আশরাফ উল আলম শিকদারের তিনটি কবিতা: “লাশ-কাটা ঘরে”, “পুরাতন দালানবাড়ি”, “দেখা হবে রদ্দুরে”
লাশ-কাটা ঘরে
লাশ-কাটা ঘরে খবরের কাগজে মোড়া লাশ
নিজের পথ-মৃত্যুর সংবাদে গা-মাথা ঢেকে
নিশ্চুপ শুয়ে আছে, ডাক্তার এবং ডোমের অপেক্ষায়
এখানেও!
পুরাতন দালানবাড়ি
বহু পুরাতন, কারো কারো মতে হাজার বছর পেরিয়েছে, জ্ঞাত। অজ্ঞাত আরো কিছুটা সময়। দক্ষিণমুখো; সম্মুখে সাগর উতলা, পেছনে প্রাচীর অচলা। যেমন হয় সব সংসারে; পূব আর পশ্চিমে দুটো ভাগ। পশ্চিমে কথা বলে শুদ্ধের কাছাকাছি, বই খুলে পড়বার মতো। পূবে এরা প্রাণ খুলে কথা কয়। শাগ, কচু, লতা-পাতা শিকড়-বাকড় খায়। পশ্চিমি খাওয়া দাওয়া খুবই থোকা থোকো, বেগুনেও একটু চিনি দিয়ে মিঠে করে জাতে তুলে নেয়। ওরা খায় রসগোল্লা, এরা ভালোবাসে চমচম। অত অমিলেও এরা এক সাথে মিলে মিশে কাটিয়ে দিয়েছে হাজার বছর! আজো দেখা হয়ে গেলে দুপাশে দুজনের, একজন বলে কেমন আছো ভাই? অপর জনে উত্তর দেয়, চলে যাচ্ছে, দাদা।
দেখা হবে রদ্দুরে
কপালের ঘাম মুছে তাকাতেই
বাসস্টপেজে, সামনে দেখি– তুমি,
জসিম উদ্দিনের নক্সিকাঁথার মাঠটা পেরিয়ে
সবে এসে দাঁড়িয়েছো ভিড় ঠেলে,
ভিড়ের একটু সামনেই রবি
আর তোমার পেছনে
জীবনানন্দ, বুদ্ধদেব বসু এসে দাঁড়ালো
মাঝে আরো কত কে,
মুখ চেনা, চেনা চেনা মুখ,
খুব চেনা মুখ
আবার একেবারে না চেনা জনা কয়েক
এই ভিড় বাসে আমি উঠতে পারবো না
যাবো না ঝুলে ঝুলে
বরং আমি দাঁড়িয়ে থাকি এই রদ্দুরে
কোলাহলমুক্ত ময়দানের মাঝখানে হেঁটে
হেঁটে গিয়ে খুঁজে দেখবো কোনো মিছিল হবে কি না!
আমি মিছিলে মিশে
তোমার কবিতা শুনবো তখন
দেখা হবে রদ্দুরে