মুজাহিদ আমিন

একবেলা হাসি

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

মুজাহিদ আমিনের তিনটি কবিতা


কুসুমগরম জল


আজকাল তুমিহীনা তুমিটা
বড্ডবেশি যাপন হয়
যে দ্বিতীয় শ্রেণীতে আমি আর মানিক
ক্লাসের একফাঁকে তলপেট হালকা করতে জোড়বেঁধে স্কুলের পুব-হালুঘাট মাটির দুই-সড়কের মাড়িধরে লোমশ দুর্বাতলায় হালকা রসালো মাটির তলপেট সোজা প্যান্টখুলে হাঁটুগেড়ে বসতাম
সেখানে গরমগরম জলসিরিঞ্জের মুখে পেটফেটে
চার ইঞ্চি লম্বালম্বি এবং তিন ইঞ্চি গভীর
একটি দর্শনীয় ক্ষত আবিষ্কার হতো
আবারও পরদিন নতুন করে ক্ষতটাকে ঘুম থেকে কান ধরে জাগিয়ে দিতাম

আর ওই দিকে শাপলা শেফালিরা
তলপেট ভর্তি করতে অফিসকক্ষ হতে কাঁচের মাঝারি গ্লাসে হাত মেরেমেরে
টিউবওয়েলে পাশে হাসতে হাসতে দাঁড়াত
পা দুটো ফাঁক করে
এবার তলপেটের কাছে লোহার হাতলটা ধরে জোরেজোরে চেপে যেতো
একমুখ কসুমগরম জলবমিতে গ্লাসটি ভর্তি হলে
সোজা গলাবেয়ে শেফালির তলপেটে নামতো

কয়েক ফোটা ঠোঁটের কুনুবেয়ে থুতনি
আরেকটু নিচে গড়াতেই বাম হাতের তালুর উল্টোপিট চালিয়ে দিত

রসালো মাটির ক্ষতটা ইদানীং
বুকের বা’দিকে
কেউ নিত্যদিন-ই নতুন করে জাগিয়ে দেয়
চোখ দিয়ে ফোঁটাফোঁটা হালকা গরম জল টুপ্ করে গালে
তারপর তর্জনীর মিনারে ওঠে হারিয়ে যায়


একবেলা হাসি


রাজপ্রাসাদে একটি গোপনরুম
সুবহে সাদিকে আম্মিজানের পবিত্র হাতে খোলে দেয় পুবজানলা
ধবধবে সাদাপর্দা চিরে
ভোরের একঠোঁট কাঁচা-হলদে হাসি রাজকুমারীর খালিপায়ের পাতার উপরিভাগে লোটাল
সেই অপরাধে কুচুরমুচুর আরম্ভ করে
মৃদু-বুকনিতে আগুন্তক বসন্তের শুকনো পাতার কাঁচাহাতে আবেগি চিঠির ভাষা
ভয়তে মড়মড় পাড়ার শিশুরমতো ওঠে
রাতভর কুমারীর নৃত্যসভা
পালঙ্কে একলা ঘরাঘরি এলোমেলো চুলেঢাকা মুখ
আলসেমিতে উপুড় হয়ে থাকা ভূতুরে কাণ্ড
কুঁচকে যাওয়া গায়ের জামা
ছোটর বারংবার ডাকে বিরক্তি
লোডশেডিং-এ ঘাম জড়ান থুতনি–গলারশহর
চোখ মিটমিটে তাকিয়ে থাকা খোলা জানলার সেঁতসেঁতে গ্রিল
অর্ধফুটন্ত তাজাফুল লকলকে আগাঘুরা ডালিম-ডাল
শিথানে খোলা লেকচারশিট
মোবাইল হেডফোন
গায়ে জড়ান ওড়নার অসমান এলোপাতাড়ি ভাজ
এক হাতভরা বেহিসাবি কাঁচের চুরি
অন্যহাতে চাররঙা সুতোয় মুড়ানো ফর্সা চিকন-চাকন কব্জি
তবু আজ একবেলা হাসির জন্মদিন


আয়েশ


হেপির দু কনুই অবধি রেডিমেড মেহেদির টকটকে রঙ
আর নিখুঁত রুচি-নকশা দেখতে দেখতে দুটোহাত ছুয়ে দেখার ব্যাপারটাই ভুল করে বসেছি
রুক্ষ চেহারা, অপূর্ণ বায়োগ্রাফি, পুষ্টিহীন মায়ের গর্ভপাত
আর পড়শীর ঘরে প্রসব নেওয়া শেষ সন্তানটি লাল-সবুজের কাঁড়িকাঁড়ি রঙের পেয়ালা হাতে পেয়ে খেলায় আর খেলায়
এক মায়ের জন্ম স্বপ্ন–স্বাদহীন

ছোটবেলা নানা বাড়িতে রান্না ঘরের এককোণে ধানের মাচায় হাসের ডিমে তা দেওয়া নকল মা মুরগীটাকে তুলে এনে তার পালক ছিঁড়ে নানিকে নাকেখত দিতে দেখেছি
এদশা দেখে মন খারাপ হলেও কারণটা কিন্তু আমাকে খুবই সুখী করত
এ সময়ে মেহেদি, লাল-সবুজের আয়েশ ছুঁড়ে ফেলে আপাতত নাকে খত দেওয়া ওয়াজিব

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu