মায়া অ্যাঞ্জেলো (Maya Angelou)
মায়া অ্যাঞ্জেলো তৃণমূল থেকে উঠে আসা একটা প্রতিভা। ১৯২৮ সালে মিশৌরিতে জন্ম নেয়া এই ব্যক্তিত্ব একই সাথে কবি, গল্পকার, নাট্যকার, শিশুসাহিত্যিক, সম্পাদক, গায়ক, গীতিকার, অভিনেতা, নৃত্যশিল্পী, পরিচালক এবং মানবাধিকার কর্মী। বেঁচে থাকার লড়াইয়ে টিকে থাকার জন্য তাঁকে গণিকাবৃত্তি থেকে শুরু করে প্রায় সব রকম কাজ করতে হয়েছে। নানান প্রতিকূল পরিবেশ মোকাবেলা করে অবশেষে তিনি স্থায়ী করে নিয়েছেন নিজের নাম খ্যাতিমানদের তালিকায়। তাঁর অনবদ্য আত্মজীবনী ‘আমি জানি কেন অবরুদ্ধ পাখি গান গায়’-এর মাধ্যমে তিনি বিশ্ব সাহিত্যে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ২৮ মে ২০১৪ সালে তিনি মৃত্যুবরণ করেন।
তাঁর কবিতা অনুবাদ করেছেন প্রত্যয় হামিদ।
অবরুদ্ধ পাখি ( Caged Bird)
একটা মুক্ত পাখি
বাতাসে সওয়ার হয়ে নেচে বেড়ায়
স্রোতের প্রান্ত অবধি ভেসে থাকে
আর পাখায় মেখে নেয় সোনালী সূর্য
ঠিকানা তার বিশাল আকাশ।
অথচ ছোট্ট খাঁচায়
বন্দী পাখিটা দেখে না কিছুই
খাঁচার শিক ছাড়া
পাখা তার ছেঁটে দেয়া
আর পায়ে বাঁধা শিকল
তাই কণ্ঠে সে তুলে নেয় গান।
সেই বন্দী পাখি গায়
কী জানি কিসের আশায়
কণ্ঠে তার ভীতি অসংখ্য
তবু সে স্বপ্ন দেখে
তাই সুর তার ভেসে যায়
মুক্তির গান হয়ে
দূরের পাহাড়ে পাহাড়ে।
মুক্ত পাখিটা যখন খুশি উড়ে বেড়ায়
বনের ভিতর দিয়ে প্রবাহিত বাতাসে বাতাসে,
ভোরের ঘাসে ঘাসে সাজানো অসংখ্য খাবার
আর সমস্ত আকাশ যেন তার নিজের ঘর
অথচ বন্দী পাখিটার স্বপ্ন মাটিচাপা রয়
তার ছায়া হয় দুঃস্বপ্নের আর্ত চিৎকার
পাখা তার ছেঁটে দেয়া আর পায়ে বাঁধা শিকল
তাই কণ্ঠে সে তুলে নেয় গান।
সেই বন্দী পাখি গায়
কী জানি কিসের আশায়
কণ্ঠে তার ভীতি অসংখ্য
তবু সে স্বপ্ন দেখে
তাই সুর তার ভেসে যায়
মুক্তির গান হয়ে
দূরের পাহাড়ে পাহাড়ে।
অঘুম (Insomniac)
কোন কোন রাত আসে–
রাতভর দূরেই থাকে ঘুম,
থাকে লজ্জাবনত অথবা সক্রোধ।
কৌশল আছে যত
ডাকি সবাইকে–
সবগুলোই নিষ্ফল হয়,
ধ্বসে যায় তাদের সকল অহঙ্কার;
কেবল থেকে যায় কষ্টসকল।
চলমান সময় (Passing Time)
ঊষার মতোন ত্বক তোমার
আমারটা কস্তুরিসম।
তোমারটা সূচনা
এক সুনিশ্চিত সমাপ্তির।
আর আমারটা
সমাপ্তি এক সুনিশ্চিত শুরুর।
আমি জানি, অবরুদ্ধ পাখি কেন গায় (I Know Why The Caged Bird Sings)
একটা মুক্ত পাখি বাতাসের উপরে
উচ্ছ্বসিত হয়, নিজেকে ভাসিয়ে দেয় প্রবাহে
আর কমলা রোদের আলোয়
ডুবিয়ে দেয় পাখা–
আকাশটা তার অধিকার-আবাস।
কিন্তু অবরুদ্ধ যে পাখি
খাঁচার ছোট্ট পৃথিবী ছাড়া দেখে না সে কিছুই
ছেঁটে দেয়া ডানা
অবরুদ্ধ পা–
তাই কণ্ঠে সে তুলে নেয় গান মুক্তির।
অবরুদ্ধ পাখি গায়
স্বরজুড়ে অজানা
অথচ প্রত্যাশিত কিসের ভয়
তার সুর ছুটে বেড়ায় পাহাড়ে, সুদূরে
কারণ সে গায়
মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়।
মুক্ত পাখির বোধে উন্মুক্ত বাতাস
হাওয়ায় হাওয়ায় গাছেদের নাচন
রৌদ্রজ্জল উঠোনে সজ্জিত আহার– সুস্বাদু কীট
পুরো আকাশ তার মনে হয় নিজের অধিকার।
অথচ একটা অবরুদ্ধ পাখি দাঁড়িয়ে থাকে স্থির স্বপ্নের খাদে
ছায়া জুড়ে তার দুঃস্বপ্নের তীব্র আর্তনাদ
তাই সে কণ্ঠে তুলে নেয় গান।
অবরুদ্ধ পাখি গায়
স্বরজুড়ে অজানা
অথচ প্রত্যাশিত কিসের ভয়
তার সুর ছুটে বেড়ায় পাহাড়ে, সুদূরে
কারণ সে গায়
মুক্তির আকাঙ্ক্ষায়।