কান্ত রায়

আত্মহনন না মৃত্যুদণ্ড?

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

কান্ত রায়ের কবিতা


আত্মহনন না মৃত্যুদণ্ড?


সেনোরিটার সাথে অনুষঙ্গের অপরাধে–
এ মর্ত আমাকে মৃত্যু না হওয়া অবধি
ফাঁসিতে ঝুলিয়ে রাখার বিধান বহাল রেখেছে।

তারচেয়ে বরং
ফায়ারিং স্কোয়াড, গিলোটিনের শিরচ্ছেদ যন্ত্র কিংবা
প্রস্তর নিক্ষেপ সরল হতো।

জল্লাদ আজ মুগুড় দিয়ে পিটিয়ে
আমার হাড়গোড় সব চূর্ণবিচূর্ণ করে ফেলুক;
গলাকেটে আমার মাথা ভাসিয়ে দেওয়া হোক
প্রবাহিত জলধারায়।

ফাঁসির আসামী হিসেবে, প্রাণভিক্ষা চাওয়ার প্রতিক্রিয়া জানলেও;
আবেদন ছুঁড়ে দেওয়া হচ্ছে না জেলারের কাছে।
ভেন্টিলেটরের ফাঁক-ফুঁকুর দিয়ে
মঞ্চের সার্চলাইটের আলো টিকরে
বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে…

কনডেম সেলে আমাকে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শুনানো হচ্ছে,
জানতে চাওয়া হচ্ছে–
আমার শেষ মনস্কামের কথা!

লম্বা রেইসের ঘোড়ার মতো আমার রক্তচাপ;
চিঁচিঁ শব্দ করে
লাফিয়ে উঠেছে!

পেয়ার করার মতোন
নোংরামির জন্যে
বিরাগ থাকার পরে;
আমার শেষ ইচ্ছে
পূরণ করে,
মৃত্যুটি যথাসম্ভব
আরামদায়ক করে তোলার পায়চারি চালাচ্ছে কর্তৃপক্ষ।

মৃত্যুর সময় গুনতে গুনতে অন্তিম ইচ্ছে ব্যক্ত করেছি।
তার ঠোঁটের ঝাঁজ–
আঙ্গুলের ডগায়
ছুঁয়ে দেখার নামে।

আইনানুগ ফর্মালিটি শেষে, আমাকে নিয়ে আসা হয়েছে– আবার সে অমলিন মঞ্চে।
জেল সুপারকে দেখছিলাম কর্ণধারের মতোন
লাল রুমালটাকে নিয়ে দাড়িয়ে আছেন
মঞ্চের পাশে।

ঐ ফুরসতে,
লাল রোমালটাই
আমায় সীমান্ত পার করিয়ে প্রবেশ করাবে
ঔপাড়ের চৌকাঠ।

দাঁতে-দাঁত খিটে আছে,
চোখ-মুখ জুড়ে শুধু আলোকশুন্যতা।
কাঠের-পাটাতনে দাঁড়িয়ে আমি;
কালো-রংয়ের জমটুপি পরিয়ে, মাথা ঢেকে দেওয়া হয়েছে।
পেছন থেকে দুহাত বেঁধে দেওয়া হয়েছে।

‘ম্যাজিস্ট্রেট’ ঘড়ি ধরে, ইশারা দিতেই
কপিকলের দড়িতে টান দিয়েছে জল্লাদ।
পাটাতন সরে গেছে
গলায় আটকে গেছে
মোটা দড়ি।
একে একে শুরু হয়েছে
নিগূঢ় যাত্রা।

ঘরের এক কোণে পড়ে রয়েছে আমার নিথর দেহ,
পাকযন্ত্র পড়ে রয়েছে নির্বাক হয়ে।
অলীক-কল্পনা ভাঙ্গলে বোধ হয়–
‘ফাঁসিতে আত্মহত্যাকারী আর প্রেমে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামীর মধ্যে কোনো তফাত নেই!’

পরেরদিন সকালেই তাজ্জব হয়ে
তাকিয়ে দেখেছি, প্রথম-সারির কয়েকটা দৈনিক পত্রিকায়
আমার আত্মহননের খবর প্রকাশিত হয়েছে।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu