চাণক্য বাড়ৈ
জন্ম ২৮ ফাল্গুন, ১৩৮৮ বঙ্গাব্দ (১২ মার্চ, ১৯৮২) বাগেরহাটের চিতলমারী উপজেলার রায়গ্রামে। মা পিপাসা বাড়ৈ, বাবা চিত্তরঞ্জন বাড়ৈ। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর। উল্লেখযোগ্য প্রকাশিত গ্রন্থ: পাপ ও পুনর্জন্ম (কাব্যগ্রন্থ), কাচের মেয়ে (উপন্যাস)।
চাণক্য বাড়ৈ

গুপ্ত ঝরনার দিকে অভিযাত্রা

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

চাণক্য বাড়ৈর তিনটি কবিতা


নাগলিঙ্গম


ফুটেছ অদ্ভুত ফুল– নাগলিঙ্গম। এই অরণ্য-আড়ালে থোকা থোকা ফুটে আছ সহস্র স্বয়ম্ভূ তারা– নীলাভ অন্ধকারে জ্বেলেছ রূপাগুণ– দেহদীর্ণ পুষ্পের প্রদীপ।

এই বিহ্বল বসন্তের দুপুরে ছড়িয়েছ ধুপ-ঘ্রাণ– বনময়–; তপোবন-বালিকার কোলে ছিনিয়ে আনা সরস্বতীর বীণা– কস্তুরীতাড়িত হরিণচঞ্চল হাতে উদারা, মুদারা, তারা… ঝরছে শিবের ফুল– স্বেচ্ছা-সন্ন্যাস নেওয়া রহস্য-রমণী পুরোনো আটায় রুটি বেলা রেখে পেতে আছে কামনা-আঁচল– কুষ্ঠিনির্দেশ মেনে কুড়াচ্ছে পাপ ও পুনর্জন্ম। তোমার প্রহরায় রত অনন্ত, বাসুকী, পদ্মা– মাথায় মণি আর মুক্তাওয়ালা সাপ…

রহস্যকুসুম, হরিৎ-পালক পাখিদের দেশে তোমার কিংবদন্তি শোনা যায়।


গুপ্ত ঝরনার দিকে অভিযাত্রা


বেরিয়ে পড়েছি সাপ-নাচা জোছনার ভেতর, যারা উঠে যেতে চায় সাঁচীর স্তূপ বেয়ে, তারা সব ফণা তুলে আছে; বেশ, তারা আলগোছে গেঁথে দিক বিষদাঁত, এর চেয়ে চলো লরিয়া-নন্দনগড়ে, ওখানে আকাশের দিকে মুখ করে সারি সারি অশোকস্তম্ভ খাড়া হয়ে আছে, চলো, তার সিংহমুখ-চূড়ায় চুমু খেয়ে আসি। তারপর চলো, গুহার ভেতরে সেঁধিয়ে দিয়ে আসি উত্থিত ফণাগুলো, কে না জানে আমরা তুখোড় বেদেনি, একদিন যক্ষীর দেহ নিয়ে শুয়ে ছিলাম দিদারগঞ্জে, পাটনার উপভূমিজুড়ে, প্রত্ন-প্রতিমা ভেবে আজ যারা উপচার নিয়ে আমাদের অপেক্ষায় আছে, যাই, তাদের মুঠোয় তুলে দিয়ে আসি কাক্সিক্ষত আপেল…

ওরা দেখুক, কালো মেঘের কিনার ঘেঁষে দুটো তারা, তার নিচে ফুটে আছে গোলাপ, ওরা নিপুণ অভিযাত্রিক, আপেল বাগান রেখে পৌঁছে যাবে মাথিনের কূপ, এরপর মাড়িয়ে যাক আরও কিছু গুল্ম-বিরুৎ, এরপরই ঠিক ঠিক পেয়ে যাবে গুপ্ত ঝরনার খোঁজ–

এইবার, এই উষ্ণ জলে, ওরা সেরে নিক স্নান


প্রকৃত ঈশ্বর


বাড়ছে চন্দ্রকাতরতা– আমরা চলেছি মঘা-অশ্লেষার রাতে– গন্তব্য জানি না বলে খুঁজে ফিরছি সপ্তর্ষিমণ্ডল– গুরু নানক, এই তো সেই পথ, যে পথে ফিরে এসেছিল ভাওয়াল সন্ন্যাসী–

পেরিয়ে যাচ্ছি ঘন কুঁচবন– কেউ কেউ বলে, যেতে হবে বিশাখাপত্তম। করোটিতে প্রশ্ন-পিপাসা– অথচ বিস্ময় ছাড়া আর কোনো যতিচিহ্ন নেই। কেউ কেউ বুঁদ হয়ে আছে পাণিনি ও চার্বাকে, কেউ সাংখ্য বা যোগে– অথচ আমরা যেতে চাই, যেখানে শূন্যই প্রকৃত ঈশ্বর।

সঙ্গে নিয়েছি উইকিপিডিয়া আর সুমহান ঘড়ি– সূর্য ও চন্দ্রের যিনি নির্ভুল অনুবাদক। মহাশূন্যে কেউ নেই- শুধু উষার ইশারা–

ভোর হলো– আমাদের চারপাশে ক্রুশকাঠ, শিবলিঙ্গ; সারি সারি ভেজাবুদ্ধের দল…

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu