দর্পণ ডেস্ক
একটি পূর্ণাঙ্গ ম্যাগাজিন। শিক্ষা, সাহিত্য ও গবেষণামূলক ম্যাগাজিন দর্পণ। ২০১৯ সালে ব্যতিক্রমধর্মী ম্যাগাজিন দর্পণ তার যাত্রা শুরু করে। ২০২০ সালের জানুয়ারি মাসে দর্পণ "গল্পবাজ" ম্যাগাজিন আত্তীকরণ করে।
দর্পণ ডেস্ক

একটা কাকের মৃত্যুতেও শোক হয় – বাসার তাসাউফ

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

লেখক সম্পর্কে

কুমিল্লা জেলার হোমনা উপজেলার অনন্তপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেছেন। পিতার নাম মো. মাজু উদ্দিন ভূঁইয়া। শিক্ষা– এম.এস.এস (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ)।

এ পর্যন্ত প্রকাশিত গ্রন্থ ৪টি। গ্রন্থ চারটি হচ্ছে– ‘স্বরচিত নির্বাসন’, ‘স্বর্গগ্রামের মানুষ’, ‘পিতৃশোক ও দীর্ঘশ্বাসের গল্প’ এবং ‘স্কুল থেকে পালিয়ে’ (উপন্যাস)।

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০১৯-এ বাসার তাসাউফের “পিতৃশোক ও দীর্ঘশ্বাসের গল্প” গ্রন্থটি প্রকাশিত হবে “শুদ্ধপ্রকাশ” থেকে। গল্পগ্রন্থটির একটি গল্প প্রকাশিত হলো গল্পবাজে—

পাণ্ডুলিপি থেকে গল্প: একটা কাকের মৃত্যুতেও শোক হয়

তালহা যদিও বারবার বলেছে, তাদের গ্রামে দেখার মতো তেমন কিছুই নেই। পাহাড় নেই, পাহাড়ের বুকে নেই ঝর্ণাধারার কলকল শব্দ। সরিষার তেল ভাঙ্গানো ঘানি নেই, নেই গল্প-উপন্যাসের পোস্ট অফিসের মতো একজন ডাকপিয়ন কাম পোস্টমাস্টার।

এখানে গোধূলিবেলায় পশ্চিম দিগন্তে সূর্যটা ডুবে গেলে গ্রামজুড়ে নেমে আসে রাত্রির আঁধার। সন্ধ্যে বেলায়ই রাতের খাবার খেয়ে কারও না কারও খোলা উঠোনে জড়ো হয়ে কর্মক্লান্ত মানুষেরা কিচ্ছা-কাহিনি, মেয়েলি গীত কিংবা পুঁথি পাঠের আসর জমিয়ে হাল্কা বিনোদনে মেতে ওঠে– আর রাত গভীর হলে প্রকৃতিতে নেমে আসে রহস্যময়তা। অরণ্য আঁধারে প্রেতিনীর কান্না, শেওড়া গাছের ভূত অথবা অশরীরী আত্মার ভয়ে দরজায় খিল এঁটে ঘুমিয়ে থাকে সবাই, এ ছাড়া দেখার মতো সত্যিই তেমন কিছু নেই। কিষাণেরা ধান, পাট, তামাক, গম আর বিভন্ন ফসলাদি চাষে সারাক্ষণ থাকে ব্যস্ত তাদের গ্রামে– এ কথাও বলেছে বারবার তালহা। নিজের গ্রামের এসব সাদামাঠা দৃশ্য তার বন্ধুটির মনে খুব বেশি আনন্দ উদ্রেক নাও করতে পারে, তাই আগে থেকেই ওসব কথা বলে নেয় সে। তবুও ইলমে নূর এলো, তাদের গ্রামটা দেখতে।

তালহার বন্ধু ইলমে নূর। একই বিশ্ববিদ্যালয় পড়ে, থাকেও একই সঙ্গে। অদ্ভুত ও বিচিত্র ধরনের ছেলে। কয়েক মাস পর পরই ভং ধরে, একজন না একজন বন্ধুর সঙ্গী হয়ে চলে যায় নতুন নতুন গ্রাম দেখতে, এটা তার শখ। নেশা কিংবা অভ্যেস বলেও ধরে নেয়া যায়। সে মনে করে, প্রত্যেকটি গ্রামেই কিছু না কিছু সিম্বলিক জিনিস থাকে, যার নিগুঢ় রহস্য উদ্গাটন করতে হলে গ্রামে যাওয়া প্রয়োজন। এজন্য শুধু তালহাদের গ্রামে নয়, বাংলাদেশের প্রায় প্রতিটি গ্রামেই অন্তত একবার পা ফেলতে চায় সে, অজ পাড়া-গাঁ কিংবা মফস্বল শহর– কিছুই বাদ পড়ে না।

তালহাদের বাড়িটা বাস স্টেশন থেকে মাইলখানেক ভেতরে। মূল সড়ক থেকে একটা কাঁচা রাস্তা উঁচু-নিচু, চড়াই-উৎরাই আর বড় বড় কড়্ই গাছের মাঝখান দিয়ে চলে গেছে গ্রামের প্রান্ত অব্দি। এই পথটি ধরেই দু’জনে পাশাপাশি হেঁটে চলে। পথটা কাঁচা ও অসর্পিল। রিক্শা চলার উপযোগী নয়, তাই হাঁটতে হচ্ছে। তালহাদের বাড়িটা একেবারে গ্রামের শেষ মাথায়। আরেকটু এগিয়ে গেলে কাঁঠালিয়া নদী, নদী পার হয়ে প্রাইমারি স্কুল, তার পাশেই। পায়ে হেঁটে না গিয়ে নৌকায় চড়েও যাওয়া যায়। তবে বর্ষাকাল ছাড়া নদীপথে নৌকা পাওয়া যায় না। রাস্তার দু’পাশে দাঁড়িয়ে আছে সারি সারি গাছ, যেন গ্রামে নয়, তারা এসেছে সবুজ কোনো বনাঞ্চলে। গাছের ডালে কয়েকশো কাক বসে কা-কা স্বরে ডেকে যাচ্ছে। ইলমে নূর একসঙ্গে এতগুলো কাকের ডাক শুনেনি কখনও। তাই তালহাকে জিজ্ঞেস করে, ‘এত কাক ডাকছে কেন?’

‘কী জানি! চল, সামনে এগিয়ে দেখি।’

গাছের ডালে– যেখানে কাকগুলো ডাকাডাকি করছে, দু’জনে এগিয়ে যায় সেখানে। একটি কাক মরে পড়ে আছে গাছের নিচে। এই মৃত কাকটির জন্যই বুঝি কাকগুলো এভাবে শোককান্না করছে! ইলমে নূর দৃশ্যটি দেখে একটু অবাক হলেও বেশ উৎফুল্ল হয়ে বলে, ‘তালহা, তুই বলেছিলি তোদের গ্রামে দেখার মতো তেমন কিছুই নেই, এই যে একটি কাকের মৃত্যুতে জীবিত কাকদের মাঝে অমন শোকের মাতম চলছে– এর চেয়ে ভালো দৃশ্য আর কোথায় গেলে দেখা যাবে? এ যে খুবই সিম্বলিক!’

ইলমে নূরের কাছে যা সিম্বলিক তালহার কাছে তা সাধারণ ঘটনা। গ্রামে এমন ঘটনা হরহামেশাই ঘটে থাকে। মৃত কাকটির জন্য গাছের ডালে ডালে অপর কাকগুলোর শোকে মুহ্যমান হওয়া দেখে ইলমে নূর ভাবে, গ্রামে একটা কাকের মৃত্যুতেও শোক হয়, আর শহরে সৃষ্টির সেরা জীব মানুষ মরে পড়ে থাকলেও কেউ ফিরে তাকায় না, সবাই এড়িয়ে যায়।

কয়েক মুহূর্ত নীরবে দাঁড়িয়ে থাকে তারা, এরপর সামনে পা বাড়ায়। কিছুটা পথ এগিয়ে যেতেই নদীটি চোখে পড়ে। দু’জনে নদীর পাড়ে এসে দাঁড়ায়। নদীর বুক ভরা যৌবনবতী জল। জলের বুক চিরে ভেসে চলেছে পালতোলা নৌকো। তালহাদের বাড়ি যেতে হলে এই নদীটা পার হয়ে যেতে হবে। কাছেই খেয়াঘাট। গ্রামের লোক বলে গুদারা। গুদারায় মানুষ পারাপারের জন্য নৌকো নিয়ে অপেক্ষা করছে একজন মাঝি, হিন্দু। নাম জগন্ধু দেবনাথ। তবে সবাই তাকে জগামাঝি নামেই চিনে। জগামাঝির দেহের গঠন লম্বাটে। মাথাভর্তি জটাচুল। ফজলি আমের গড়নে মুখ। খোচা খোচা দাড়ি, বেশ কালো ও মোটা গোঁফও আছে। পরনে লুঙ্গি, গায়ে ছেঁড়া পাঞ্জাবি। দুর্বল ও রোগা শরীরজুড়ে দুর্গন্ধ। হাত-পায়ের রগগুলো যেন পুরনো কোনো বৃক্ষের শিকড়। দেখার মতো তেমন কোনো মনোহর কিংবা ঐতিহাসিক দৃশ্য অথবা পোস্ট অফিসের ডাকপিয়ন কাম পোস্টমাস্টার যদিও এ গ্রামে না থাকে– ফসলের বিস্তৃত মাঠ, গোধূলির রক্তিমতা, রাত্রির আঁধার, রহস্যময় প্রকৃতি, অরণ্য আঁধারে প্রেতিনীর কান্না, শেওড়া গাছের ভূত– সবকিছু উপেক্ষা করে ইলমে নূর জগামাঝির মাঝেই যেন পুরো একটা গ্রাম, পুরো বাংলাদেশ খুঁজে পায়।

বাড়ি এসেই তালহার মায়ের পা ছুঁয়ে সালাম করে ইলমে নূর। মায়ের সবচেয়ে কোমল ও দুর্বল জায়গাটি দিয়েই তালহাদের পরিবারে অনুপ্রবেশ করে সে। ‘খালাম্মা! ক্ষূধা পেয়েছে, ভাত খাবো।’

ছেলে বটে। যেন নিজের বাড়ি, নিজের মায়ের কাছে খাবার চেয়ে নিচ্ছে। তালহার মা খাবার প্রস্তুত করে দেয়। দু’জনেই খেতে বসে।

‘তালহা খাবারদাবারের প্রতি বরাবরই অনিহা করে। ছোটবেলা থেকেই এ অভ্যাসটা শুরু হয়েছে, খেতে দিলে কখনও খেতে চায় না। ছোটবেলায় তো খাবার প্লেট হাতে নিয়ে সারা বাড়ি তার পেছনে পেছনে ছুটে খাওয়াতে হতো।’

বাড়িতে যারাই আসে সবাইকে এ গল্পটা বলে তালহার মা। ইলমে নূরের কাছেও বলা শুরু করেছে।

ইলমে নূর বলে, ‘খালম্মা! পানি খাবো।’ তালহার মা পানি দেয় এবং তার গল্প থেমে যায়। খাবার শেষে ব্যাগ থেকে কাপড়চোপড় নামিয়ে আলনায় গোছাতে গোছাতে প্যান্টের পকেটে হাত দিয়ে ইলমে নূর বলে, ‘তালহা, পকেট তো ফাঁকা!’

তালহা বলে, ‘মানে কী?’

‘মানিব্যাগটা নেই, তোদের গ্রামে পকেটমারও আছে?’ ‘আমরা তো মানুষের কোলাহলের মধ্য দিয়ে আসিনি, তোর পকেট মারবে কে? নিশ্চয়ই অন্য কোথাও রেখেছিস, খুঁজে দেখ।’

‘প্যান্টের পেছনের পকেটেই তো ছিল।’

‘তাহলে কোথাও ফেলে এসেছিস বোধহয়। কত টাকা ছিল?’

‘বেশি না। হাজার দশেক হবে।’ বলতে বলতে বাড়ির সামনে ফুলের বাগান দেখে সেদিকে পা বাড়ায় ইলমে নূর। সেখানে গিয়ে গাছের ডালে ছোট ছোট পাখির কিচিরমিচির, ফুল ও প্রজাপতির সমাহারে মত্ত হয়ে মানিব্যাগ হারানোর কথা নিমিষেই ভুলে যায়।

এ গ্রামে ইলেক্ট্রিসিটি নেই। তাই রাতের প্রকৃত ছবিটা স্পষ্ট হয়ে ফুটে ওঠে চোখের সামনে। বাড়ির সামনের পাগারে কলাপাতার ফাঁকে জ্বলতে দেখা যায় কয়েকটি জোনাকি পোকা, জানালার পাশে থামের মতো নিশ্চল দাঁড়িয়ে থাকা আমগাছের ডালে বাঁদুড়ের চেঁচামেচি অথবা তক্ষকের ডাক শোনা যায়, শোনা যায় ঝিঁঝিপোকার গান আর রাতজাগা পাখিদের ডানা ঝাঁপটানির শব্দও, তবে দেখা যায় না। রাতের রহস্যময়তা, অরণ্য আঁধারে প্রেতিনীর কান্না, শেওড়া গাছের ভূত অথবা অশরীরী আত্মার ভয় উপেক্ষা করে ইলমে নূর আর তালহা মিলে অন্ধকারের বুক চিরে গ্রামের ভেতরে ঢুকে নিকানো কোনো উঠোনে কিচ্ছা-কাহিনি কিংবা পুঁথি পাঠের আসর খুঁজে ফিরে; কিন্তু পায় না। মাত্র কয়েক বছর আগেও রূপকথার গল্পের আসর জমত গ্রামের উঠোনে উঠোনে। সেই গল্প শুনতে উঠোনজুড়ে উত্তরধার-দক্ষিণধার ভরে থাকত মানুষ। কোথাও একটা তিল ধারণেরও জায়গা ফাঁকা থাকত না। কেউ জলচৌকি, পিঁড়ি, মোড়া অথবা মাদুর পেতে বসত, কেউ আবার একটুখানি ফাঁকা জায়গায় দাঁড়িয়ে রাতভরে উদ্গ্রীব হয়ে গল্প শুনত। সকাল হলে মোরগ ডাকত অথবা মোরগ ডাকলে সকাল হয়েছে বোঝা যেত। স্যাটেলাইট আর তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে সবকিছু বদলে গেছে। এখন মানুষের ঘুম ভাঙ্গে মুঠোফোনের এ্যালার্ম শুনে। পুঁথিরমালা, যাত্রাপালা, গাজির গান আর রূপকথার গল্পের আসর জমে না আর নিকানো উঠোনে। গ্রামে এতটা পরিবর্তন কখন এলো?

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেই বাইরে বেরিয়ে গিয়েছিল ইলমে নূর। তালহা যেতে চেয়েছিল সঙ্গে, সে নেয় নি। একা একা ঘুরলে নাকি নিজেকে ইবনে বতুতার মতো লাগে। ইবনে বতুতার ভাব নিয়েই মেঠোপথ, ফসলের মাঠ, নদী, বিল, হিন্দুপাড়া ঘুরে এসে তালহাকে রায় দেয় ‘তোদের গ্রামটা খুবই সুন্দর!’

তালহা গর্বিত হয়ে বলে, ‘কেন সুন্দর মনে হল?’ ‘জেলেদের জন্য।’ বলেই ইলমে নূর হাতে রাখা ব্যাগ থেকে কয়েকটা শিংমাছ বের করে তালহার সামনে রাখে।

তালহা কিছুই বুঝতে না পেরে বলে, ‘এখন তো বর্ষাকাল না, জেলেদের কোথায় পেলি?’

‘পরে বলব, এখন বের হচ্ছি, ফিরতে দেরি হতে পারে।’ বলেই পরনের শার্টটি পাল্টে ইলমে নূর হন্ত দন্ত করে আবার বেরিয়ে যায়।

তালহা থামায় না, তার সাথেও যেতে চায় না। তাকে সাথে নেয়ার হলে ইলমে নূরই নিয়ে যেত।

তালহার মা এসে বলে, ‘ছেলেটা না খেয়ে আবার বেরিয়ে গেল, থামালি না?’

‘কোনো লাভ নেই। তাকে থামানো যাবে না। সে হচ্ছে বাঁধনহারা।’ এ কথাটি মনে মনে বলে ঘরের ভেতরে চলে যায় তালহা।

বিকেলে ফিরে আসে ইলমে নূর। এসেই তালহাকে তাগাদা দেয়, ‘তৈরি হয়ে নে, তোকে একটা অলৌকিক জিনস দেখাতে নিয়ে যাব।’

ইলমে নূর সব সময় নতুন কিছু আবিস্কার করবেই। তালহা উৎসাহি হয়ে বেরিয়ে পড়ে তার সঙ্গে। ইলমে নূর হেঁটে যেতে যেতে বলে, ‘বুঝিলি, লোকটা আমাকে অবাক করে দিয়েছে, এরকমও হয়!’

তালহা তার কথার অর্থ বোঝে না, বোঝার চেষ্টাও করে না। শুধু সেই অলৌকিক জিনিসটা দেখার জন্য বন্ধুর সঙ্গে দ্রুত গতিতে পা চালায়। বিকেলের শেষ রোদের আলো নিরুত্তাপ হলেও তালহার শরীর ঝিম ঝিম করে। একটি অলৌকিক ঘটনা দেখার জন্য এভাবে হেঁটে চলা কম কষ্টের না। তবু শহরে বড় হওয়া, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সবচেয়ে কাছের বন্ধুটির জন্য এভাবে হাঁটতে থাকে সে। কিছুক্ষণ হাঁটার পরে মোহনপুর গ্রামের একটি বাড়িতে ঢুকে পড়ে। হিন্দুবাড়ি, উঠোন আর ঘরদোর বেশ পরিস্কার, ঝক্ঝকে। তালহা জানতে চায়, ‘তোর সেই অলৌকিক ঘটনা কি এখানেই?’

ইলমে নূর হ্যাঁ সূচক জবাব দেয়। একটা হিন্দুবাড়িতে কি এমন অলৌকিক ঘটনা ঘটতে পারে তালহা খুঁজে পায় না। তারা বরান্দায় দাঁড়িয়ে থাকে। কিছুক্ষণ পর ঘরের ভেতর থেকে সেই জগামাঝি বেরিয়ে এসে ইলমে নূরের হাতে গুনে গুনে দশ হাজার টাকা তুলে দেয়। ইলমে নূর তার হাতে পাঁচশো টাকার একটি নোট গুঁজে দিতে চাইলে সে নেয় না। তালহা কিছুই বুঝতে না পেরে শুধু চোখ মেলে তাকিয়ে থাকে। জগামাঝিকে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসে তারা। ফেরার পথে ইলমে নূর বলে, ‘তালহা, দেখলি তো পুরো টাকাটাই ফেরত দিয়েছে, কোনো লোভ নেই। নদী পার হওয়ার সময় মানিব্যাগটা ওর নৌকাতে পড়ে গিয়েছিল। ফেরত দেওয়ার জন্য আমাকে নাকি অনেক খুঁজেছে। দুপুরে আমি তার বাড়ির সামনে দিয়ে যাচ্ছিলাম, সে তখন পেছন থেকে দৌড়ে এসে আমার কাছে টাকাগুলো ফেরত দিতে চায়। তখনই ভাবি, তোকে সঙ্গে নিয়ে এসে নেব। এ রকম একটা ঘটনা আমি একাকি উপভোগ করতে চাইনি। সত্যিই ঘটনাটা অলৌকিক, তাই না!’

তালহা বলে, ‘এ ঘটনার মধ্যে অলৌকিকতার কিছুই নেই, তোর টাকা তোর কাছেই ফেরত দিয়েছে।’

‘আসলে অলৌকিক নয়। এই যে লোকটা অভাবের কারণে অপুষ্টি আর দুর্বল শরীর নিয়ে সারাদিন নৌকা চালায়, দশ হাজার টাকা পেয়ে লোভ করতে পারত, সে তা করে নি। তার এই লোভ না করার বিষয়টাই সিম্বলিক। গ্রাম ছাড়া কোথাও এটা পাবি না– আর এই একজন মাঝির মাঝেই পুরো গ্রামটা পাওয়া যায়।’

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu