সানাউল্লাহ সাগর
সানাউল্লাহ সাগর মূলত কবি। এক যুগেরও বেশি সময় ধরে বাংলাদেশ ও ভারতের প্রতিনিধিত্বশীল দৈনিক পত্রিকার সাহিত্য বিভাগ, সাহিত্য পত্রিকাসহ বিভিন্ন বাংলা ভাষাভাষী অঞ্চল থেকে প্রকাশিত লিটলম্যাগে লিখছেন। কবিতা লেখার পাশাপাশি গল্প, উপন্যাসও লিখছেন নিয়মিত। তিনি ১৯৮৬ সালের ৪ আগস্ট, দক্ষিণ ভূতের দিয়া, বাবুগঞ্জ, বরিশালে জন্মগ্রহন করেন । শিক্ষা জীবনে বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিষয়ে স্নাতকোত্তর সাগর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগে ‘বাংলাদেশের ব্যঙ্গ সাহিত্য’ বিষয়ে পিএইচডি গবেষণা করছেন।
সানাউল্লাহ সাগর

পৌষের রয়ানি

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

সানাউল্লাহ সাগরের পৌষের কবিতা পৌষের রয়ানি


এক

পুরোহিতের দরজা থেকে ফিরে এসেছি,
ঘায়েল ডালে শরীর ছড়িয়ে পুড়ছি শৈশব;
আহা রঙিন প্লাবন। আফ্রিকার ঘ্রাণ ছুটে যাচ্ছো কই?
সওদাগর এমন সবুজ বৈঠকে নিলাম হয়েছিলো;
মর্দ খামে পৌঁছেছে পায়রার শব।
ঠিকানাহীন বুদ্ধিরা ছড়িয়েছে গাঢ়
যেন বিজয়ের প্রাক্কালে পিপাসায় সব
বাকিরা তব্দা মাথায় নোট নিবে নকলের!

ফাঁপানো দুপুরে জোয়াল কাঁধে কেঁদে যাচ্ছে মাটি;
ধৈর্যের খাঁটি মিথ রেখে ফুটছে শরম। ধীরে
গেয়ে যাচ্ছে খড়। ছোনের শশ্মান থেকে শাপলার ফিরে আসা,
কতিপয় বৃক্ষের আজন্মের বিলাস। তবুও শ্যাওলার মর্মরে
গতিহীন কথিকারা বেঁচে আছে চুপ।

বঞ্চিত গন্তব্য নাবালক নিয়মে বেচে দিচ্ছে দিন। রাতের ছবিতে
পৌষের টান; যেন হাবিলের গচ্ছিত রয়ানি রটে যাচ্ছে ভোরে।
যা কিছু সোহাগ পুরানো সুটকেসে পালালো সেদিন…


দুই

রক্তাক্ত ছবি থেকে চুইয়ে নামছে দিন
যেনবা তর্কাতিত বর্ষণ শেষে মেখে যাচ্ছে মাঠ,
ঘাসের মিছিলে থইথই করছে সাহস।
পায়েসের গতর থেকে মিইয়ে যাচ্ছ তুমি
পাঠালি সুবাসে সমুদ্রের বীজতলা থেকে
স্নান শেষে উন্মোচিত হওয়ার মতোন
যেনবা সতীর্থের ডাক। তবু রক্তাক্ত আমি
মৈত্রীর মৈথুনে নিভুনিভু করছি একা!

সবুজের ঘামে তোমার তৃষ্ণা ফুটেছে সরব
আমাদের বাকি দিন নগরের ফুলে ফুলে ছড়াবে এমন;
যতটা নির্দেশিকা পাঠে কাশফুল জানে মাছের গান।
কখনো বেহেস্তের প্রার্থনা নিয়ে
গজিয়ে উঠছে গ্রাম।

অগণিত সন্ধির সন্ধ্যার ফিরে গেছে চাষে
গচ্ছিত চোখে চোখ মেঘের পালাকার;
ভিজে যাচ্ছি আমি। নিজস্ব সহোদর ভেবে
জখমের দামে একদিন বিক্রি হয়েছি নাওয়ে।
ছইয়ের চুম্বনে ভেসে গেছি ফুলেল কাঁধে;
অর্ধেক দিনে আলোহীন আলো
মুছে গেছে ইলিশের খামে!


তিন

প্রস্তাবিত পুস্তক পাঠ পর্বে দেখা হবে অগণিত বৈঠার সাথে
হ্রদের তৃষ্ণা নিয়ে বিনিময় হয়ে যাবে কবরের সৌরভ
যতটুকু বিলানো বাকি তারাদের মঠে
আশ্রিত শকুনের মাকানে ছড়াবে উৎসব!
‘কতোবার ভেবেছিনু তোমারে ভুলিয়া’
ভুলি নাই কিছু; বিরহ কুসুমে যা ছিল আপন
কালো তন্দ্রায় শুকিয়েছে দাম।

দরাজ সংগ্রাম আসবে আবার মৌয়ালের ঠোঁটে
আমাদের পাপালয়ে খুলে যাবে তীর্থশপথ।
পিছনের নাম থেকে যুগল কথারা হেঁটে আসবে তীরে
ভীড়ের ঘোরে আমরাও স্খলিত হবো। মাটির নূপুরে
সজ্জিত হবে তুমি। অন্যরা ফুঁয়ে ফুঁয়ে কাটাবে সহজ…

নরকের সীমানায় আয়না বেজেছে
মুখে মুখে ভয়ের গান। কাগুজে সকাল বুক থেকে খুলে
শিশির ছোঁয়া উস্কে দিচ্ছে ঘাতকের কাল। এভাবে আরো কিছু পথ
নিয়মের গাড়ি ধরে চলে যাবে ক্রোধে। ঠিকানার
কান্নারা ঝুঁকে যাবে ভুলে বাড়ি ফেরা ধুলোর যোনিতে।
তারও অনেক পরে আমাদের হাতগুলো খুলে খুলে
রচিত হবে কুয়াশার ঘুম।


চার

বিনিময় শেষে মেখে নিও সৎকার
পঠিত সিঁথির মতো পথ ধরে পৌঁছে যেও গন্তব্যে।
যদিবা কখন ঢেউ ডেকে ওঠে নির্মল স্রোত
গুনিনের হাঁটু ছুঁয়ে হেসে দিও থরথর। আগামির
ফসল থেকে আমিও ঝুঁকে যাবো শরীরী ভাষায়।

গতিপুস্তক রেখে পায়ের ছন্দরা স্নানে গেছে কতোকাল
ফিরেনি চৈত্র-বৈশাখে! ভুলে মৌমাছি বিগলিত হেসে
তারাদের ডেকে নিলো আবারও সুগন্ধার নাভিমূলে।
আমাদের জানা হলো– চরের শোক শুধুই আমনের কান্নায়;
লেপ্টে আছে সহস্র দিন। যাদুবাড়ি ঝড়ে উড়ে গেছে কারা?

বিনা বাক্যে ছয়লাব বাথানের ভোর। আরো কিছু ভোর
নাগরিক চাঁদে বেচে গেছে নাড়ার ঘ্রাণ। নিম্নাঙ্গের খোদাই থেকে
পুষ্পিত নাম বেঁচে আছে শুধু! আমাদের সিথানে মরে আছে
বউ হারানো মাঝির চোখ। খাদের মার্জিনে গর্তের খুলি হাতে
দাঁড়িয়ে আমি– তোমাদের চৌকিতে দরদের বাতি জ্বলে;
নিভে যায় রক্তের দূর। পোড়ার যোগফল এলে
আমরাও শিখে নিবো শীতের পালাপান, কলাইয়ের জারি।


পাঁচ

প্রতিটি রহস্য উন্মোচনের বিরতিতে ভেতর ঘড়িতের উল্লাস তৈরি হয়। ফুটফুটে চিন্তার কপালে লাল ইচ্ছেরা কাতুকুতু খেলে। খুব আরাম করে বসে থাকে নিঃসঙ্গ খৈলান। পুড়তে পুড়তে আবৃত্তি তৈরি হয় আবার। যতোটুকু বেঁচে থাকে জোয়ারের ভয়।

পারিবারিক খুঁত নিয়ে পরিপাটি কুটুম আমাদের বলে দেয় কর্ষিত মাঠের ঘৃণা। চৌচির তৃষ্ণার ছন্দহীন মৃত্যু। আরো যতো বেগুনী জবান। যেনবা গরীব মুগ্ধতায় মৃগনাভি ছড়িয়েছে তুমুল।

উনুনের তীক্ষ্ণ চোখ আমাদের ছাড়িয়ে চলে যায় বিলের নন্দনে। পরাজিত হতে হতে আমরাও শিখে রাখি রহস্য এবং ঈর্ষাহত স্রোতের জিকির। আউশ ধানের ডগায় নিত্যশখের কলরব ওঠে। মিইয়ে যায় বিকাশিত রাত। পিনপতন নিরবতায় সৃষ্টি হতে থাকে গৃহহারা রহস্য।


This is an original content which is written by a DORPON author. Copying and publishing any part of the content is strictly prohibited.

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu