মজুমদার নোভেলের কবিতাগুচ্ছ
০১।
ব্যাপার-টা দিনকাল না দিয়ে দিলকাল দিয়ে শুরু হইলেও পারতো, কিন্তু পারে নাই– মানে, যে ব্যাপার-টা হয় নাই। যাইহোক– ‘তো দিনকাল ক্যামন যায়’ দিয়ে শুরু করতেই ‘কেমন যায়’ এর জিজ্ঞেসবোধক কৌতূহল খুঁজতে গিয়ে আবার কেমন কাটাকুটির ব্যবচ্ছেদ ভাঙতে ভাঙতে প্রশ্ন-টা দাঁড়ায়?
পুঙ্খানু পুঙ্খানু বলতে গেলে ধরো যে– ‘একটা সিমেন্ট খসা দেয়ালে চুনাধরা টানপোড়ন রোদের মতন জড়তায় নিভানো ঘুণঝরা সন্ধ্যা হয় হয়–
টেরাকোটার চোখে সর্ষেরোদ পরা ঘুমের মতন শান্তি’-এর এমন প্রশ্নচিহ্নিত উত্তরে–
বাঁশিফুলের রাতের মতন চাঁদপোড়া দোলনচাঁপার মতন বেদনার ঝিঁ ঝিঁ ডাকা সমগ্র রাত অপেক্ষা হ’য়ে থাকে বেলিফুলের গাছের পাশে বসে কাটাবার অনুভব!
০২।
তোমাকে সর্বশেষ দেখার পর’ দেখতে পারিনি আর–
আনাড়ি ভোর, শালিক সকাল, কাঠুরিয়া তনতনে দুপুর, হুডখোলা রিক্সা, রঙ টঙের বিকেল, সর্বশান্ত সন্ধ্যা, অথবা অলকানন্দা রাত।
কতবার তোমাকে আপোষ করেছি, ট্যালির সমীকরণে বিন্যাসে বন্টনে–
রণপথ, পথের পথিক– যে গন্তব্য একান্ত তুমি; সে গন্তব্য শহরের কোথাও কোনো ভীড়ে মৃত্যুর তীরে– আমার তুমি চুরি হ’য়ে গেছে!
০৩।
রক্ত প্রবাহে শ্লোগান উঠেছে– ‘তোমাকে, তোমাকে চাই’ শুনি– শুনতে শুনতে দুপুর, দুপুরে রোদ্র, রোদ্রে আদ্র, আর আদ্রে শহর–
ইদানীং হঠাৎ হঠাৎ ‘দৈনিক রহমান সংবাদ’-এ কিঞ্চিৎ খবর– রহমান নগরে মেঘ, জল, বৃষ্টি,
সমসাময়িক বিষয়, আর ফাইল অব মারজুক থেকে বেরিয়ে আসে কথা, কথা থেকে কবিতা–
‘তোমার জলে ভিজবো বলে শুকনা হ’য়ে থাকি’
০৪।
ভাবছি,
কই রাখবো তোমারে–
আমি তো সমুদ্রের ছেলে, শূন্যে ঘুরি থাকি ফিরি, অঙ্গারে জ্বলি নেশায়, ভোরের নরমে ঘুমিয়ে পরি রোজ রাতে।
দুপুরবুক নিয়ে রাস্তায় চলি ফিরি ঘুরি–
কবিতারা সিঙ্গারায় ফুরাচ্ছে ভোগ, আমিও বসি দুটো বিড়ি লিকার কম চিনি বেশি চা-এ
ডাহুকের বিকালের মতন কাক হইয়ে যাই আবার সেই শূন্যের ঘরে, যেইখানে আমার ছিল আছে থাকবে ‘একাকিত্ব নিবাস’
০৫।
আমি আপনাকে একটা বঙ্গোপসাগর এনে দিব–
খাবেন? কিংবা আমাজন ফুসফুস?
বা জেরুজালেমের মতন সুন্দরী নগর? তিব্বতের নিষিদ্ধ চূড়া?
নয়তোবা– এথেন্সের কোনো কাঁচাপাকা গলির মোড়?
০৬।
এভাবে ছেড়ে যাওয়াও সুন্দর? এবং আমি আহত লাশ, বেঁচে থাকবো এই নরক নাগরিক বাণিজ্যে।
এবং তোমার প্রতিটি সন্ধ্যা হোক পৃথিবীর সব থেকে সুদর্শন, যেন কখনও-ই যিশুর মতন আহত আত্মা না হোক।
এ আমার আন্ধারাশীর্বাদ।
০৭।
ঋণাদগ্ধহৃদয়, বন্ধক দিব কারে? বলো…
০৮।
বাদামী বিকেলে কান পেতে শুনতে পারো তুমি বাতাসের কণ্ঠে–
ডাহুক-এর ডাক!
বহুদূর’ ফেলে রেখে আসা শৈশবে স্মৃতি; বিদুখী অতীত; আর, জীবিত লাশের চাপা বিষণ্ণ আর্তনাদ!
০৯।
যে মুদ্রার নাম লেখা হয়নি কখনও পৃথিবী খোদাই করে মাটির জমিনে
ক্ষুধার্ত পাকস্থলী খোঁজে– ফুটপাত ধরে হাইওয়ে, নির্জনতা থেকে নিঃসঙ্গতা।
আমি সে মুদ্রার নাম জপি– কখনও খোদার নামে, কখনও ক্ষুধার নামে।
১০।
অভিনয়?
দেখাও তুমিও; দেখি আমিও,
চোখের ভিতর বৃষ্টিগলা মেঘ কেটে গেলেই তুমি আসো, কাস্মিরি শালমুড়ি দিতে দিতে এসে আমার পাশে বসো। কেমন কর্পো-কর্পো গন্ধ বেরোয় তোমার ম্যালন্ডিক ছবি থেকে। সহ্য হয় না– মনে মনে বললেও অসহ্যকেই সহায় করেই বিগত কাটা মেঘগুলোর মতোই এবারও ঝাপসা-ফর্সা আলোর কম্বিনেশনে তোমার কৃত্রিমতার বোটানয়িক গার্ডেন দেখি–
তোমার হাওয়ার আঙুল আমার খুসকো মাথায় ফিনফিনে বিলি কেটে দিয়ে যায় ওই মেঘের মতন।
ঈশ্বরমঞ্চ।
১১।
দেখ হিমালয় থেকে হিমোগ্লোবিন পর্যন্ত;
একাধারে সুশীল সুতোর লালরঙ, ফুটপাতে হরেকমনগামী বাদামি টঙ, চা-রঙের কাপ ও ধোঁয়াধরা সিগারেট–
বটসন্ধ্যার মেঘআলো, দমবন্দি শালিকের সকাল, পিরামিডিক রোদ, আর মার্বেল দুপুর, ডিজেলবালিতে পুড়িয়ে ফেলা বিগত কয়েকসংখ্য অনাহত অনাত বিকেল।
১২।
ঘুমিয়ে গেলো তিনতলা বাড়ির চৌ-কোণের ঘরটাও
বারান্দা তখনও ফুঁকছে সিগারেট; ফুঁকতে থাকে–
অন্ধকার মসৃণতায় ডুবে যায় আনকোরা গলির বর্তমান,
পায়ের নিচে মাড়িয়ে ফেলা আরও ক’টা শেষ– [না এমন] ধুলো
‘প্রেমিকাফুল নাক হ’য়ে যায়; কান চুড়ি হ’য়ে যায় চিলে’