———-সমাপ্ত———-
সামিউল আজিমের দুটি কবিতা: “সেই থেকে আমার ভীষণ জ্বর”, “বিচ্ছিন্ন সত্তা”
চালের ফুঁটো থেকে বৃষ্টির ছাট আসছে, আক্ষেপে ভিজে যাচ্ছে অপ্রাপ্ত, অপুষ্টিতে ভেঙে যাওয়া বুকের সন্নিবেশিত হাড়ের স্তুপগুলো।
একটা, দুইটা, চারটা, গুনছি বসে বসে বৃষ্টির ফোঁটা, অবশেষে আটটা
আট নাম্বারটার সাথে এক চিমটি রক্তও প্রবেশ করলো ঘিলুতে, মহামহিম কোনো করুণা ছাড়া যেন ছুঁড়ে দিচ্ছেন ক্ষতবিক্ষত, সন্নিবেশিত ঠাট্টা।
রাতটা যেন আর কাটবে না
ভোর যেন আর আসবে না
কাল, বিকাল, মহাকাল সবই মিথ্যা
মিথ্যার আকাল পড়ছে আজকাল
রাতটা যেন আর কাটে না
ভোর কখনও আসে না
শেষ সিগ্যারেটের আগুন নিভিয়ে দিয়ে গেছে বৃষ্টি আর রক্তে মিশ্রিত ছাটে
ফুঁকো, দান্তে, দালি— সবার দেহাবশেষ ফালি ফালি করে কেটে বিছিয়ে রাখা হয়েছে আমার পায়ের সামনে;
বিশাল বিশাল বাতাসের স্রোত, ধ্বংসপ্রাপ্ত টিনের চালের যা অবশিষ্ট ছিলো তাও উড়িয়ে নিয়ে গেলো।
এবার মাথায় এসে পড়লো, মুসার লাঠি, নোহার কিস্তি, সোলেমানের আঙটি, আদমের পাঁজর, সিলভিয়ার আধ-খাওয়া গাজর, জিশুর রক্ত।
খুব দূরে—খুব দূরে, মৃদু মৃদু শুনতে পাচ্ছি কে যেন গান গাইছে, এই ঝড়েও পাখিরা জড় হচ্ছে তার গান শুনতে;
দাউদের কণ্ঠে কী জাদু ছিলো জানি না, আমিও হিপনোটাইজড পাখিদের মতো উড়তে শুরু করলাম শব্দের পিছু পিছু।
সেই থেকে আমার ভীষণ জ্বর।
১.
মস্তিষ্ক বলে কিছু অবশিষ্ট নেই
যা আছে, থকথকে কর্দমাক্ত ক্লেশা বিশেষ
যার আবরণীতে বীর্যের মোহাবিষ্ট দুঃর্গন্ধ
২.
আমার হৃৎপিণ্ড বলতে কিছু বাকি নেই
যা আছে, রাবারের তৈরি কারো কুৎসিত পাম্মারের আবেশ
যার ভাজে ভাজে বসবাস করে শুক্রকীট
৩.
আমার ফুসফুস বলে কিছু নেই
যা আছে শুধু ক্যান্সার কোষে গিজগিজ বায়ুথলিযুক্ত আমিষ
যার পরতে পরতে জমে আছে ঘন মেঘের মতো টার
৪.
আমার বৃক্কগুলো আজ কার?
শুধু শূন্যস্থান দেখি আমি বৃক্কের বদৌলে
টাকার মতো দেখতে, কাগজের আদৌলে।
৫.
কোথায় আমার যকৃত?
যার বদলে নজরে পড়ে ভারি কাঁচের ক্যামিকাল ট্যাংক
যার একটা অংশ খেলাপি ঋণ, একটা সরকারি ব্যাংক।
৬.
আমার মেরুদণ্ড বলে কি কিছু আছে?
থাকতে পারে, আমি ত দাঁড়িয়ে আছি ঠিক-ই
আবার জমিনও বিছানায় পরিণত হয় ঠিক-ই।
৭.
আমার নার্ভাস সিস্টেম গ্যালো কই?
এত ছুরিকাঘাত, এত দহন, এত মোচড় সব যন্ত্রণা গ্যালো কই?
আমার ফালি ফালি করে কাটা মেরুদণ্ড গ্যালো কই?
———-সমাপ্ত———-