ইন্দ্রজিৎ রায়

পাসিং শো

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

(কোনোদিন চোখে দেখিনি এই পাসিং শো নামের সিগারেটটা, অনেক আগে ছিলো, কিন্তু নামটা আজও বুক ফাটিয়ে দেয়)


এক.


বিড়িটা নিভে যাচ্ছে বারবার,
বারবার, সদ্য গ্যাসভরা লাইটার
জ্বেলে ধরাতে হচ্ছে। এদিকে
নর্দমার সামনে উবু হয়ে বসে,
এমনিতেই শীত করছে, তার
মধ্যে বারবার, অত বড়
আগুনটা মুখের সামনে ধরে,
আগুনের গন্ধে ভয় ধরছে। আগুনের
গন্ধ, কেমন যেন একটা–

সিগ্রেট খাওয়া কিছুটা নিরাপদ হয়তো এদিকে, মানে
বারবার নিবে যায় না,
মুখের কাছে,
আগুন ধরে বারবার ধরতে হয় না,
আগুন শুঁকে ভয় করে না এভাবে। পুরো বসতিটা চুপ, মাঝরাত, বড় একটা
আগুন, লাফাই উঠছে, চোখের
সামনে, আগুনের গন্ধ, চোখ
জ্বালা করে উঠছে বারবার


দুই.


ঘর থেকে বেরোনোর সময়ে, কয়েকজন
আলো পাখার সুইচ নেভায়, তারা
দুই প্রজাতির। এক, যারা শক্তি
অপচয় কমাতে চান, আর
দ্বিতীয়, যাঁরা ভাবেন, যন্ত্রেরও কষ্ট হয়, হাঁপ ধরে।
আসলে কী জানেন,
জড় ও চেতন গুলিয়ে যায় কারো,
খুবই অল্প কারো কারো কাছে–

ভোরবেলা উঠে আজকাল, ফ্রিজের গায়ে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিই,
বলি একটু দম নে বাপ আমার, সারারাইত,
জেগে আছিস,
আহা, কেউ কি চা জল জিজ্ঞেস করেছে?
কান্না পায়, ফ্রিজ, পাখাদের দেখে, রোজ ভোরবেলা।


তিন.


আজন্ম, হর্ষবর্ধন, গোবর্ধন-কে
মাতুল ভেবেছি, আর শিবরাম চক্রবর্তীকে মা’র বয়ঃসন্ধির লুকোনো প্রেমিক। বড় হয়ে আমারও অনুরাগ জন্মে, বুঝি,
এই দুনিয়া এক ভাঙা মেলা, তাতে
মা আর শিব্রাম দুই দোকানী–

মা’র স্মৃতি যখন ঈষৎ ভাঙচুর,
তখনও মাথার বালিশের পাশে
দপদপ করছে শিব্রাম সমগ্র,
কটা ললিপপ, হজমিগুলি,
পীঠ চুলকানোর প্লাস্টিকের হাত– আমাকে একবার দেখার জন্য, একবুক কান্না। আমি আজও
শিব্রাম মহাশয়ের মেসবাড়ির
ছবি দেখলে স্থাপত্যের গায়ে
মায়ের মুখ দেখতে পাই।

রোজ দেখি, লাল ইঁট বের করা
মুক্তারাম বাবুর মেসবাড়ি,
মা বলে ডাকতে গিয়ে মনে পড়ে,
মেলা চলে গেছে, অন্য শহরে,
আমার মা ও শিব্রাম,
তাঁদের পসরা নিয়ে ভাসতে ভাসতে
এই মানবজমিন ছেড়ে যাচ্ছেন।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu