আশরাফ উল আলম শিকদার-এর তিনটি কবিতা
তবু মাফ করো না, মা
গলি শেষের দোতলা বাড়িটায় আমি থাকি, সস্ত্রীক
আমার পরিবারের অন্যান্য সব কোথাও না কোথাও আছে
ঐ বাড়িতেই, নিজের নিজের জগতে, অবশ্যই।
আমি বাড়িটা পেয়েছি বসবাসসূত্রে
আমার পিতৃ পুরুষের কোল থেকে নিচে নেমে এসে
সমান ছ-ভাগের দুভাগ
কারণ, আমরা দুই ভাই, দুই বোন
বাবা মারা গেলে
তার স্থাবর সব
সমান ছয় ভাগে ভাগ করে নিয়েছি আমরা
তার স্ত্রী, আমাদের মা ছিলেন যেন তার অস্থাবর সম্পত্তি
বাবার সব অস্থাবর মালামালের মতো মাকেও নিলাম দু-ভাই
সমান দু ভাগে ভাগ করে
দুপুরে আমার বাড়ি যা-হোক-দুটো
রাতের খাওয়া ও বাড়িতে
শোয়া, নাওয়া, নাস্তা বা জলখাবার নিজের পয়সায়
নিজের ঘরে এবং পরের ষোলটা বছর
এখন আমি অশিতি অশিতিপর
বউটাও প্রায় তাই, নিজের ঘরে ধুকছে হাঁপানীতে
আমরা এখন জিলাপী আর পাউরুটি, গরম লাল-চা
সকালের নাস্তা
কারণ আমরা দুই বাপ-মা এখোনো বেঁচে আছি
দু ছেলের সংসারে, পুরানো খাট পালঙ্কের মতো
দুপুরে আর রাতে দুই ভাগে ভাগ হয়ে, অংকের নিয়মে
আমারই ঐ পৈতৃক বাড়িটায়।
গলি শেষের দোতলা হলুদ বাড়িটায়
মাগো, আমায় মাফ করো না,
আমি তোমাদের ছোট ছেলে
কোমরে বড় ব্যথা
তবু মাফ করো না,
মাফ চাই, তবু মাফ কোরো না।
শুধুই কষ্ট করে গেলে?
একটু কষ্ট করতে শেখালে না
হোক না বয়স বেশী
শিক্ষার আবার কোন বয়স আছে নাকি?
কাল আমার মেয়ে প্রথম স্কুলে যাবে
মাগো, দোয়া কোরো,
কাল তৃণা প্রথম স্কুলে যাবে
তখন আমাদের… মানে তোমাদের পরিবারতো অনেক বড়
আমারাতো কেবল চারজনে, আর একটা ছুটা কাজের মানুষ
তখন এক বিকালে দাদাজান বলে দিলেন, কাল খোকার হাতে খড়ি
ব্যাস আয়োজন সারা, মৌলানা, সিলেট, নতুন কাপড়, হেড পন্ডিত
পায়েশ, পিঠা আর বিরীয়ানি, ওটাই আসল, তবে তার উপলক্ষ্য লাগে,
সবাই মিলে বসে পড়া গেল, সেও যেন ঈদের উৎসব!
মাগো, দোয়া কোরো,
কাল তৃণা প্রথম স্কুলে যাবে
আর কে আছে আজ, যাকে ফোনে ফোনে বলা যাবে?
দোয়া কোরো, আমার মেয়ে
তৃণা, কাল প্রথম স্কুলে যাবে
ছেলে আমার বড় হয়ে