সৌগত দেবনাথের ৩টি কবিতা
দূরদর্শিতার সূত্রাবলি
দূরদর্শী মানুষের ভ্রমণে লেখা থাকে চোখ
তারা বর্তমানে থেকে কথা বলেন ভবিষ্যতের
তারা জানেন, গাছ কাটলে পৃথিবীর তাপমাত্রা বাড়ে,
যুদ্ধ শুরু হলে শিশুরা খেতে পায় না এবং
প্রতিটি প্রেমই নিজের প্রতি অন্যায়,
তারা বলেন–
কারো হাতে বন্দী হলে ‘প্রেমিকা’ নয়,
‘মনিব’ সম্বোধন করতে হয়।
তারা অসুখ বোঝেন
শীত কাটাতে গায়ে লেপ জড়ান না,
চলে যান মানসিক চিকিৎসকের কাছে,
তারা জানেন, মস্তিষ্ক ও শরীরের হিমে যা পার্থক্য
তাই প্রেম ও ঋতুকে সংজ্ঞায়িত করে
তারা মানুষকে পড়েন গাণিতিক সমস্যার মতো,
অঙ্ক কষে প্রমাণ করেন
দুই মিলে এক হওয়া সম্ভব কেবল বিয়োগে।
তাদের দেখি আয়নায় চোখ বরাবর অকাল বৃদ্ধ
তবু গতিশীল হলে একটি বাঘ
ক্ষুধার মতো আকুল ভেতর থেকে ডাকি
আমি দূরদর্শী
তাই তোমার থেকে দূরে দূরে থাকি।
হেঁটে চলা সাম্পান
তোমার চারদিক এক পক্ষ ঘুরেও যদি পৃথিবী না হতে পারি
জেনো, আমার লক্ষ্যে কেন্দ্র তুমি নও,
আমার লক্ষ্য অতি প্রয়োজনের সীমিত উদ্যোগ
দুবেলা আহারের নিমিত্তে সত্তর বছর বেঁচে থাকা
এবং তোমার ভেতর যে প্রতিজ্ঞার বৃদ্ধাশ্রম
তাতে বয়সন্ধির কৌতূহল এনে হঠাৎ উড়ে যাওয়া ছাই,
তবু একদিন
বাঁচতে-বাছতে মনে পড়ে, হায়,
যারা একসময় আত্মীয় হয়ে এসেছিলো
তারা একদিন অতিথি হয়ে চলে যায়!
নির্ঝঞ্ঝাট বিষ!
একাই খেয়ে ফেলো ভবিষ্যৎ,
খেয়ে ফেলো পাথুরে মনের সংগোপনে
জমিয়ে রাখা হিউমাস,
নাইবা গজাক কোনো চারা, শস্য, ফুল
নাইবা বলি তাকে ধন ধান্যে পরিপূর্ণ জীবন।
আমি বুঝে গেছি–
সবকিছু খেয়ে ফেলে যখন খিদে ফুরোবে তোমার
তখন তুমি অতীত থেকে জাবর কাটতে বসবে,
স্মৃতির ওয়েটারকে বলবে বিল বানাতে।
সুখনিদ্রায় যেতে ক্ষুধা ফুরোনো খুব প্রয়োজন,
সবকিছু তবুও শেষ হলে অবশিষ্ট কিছু হাড়গোড়
কাণ্ডজ্ঞানহীন ড্রাইভারের মতো মহাসড়কে একটা দুর্ঘটনা বাধিয়ে
হেঁকে আনবে গণ্ডগোল,
সালিশি কায়দায় হাজারো উজবুক পথচারী
তোমার দরজায় সেদিন কড়া নেড়ে বলবে, “সন্ধ্যে হয়ে গেছে,
প্রদীপ জ্বালোনি কেন?”
তুমি সেদিন কোনো প্রদীপ জ্বালতে পারবে না।
শুধু বুঝবে,
খিদে তোমার ভেতরের আগুনটাকেও গিলে ফেলেছে!