রিগ্যান এসকান্দারের সুফিয়াতন্ত্র কাব্যগ্রন্থের চারটি কবিতা: “রাবেয়া বসরি”, “পুলসিরাত”, “কাজল” এবং “ব্যাঙ”
রাবেয়া বসরি
ধর্মীয় অনুশাসন মোতাবেক, কৈশোরেই আমার ওপর তাগিদ আসে নামাজের। তবুও আমি ঠিক নামাজি হয়ে উঠতে পারি না। একদিন কলতলায় অজু করছিল সুফিয়াখালা, তার অজুর পানির ছিটা আমার গায়ে এসে পড়ে। এরপর আমি ধার্মিক হয়ে উঠি। এরপর আমি মসজিদমুখী হই।
প্রভাতে হঠাৎ একদিন মসজিদে যাওয়ার সময় দেখি, বাড়ির উঠোনে সুফিয়াখালা কুড়োচ্ছেন শিউলি ফুল। আর নামাজ শেষে ফিরে এসে দেখি, শিউলিতলায় দাঁড়িয়ে আছেন একজন রাবেয়া বসরি।
আমাদের বাড়ির উঠোন তখন পবিত্র বসরা নগরী।
পুলসিরাত
ফজরের নামাজের পর বাবা বলেন, মৃত্যুর পর আমাদের সকলকে পার হতে হবে পুলসিরাতের সাঁকো। পুলসিরাতের সাঁকো হলো চুলের মতো সূক্ষ্ম। পাপীরা এ সাঁকো ছিঁড়ে নিচে পড়ে যাবে, আর পুন্যবানেরা পার হবে দ্রুত। তারপর পুন্যবানেরা পৌঁছে যাবে বেহেশতে।
বিকেলে উঠোনে খেলতে খেলতে দেখি, আম্মা সুফিয়াখালার চুলে বেণী বাঁধছেন। আমি সুফিয়াখালার চুলের দিকে তাকিয়ে থাকি। সুফিয়াখালার চুল নিয়ে আম্মার তৈরি বেণী আমার কাছে পুলসিরাতের সাঁকোর মতো মনে হয়।
আমি আমার সমস্ত কৈশোর কাঁধে তুলে সুফিয়াখালার বেণীর ওপর দুলতে দুলতে পার হয়ে যাই।
কাজল
বিকেলটা ছিল আমার খেলার সময়। আম্মা বলতেন, ‘সন্ধ্যার আগেই হাত-মুখ ধুয়ে ঘরে ওঠা চাই।’ মাঝে মাঝেই বিকেলটা খুব সংক্ষিপ্ত হতো। আর আমি বাড়ি ফিরে দেখতাম সুফিয়াখালা চোখে কাজল পরেছে।
আমি তারে কীভাবে বলি, তুমি চোখে আর কাজল পরো না, তোমার চোখের কালো কাজলে দ্রুত সন্ধ্যা নামে, আমার খেলার বিকেল ফুরিয়ে যায়।
ব্যাঙ
ঘর থেকে নেমে সুফিয়াখালার ঘরে যেতে হলে একটা উঠোন পাড়ি দিতে হয়। বৃষ্টির দিন। উঠোনটি ঘরের সামনে শুয়ে শুয়ে ঘুমচ্ছে। ঘুমন্ত উঠোনের পিঠের ওপর পা দিয়ে হেঁটে যাই আমি। দেখি, উঠোনের পিঠের উপর জমে থাকা জলে খেলছে একটি ব্যাঙ।
সুফিয়াখালার ঘরে যেয়ে উঠি। হঠাৎ মৃদু কান্নার শব্দ। দেখি, তার চোখের পিঠেও উঠোনের মতো জমে আছে ছোপ ছোপ জল। আমাকে দেখে দ্রুত দুহাত দিয়ে মুছে নেয় সে দুচোখের পিঠ।
সুফিয়াখালার চোখেও জল আছে, এ গোপন আবিষ্কারের পর, কৈশোরে আমিও বহুবার ব্যাঙ হয়ে গেছি।