তিত্ব বিলুপ্ত করে দেবার অভিপ্রায় থাকে তাতে।
দোকানে এসে জয়নাল আবেদীনের প্রশ্ন করা ও উত্তর দেয়াকে বেচাকেনা মনে হয়। দুনিয়ার সকল মানুষ প্রশ্ন ও উত্তর বেচাকেনা দিয়ে সময় পার করছে, জীবন পার করছে, একে অন্যের সঙ্গে বন্ধুত্ব করছে, শত্রুতা করছে। জীবনের অন্যতম কাজ সম্ভবত প্রশ্নোত্তর কেনাবেচা। হঠাৎ করেই তার হাহাকার করতে ইচ্ছে হয়। সে হাহাকার করার জন্য স্মরণে আনে তার শৈশব। যেখানে একটা মোমবাতি জ্বলছে একটা বা একাধিক বইয়ের কাছে, যখন বই অন্ধকার দূর করতে পারে না এবং আহবান করছে কীট-পতঙ্গ ও কীটনাশককে। এ সময় তার আরও মনে হয়, হাহাকার উপভোগ করার জন্য, এ বাড়ি করার সময় বাড়ির একদিকে যে সামান্য ফাঁকা জায়গা, সেখানে সে একটা হাসনাহেনার গাছ লাগিয়েছিল। এই প্রশ্নময় বিষণ্ণ রাতে, হাহাকারে এলোমেলো করে দেয়া রাতে, সে হাসনাহেনার গন্ধের নিকটে গিয়ে দাঁড়ায়। সে এখন চাচ্ছে এ গন্ধ তাকে প্রশ্নমুক্ত করুক, কীটমুক্ত করুক, বিষমুক্ত করুক। সে হাহাকারের জলে ভেসে থাকার জন্য হাসনাহেনা গাছের নিকটে বাঞ্ছা করে একটা পাতা, যে পাতা নিজেকে ঝরায় অন্যকে ভাসিয়ে রাখার জন্য। সে ভেসে থাকা চায়, আরোগ্য চায়, যেতে চায় প্রশ্নহীন প্রান্তরে।
হাসনাহেনারও বোধহয় গল্প থাকে, কীট বিষয়ক গল্প। কেউ তাকে বলেছিল হাসনাহেনার গন্ধ আহ্বান করে সাপকে, যখন রাত তাকে আশ্রয় দিতে অস্বীকার করে। তবে কিভাবে হাসনাহেনা হবে তার আশ্রয়।
হাসনাহেনার গন্ধ রাতের বেলা কার কাছে অধিক যায়– যখন মানুষেরা গৃহে নিদ্রা যায় গৃহের গন্ধ নিয়ে। গৃহের সুগন্ধ মানুষের নিকট সব সময় অতি প্রিয় হয়েছে। তাইতো যুদ্ধে যুদ্ধে, শান্তিতে শান্তিতে, মানুষ নিজের গৃহ রক্ষা করতে চেয়েছে, অন্যের গৃহ দখল করতে চেয়েছে। শেষে গৃহ সুবাসিত হোক নানা আয়োজনে, নানা প্রয়োজনে। গৃহকে সে সব সময় নিজের সবচেয়ে সফল আবিষ্কার জ্ঞান করেছে। কীটপতঙ্গ হাসনাহেনার খুব নিকটে বাস করলে তবে কি তারা সবচেয়ে ভালো সুগন্ধ দখল করেছে তার।
আজ সন্ধ্যায় হাসনাহেনা গাছটার নিচে সুগন্ধী অন্ধকারে দাঁড়িয়ে থাকার মুহূর্তে তার শৈশব তার পাশে এসে দাঁড়ায়। কিশোর সে। সকল কিশোরের খেলা থাকলে তারও নানা রূপ খেলা ছিল। একটা খেলার কথা তার মনে আসে, মনে ভাসে। খেলাটার নাম সে মনে না করতে পারলেও খেলার কৌশলটা তার মনে পড়ে। তেঁতুলের একটা বিচি দিয়ে খেলতো তারা এ খেলা। হাতের মুঠোর ভেতর একটা বিচি রেখে কিংবা না রেখে প্রতিপক্ষ খেলোয়াড়কে জিজ্ঞেস করা হতো এক্কা না ফক্কা। এই খেলাটাকে সে এখন তার দুই ভাড়াটের প্রশ্নের সঙ্গে মিলিয়ে দেখে। তার মনে হয় শৈশবে সে প্রশ্ন করা শিখেছিল এই খেলার মাধ্যমে। তখন সে কেবল একটা প্রশ্নই করতে পারত। এখন মনে হচ্ছে তেতুল বিচির হ্যাঁ-না প্রশ্নোত্তর খেলা আসলে পৃথিবীর সকল প্রশ্নোত্তর খেলার সারমর্ম। হ্যাঁ-না খেলা। হাতের মুঠোয় হ্যাঁ আছে, নাকি না আছে। শব্দের মুঠোয় হ্যাঁ আছে নাকি না আছে। উত্তর দাও বন্ধু , উত্তর দাও শত্রু।
হয়তো হাসনাহেনা গাছের একটা ফুল ঝরে পড়ে। হয়তো ঝরে পড়ে হ্যাঁ। হয়তো ঝরে পড়ে না। হয়তো সে শুনতে পেয়েছে, হয়তো সে শুনতে পায়নি। তবুও তাকে বলতে হবে কাল ভোরের আগে, ঝরে পড়ার কথা, ঝরে না পড়ার কথা। হ্যাঁ ফুলের কথা, না ফুলের কথা। সুগন্ধি অন্ধকারে হেঁটে যাচ্ছে কারা। হেঁটে যাচ্ছে পৌরাণিক জ্ঞান, ধর্মীয় জ্ঞান, দার্শনিক জ্ঞান, বৈজ্ঞানিক জ্ঞান, সাহিত্যিক জ্ঞান– নীরবতা, আবারো ঝরুক অথবা না ঝরুক হাসনাহেনা।
প্রশ্নের সঙ্গে প্রশ্নের বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে কিংবা ভাড়াটের সঙ্গে ভাড়াটের বন্ধুত্ব গড়ে উঠলে আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে চরাচর সাদিকের বন্ধুত্ব হয় কিংবা সম্পর্ক স্থাপিত হয়। তাদের দু’জনকে একসঙ্গে দেখা যায় বিভিন্ন রাস্তায়, বিভিন্ন দোকানে, বিভিন্ন কেনাকাটায়। তাদের কেনাকাটা একই রকম হতে থাকে, তাদের পোশাকও একই রকম হতে থাকে, তাদের খাবারও একই রকম হতে থাকে। তাদের প্রশ্নও কি একইরকম হতে থাকে, জানে না জয়নাল আবেদীন কিংবা অন্য কেউ। জয়নাল আবেদীন একদিন ভাবে প্রশ্নে প্রশ্নে কি যুদ্ধ হয়। জানে না সে।
বাতাস মেঘ উড়িয়ে দেয়, মেঘ ভেঙে দেয়, আর বৃষ্টি পড়ে নিজ নিজ গৃহে। আব্দুর রাজ্জাকের স্ত্রীর সঙ্গে চরাচর সাদিকের স্ত্রীর ঝগড়া হয়। অতঃপর তাদের কেনাকাটার দোকান বদলে যায়, কেনাকাটার রং বদলে যায়। কিন্তু মিল এক জায়গায় থেকে যায় এই যে, তারা ঝগড়ার পরের মাসে জয়নাল আবেদীনের বাসা ছেড়ে দেয় এবং তারা নিয়ে যায় তাদের সকল প্রকাশিত ও অপ্রকাশিত প্রশ্ন।
বাসা ছেড়ে চলে যাবার পর দিন মহল্লার ময়লাওয়ালা এসে জানায় দুই ভাড়াটে আব্দুর রাজ্জাক ও চরাচর সাদিক গত ছয় মাস তাদের বাসার ময়লা নিয়ে যাবার বিল বা টাকা দিয়ে যায়নি। ময়লার বিল খেলাপি তারা। জয়নাল আবেদীন সে সময় তাদের ফ্ল্যাট দুটো দেখতে গিয়ে দেখে তাদের ফ্ল্যাট দুটোতে ময়লার স্তুপ। অনেকদিনের জমানো ময়লা, যে ময়লার মাঝে কীটপতঙ্গ বাসা বেধেছে। জয়নাল আবেদীনের সে সময় এই কীটপতঙ্গগুলোকে আব্দুর রাজ্জাক ও চরাচর সাদিকের প্রশ্ন মনে হয়।
কে আসে উদ্ধারে এখন। জয়নাল আবেদীনের পাঁচতলা বাড়িতে কিভাবে আগুন লাগে জানে না কেউ। সবাইকে নিয়ে জয়নাল আবেদীন বাড়ি থেকে রাস্তায় নেমে এসেছে। ফায়ার সার্ভিসে ফোন দেয়া হয়েছে। পুড়ছে কীটপতঙ্গ, কীটনাশক, প্রশ্ন ও উত্তর। জয়নাল আবেদীন জানে না হাসনাহেনার গন্ধ কতটুকু জল ধারণ করে, কতটুকু আগুন নেভাতে জানে। ভাড়া করা প্রশ্ন ভাড়া করা উত্তর ছাই হয়ে ফায়ার সার্ভিসের জলে ভেসে যাচ্ছে নর্দমা দিয়ে। আর ভাড়াটে আব্দুর রাজ্জাক ও চরাচর সাদিক কোথায় কোথায় যে প্রশ্ন করতে ব্যস্ত তা জানে কে।