রিগ্যান এসকান্দার
রিগ্যান এসকান্দার-এর জন্ম ১২ জুন ১৯৮৩। এসকান্দারের কবিতার মূল সুর মূলত দ্রোহ ও দর্শন। তার অনেক কবিতায় ম্যাজিক রিয়ালিজম বা জাদু বাস্তববাদের সফল প্রয়োগ লক্ষ্য করা যায়। প্রকাশিত কবিতাগ্রন্থ: পেরেকপুস্তক (২০২২), দর্শনপুস্তক (২০২২), সুফিয়াতন্ত্র (২০২১), দ্রোহশাস্ত্রবুলি (২০২০), প্রেম কবলিত প্রসব (২০১৪), নারীগদ্য (২০০৭)।
রিগ্যান এসকান্দার

বাইবেলের মোরগ

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

রিগ্যান এসকান্দারের দুটি কবিতা ‘বাইবেলের মোরগ’ এবং ‘প্রেম ও যুদ্ধবিষয়ক’


বাইবেলের মোরগ


প্রিয়তমা ডিডো,
তোমার কান্নার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে একটা ভোর
আর ভোরের বেদনা স্রোতে জেগে উঠছে
একটি রঙিন মোরগ।
মনে করো আমি একটি রঙিন মোরগ।
অথবা মনে করো আমি একটি কবি,
যে মিথের দৃশ্যে দেখেছে
বাইবেলের পৃষ্ঠায় লুকিয়ে আছে একটি মোরগ।
আর ধর্মগ্রন্থের পৃষ্ঠা ওলটালেই মোরগটি লাফ দিয়ে নেমে আসে প্রেমের উঠানে।

মোরগটি একবার ডেকে ওঠে।
মোরগটি দুইবার ডেকে ওঠে।
মোরগটি তিনবার ডেকে ওঠে।

মোরগের তিন ডাকে যদি তোমার ঘুম ভেঙে যায়
হে রূপসী নারী ডিডো
বুঝবে তোমার সমস্ত শরীরজুড়ে একটা নদী
নদীর জলে দুপুরের রোদ
আর আমি ভরদুপুরে তোমার শরীরে পাল তুলি ইউরোপ অভিমুখে।

যাকে আমি বলি মোরগযাত্রা।
আর তুমি বলো চরিত্রহীনতা।

অথচ তোমাকে দেব বলে
দেবী ভেনাসের কাছ থেকে
চেয়ে আনি একটি শরৎকাল।
নোঙর ফেলতে ভুলে গেলে
কিছু শিউলী ছিটিয়ে দিও আমার শোকের কফিনে।

জেনে রেখ এরপর কেউ কবি হলে
কিছু শোক বুকপকেটে রেখে দেয়।
আর সন্ধ্যারাতে পকেটের শোকগুলো জোনাকি হয়ে উড়ে যায়
ডিডোর ঝলমলে রূপের মতো।

বিধবা রমনী ডিডোর বুকে আত্মাহুতির অভিমান।
ডিডোর কান্নার ভেতর ঢুকে যাচ্ছে মায়াবী চাঁদ।
ডিডোর শরীরজুড়ে আমি এক নভোচারী।

ইউরোপ অভিমুখে এশিয়ান পুরুষ।
আবিষ্কারের খাতায় আঁকা তোমার বুকছাপ,
উহুদ পাহাড়ের দৃশ্যাবলী।

উহুদ পাহাড়ের অনেক উঁচুতে উঠলে আমাকে আরোহী বলে দাবি করে ঈশ্বরের মানবিক গল্প।
আমি মধ্যপ্রাচ্যের উটের বহর থেকে নেমে
তাঁবু গাঁড়ি তোমার কোমরে।
তৃষ্ণার্ত আমাকে দেখাও জলের জমজম।

তোমার নামে গান গায় এক পথহারা জলের জিপসি।

শরীর ও রূপের মাইল মাইল হেঁটে
আমি মূলত ক্লান্ত।
আমি মূলত ক্ষুধার্ত।
খোদার পায়ের কাছে পড়ে থাকি
এক টুকরো আপেলের জন্য।
অথচ আমার আদি প্রেমিকারা জানে
ক্ষুধার্ত আমাকে আপেল দান করেছিল এক অভিশপ্ত প্রেমিক।

প্রিয়তমা রূপসী রমনী ডিডোর মুখে শুনেছি,
কবি মূলত বেহেশত বিতাড়িত এক ব্যর্থ প্রেমিকের নাম।

আমি।

মনে করো আমি সেই বিতাড়িত প্রেমিক।
মনে করো আমি সেই বাইবেলের রঙিন মোরগ।
মনে করো আমি সেই জিপসি কবি।
ঈশ্বরের দেওয়া সমস্ত অভিশাপ কাঁধে নিয়ে
আজও নারীকেই ভালোবাসি।

তবুও এ কাব্যে বিশ্বাস রাখে না কবিদের প্রাক্তন প্রেমিকারা।


প্রেম ও যুদ্ধবিষয়ক


একটি রাষ্ট্রের প্রেম ও রণনীতি লিপিবদ্ধের জন্য
একজন ব্যক্তিকে দেওয়া হলো তেইশ বছর।
আর ধ্যানমগ্নতার জন্য তাকে পাঠানো হলো
একটি পর্বতের গুহায়।

তেইশ বছর পর লোকটি ফিরে এলেন কবি হয়ে।
হাতে তার একটি কিতাব।

কবির কাছে জানতে চাওয়া হলো রণনীতি।

কবি কিতাবটি দেখিয়ে বললেন,
‘এটি যুদ্ধবিষয়ক, এর প্রতি অক্ষরে আছে রণকৌশল
তবে প্রেমিক না হয়ে এটির পাঠ নিষেধ।
কারণ, বীরত্বের সাথে প্রেমের সম্পর্ক গভীর।’

এ কথা শোনার পর উৎসুক জনতা কবিকে
প্রশ্ন করলেন প্রেমবিষয়ক,
কবি এবার কিতাব খুলে মেলে ধরলেন সবার সামনে
সাথে সাথে গ্রন্থের অক্ষরগুলো প্রজাপতি হয়ে উড়ে গেল।

সকলেই বললেন, ‘কী এমন যুদ্ধের কৌশল লিখলেন
যা আয়ত্ত করার আগে উড়ে যায়।’

কবি বললেন, ‘যুদ্ধ মূলত একটি কিতাববন্দী বহু অক্ষর;
আর প্রেম হলো অক্ষর বিহীন একটি খোলা কিতাব,
যেখানে যুদ্ধ কৌশল প্রজাপতি হয়ে উড়ে যায়।’


This is an original content which is written by a DORPON author. Copying and publishing any part of the content is strictly prohibited.

 

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu