নাফিসা খানের তিনটি কবিতা
একদিন ফিরে এসো শিউলি গন্ধে
একদিন ফিরে এসো,
নগর সভ্যতার মায়া কাটিয়ে কাশের আপ্যায়নে।
ছুঁয়ে দেখো ঘুম কিশোরীর তারায় বাঁধা কাক-ভোর,
কনক রঙে ক্লেদিত পায়ে, আকাশবাণীর গানে,
বনবিবি এখনও গৃহিণীর সাঁঝবাতির আধাঁরে
প্রতি সন্ধ্যায় নেমে আসে চালাঘরে…
একদিন ফিরে এসো
পুরুষের বেশে, গেঁও মেয়েটির শরীরজুড়ে
অথবা আকন্দের বাউরা দোলা পড়ন্ত রোদ্দুরে!
শিউলির ভোর হয়ে হারিয়ে যেও, হারিয়ে যেও
তার সাথে কোনো এক অজানা আলপথে ।
একদিন ফিরে এসো
দোতারার টানে, বাউলের অচিন সাধনায়,
আজও আছে সেই মোহ আউশের দুচোখে,
শুধু তুমি চেয়ে দেখো, শুধু তুমি ছুঁয়ে দেখো।
যদিও সে মেঠো গাঁ ভরে গেছে রক্তের রঙে,
শববাহী ডিঙিখানি অকাতরে চেয়ে আছে
মায়ের চশমার কাঁচে, সাতবিবি ফিরে যায়…
একদিন ফিরে এসো,
একদিন ফিরে এসো, ফিরে এসো সোহাগের বেশে
হৃদয় গলা কচুরিপানার বনে বাগদী মেয়েটির
ভাতার হয়ে কৃষ্ণপক্ষের শুভক্ষণে, ফিরে এসো!
মুক্ত ছয়
মৃত্যু! কখনও
বিদ্রোহ, প্রতিবাদ, চেতনা, কলঙ্ক, নিশ্চয়, দাবীহীন
কনভয়, দোসর নেই, দোআঁশলা মাটির কণিকা,
উঠে আসে পিছুটানের আর্তনাদ,
শহিদ ভাবাদর্শ, রেডক্রস ছাড়িয়ে
হিংস্র দাঁতের ফাঁকে মাংসের মতো জড়িয়ে,
পর্দার দুই পিঠ বুঝে নেয়, মৃত বাবার মলিন হাসি
অথচ আমরা উপপাদ্যে হাত লাগাই, নিহত হাত!
প্রতিবাদের শেয়ার সূচক মেনেই কমছে, এ যেন
চার কাঁধে বেঁচে থাকার লড়াই… থেমে যায়,
মৃত্যু!
খ্যাতির অন্তরালে চাকায় পৃষ্ঠ আউশের
ক্ষতবিক্ষত মরদেহ, অনভিপ্রেত অন্ধকারের মোহ,
অথবা সামগ্রিক অপ্রাপ্তের নিরন্তর মুক্তি!
দেওয়াল
তোমার সাথে দেওয়াল তুলতে গিয়ে
আমি নিজের মধ্যে গড়েছি অনেকগুলো দেওয়াল,
প্রতিটি কোষে কব্জা জমিয়েছে শব্দহীন মৃত্যু
কোথায় শেষ, কোথায় বা শুরু?
গল্পের দৈর্ঘ্য-প্রস্থ ছাড়িয়ে দেশলাইয়ের কাঠি দলছুট ,
মুখোমুখি দুটি দেওয়াল!
তর্জ্জনীর উপরে বাঁধা স্পর্শের দাগ আত্মঘাতী,
রক্তাক্ত ব্যাসার্ধের টুকরো সাজাতে সাজাতে পুরো
শরীরটাই দোহাই অথবা আগুনে ভেজা রক্তচন্দন,
শেষ নয়, এটাই আরম্ভ…
তারপর?
বিমূর্ত বিছানার সাথে নিঃসরিত ইঁটপোড়া গন্ধ
জড়িয়ে নিয়েছে কিছু অসাধ্য, পিরিতি নয়।
সারিবদ্ধ দূরত্ব, তুমি ও সে, বা আমি!