সেবক বিশ্বাস

মৃত্যু ও অন্যান্য

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

সেবক বিশ্বাসের ৫টি কবিতা


আমার ছায়ারা


প্রায়ই তিনটে ছায়া আমার সাথে ঘোরে ঝুলানঘড়ির জিপসি কাঁটার মতো!
অনেকবার ভাঙতে চেয়েছি ওদের।
তাড়িয়েছি– মেরেছি– কখনো বা ভয় দেখিয়েছি উলঙ্গ মুখে;
বরাবর ব্যর্থ আমি লুকিয়ে গেছি গাছেদের আড়ালে।
সময় শেষে নিচু দিয়ে উড়ে যাওয়া কপ্টারের মতো
ছায়ারা হেসেছে ব্রুটাসের ছুরি হাতে;
আমার ছায়ারা মুখ খোলে না।
কেবল চুপচাপ কপাট বন্ধ করতেই ওরা লাফিয়ে ওঠে ঘাসফড়িঙের মতো;
মধ্যদুপুরে ওরা সতর্ক বেড়াল,
কখনো বা ঝুঁটিওয়ালা কালো কবুতর টহলদার রোদে।
তবু গোধূলি এলেই আমার ছায়ারা গোপন গন্ধরাজ–
রাত্রি এলে আমি নিজেই ছায়া হই ছায়াদের কাছে।


যথারীতি


অজস্র আলাপ চারপাশে,
চোখের সামনে দৌড়ে ফেরে অসংখ্য অজ্ঞাত গাছ–
মরা কাঠের মতো কালো কুকুর,
সবুজ ঘাসের গ্রিবা,
মৌলিক চিৎকার,
কাঁটার মতো সঙ্গতা,
প্রেমের প্যাঁচানো শেকড়,
সতর্ক চোখ,
মানিব্যাগে বেঁচে থাকা ভালোবাসার উচ্চাঙ্গ সঙ্গীত।
অদূরে তফাৎ জলে ছায়ার অরক্ষিত ঘুম,
উড়োচুলে স্তব্ধ যাত্রীর চেয়ে থাকা,
শয্যার গানে থেমে যাওয়া আঁচলের সুর;
উড়ছে– উড়ছে– কেবলই উড়ছে দিগ্বিদিক মদের মায়ায়।
পরিচিত দ্রাবিড় পথে অতৃপ্ত ডানার মিছিল!
রোদ ওঠে নতুন সময়ের–
তবু কিছু অন্ধকার ছুটে যায় যথারীতি আলোর পাশাপাশি।


মৃত্যু


মৃত্যুরে ডেকেছি কাছে গোধূলির বলয়িত উৎসবে;
দিনান্তের প্রিয়তম ছায়ায় সব খেলা শেষে
নক্ষত্রের বুকে– অনন্তের অগাধ শূন্যতায়–
তার অস্ত মুখের মতো মলিন পথে হেঁটে যাবো দীর্ঘ প্রণাম শেষে পৃথিবীর পায়ে;
সংসারের সত্যে ফেলে যাওয়া প্রেম,
গান,
গোপন মূল্যে কেনা মরণের ঘুম–
দীর্ঘতম সুন্দর ক্রোড়েরত বিমূঢ় উঠোনখানি;
মৃত স্বপ্নের ভীড়ে জেগে থাকা করুণ হাসির পল্লবিত ঠোঁট।
কোনো এক বেহালার রাতে সপ্তসুরের
আশ্চর্য অনুভবে নিঃসংকোচ আলোর সন্ধান–
গুঞ্জরিত বিন্দু বাতাসে আত্মার উপচার!
রক্তসিন্ধু থেকে চাঁদের নাভিমূল–
নড়ে ওঠা সত্যের শঠতা
নিষ্ফল সমূদ্রের বাতাস ভেঙে আগুনের পথে;
লুপ্ত জলের তৃষ্ণা রাতের বাহু থেকে ক্রমে ক্রমে খয়েরি চেতনায়!
ইতিহাস মরে কি লোকোত্তর কালকূটে।
চিরস্থায়ী প্রশ্নের মতো একান্ত বিশ্বাসে প্রহেলিকার পৃথিবী থেকে সান্ত্বনার আকাশকুসুম–
ছিঁড়ে যাওয়া সময়ের গিঁটে জন্ম নেয় নতুন উত্তরণ।
প্রাচীন পাণ্ডুলিপির অন্তরালে যে নিঃসঙ্গতা একাকী হিজলের মতো–
তার মূঢ় পাতায় তিমিরের ছায়াপথ।
আত্মপ্রসাদ– খুলে যাওয়া নিষ্ফল পালকের মতো উন্মুক্ত বস্তুপুঞ্জ,
নগরের সেলসিয়াস ক্রন্দসী মাটির কঙ্কালে;
তবু মানুষ এক গ্রাম।
কংক্রিটে ঘাসের মতো শুয়ে থাকে কত পাখি,
অন্তহীন সময়ের সুরে গান ধরে পৃথিবীর প্রথম নদী।
পশ্চিম থেকে পূর্বে অতৃপ্ত যুবকের মতো
কালের দূরবীন নিঃশব্দে চেয়ে দেখে
প্রান্তরে প্রান্তরে কেবল মুছে যাওয়া হরিণের হাড়,
বিক্ষত বুকের রিক্ততা, নিঃশ্বাস–
মুক্তোদানার মতো দুঃখ,
অচল ঘড়ির জীবনপ্রবাহ;
কালে-কালান্তরে পথহাঁটা নবীন উল্লাসে অনুরাগ,
পরিহাসের পুরোনো আখ্যান–
শোকের শ্লোকে উজ্জ্বল অন্ধকারে গাঁথা মৃত্যুর শঙ্খমালা।


অলৌকিক অর্কেস্ট্রা


ওই নৈঃশব্দ্যের রথে উড়ে যাওয়া শূন্যতা
এক দুর্জ্ঞেয় আকাশ;
সময়ও রাত্রি ঝরাতে জানে;
নিরুক্ত পথে পাখা মেলে বসে থাকে দুরূহ ময়ূর।
সাদা মেঘের দিনে ছাপার অক্ষরের মতো
নিনাদ তুলে মরে যায় মগ্ন মৌমাছি;
প্রতিবিম্বের ব্যবচ্ছেদে ব্যস্ত প্রান্তিক মন তরঙ্গ আঁকে তার।
আসলে অলৌকিক অর্কেস্ট্রায় বেজে ওঠা নিঃসঙ্গ শোক পৃথিবীর শেষ সঙ্গীত।


স্রোতের গল্প


নিগূঢ় প্রতীতি ভেঙে জলেরা শৈবাল আঁকে মুদিত নিঃশ্বাসে।
রাত্রির কী দোষ সূর্য ডুবে গেলে!
কিছু দান এমনই– মুছে যাওয়া বাতাসের এসরাজ;
যে সুর পাথরে প্রোথিত সব দেয়ালে তার রঙ লাগে না।
এখানে এক আশ্চর্য নগরে পাখিরা ঝুলে থাকে ঘণ্টীর মতো,
পাটীগণিতে নাজেহাল মাকড়সা–
জাল কষে শরীরের সুতোয় জ্যামিতিক শব্দে।
তবু এক আলোর সংকেতে গাছেরা ছায়া ফেলে পথিকের পায়;
পেছনে সেতুর নিচে জমে থাকে স্রোতের গল্প।


This is an original content which is written by a DORPON author. Copying and publishing any part of the content is strictly prohibited.

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu