সাজ্জাদ সাঈফ-এর তিনটি কবিতা
আমাদের মন কাঁদে
শিরদাঁড়া টানটান জামগাছটার ছায়া নিঃস্বার্থ–
আমাকে এখানেই পাবে, গুল কচলিয়ে মুখে এইদিক দিয়ে ছোটলোকেরা যাবে, কাছেই হাটবাজার, বন্যার অতিমানবিকতায় কমেছে হাঁসের দাম, নদীপাড়ে চুলা জ্বলে না তেমন, তাতেই-বা কি, আমাদের নিজ নিজ জীবন আছে, উদর আছে, হৃদয়ে রয়েছে উদারতা বৈকি, মন কাঁদে!
হাঁসের হাড্ডি চিবুতে চিবুতে আমরা নিউজ চ্যানেলে, দুর্গতদের হা হুতাশ দেখবো আর সরকারপক্ষকে গালাগাল দিবো, গাজায় পড়বে মিসাইল, আমরা হ্যাশট্যাগ দিব, আমাদের মন কাঁদে!
নক্ষত্রেরা ডুবে গেছে মেঘের মাস্তুলে, এরকম মাঝরাতে তুমিও কি ভাবতেছো না নিজেরই কথা?
এই যেমন আমি, শুয়ে শুয়ে ফেসবুকে লিখে রাখছি, মহান হবার টোটকা!
নটে গাছ
সন্ধ্যার পর শেমিজের আল্পনা হয়ে অন্ধকার
ছোপ ছোপ আটকে থাকে আকাশের চত্বরগুলিতে।
মাঠের কান ঘেঁষে অটোরিকশার ভেঁপু উড়ে আসে বুকে।
মিছিলে আলো ধরবার কে আছে সটান?
কতদিন হলো, ইতিহাস থেকে কবর খুড়ে উঠে আসছে ধুরন্ধরেরা একের পর এক! সেই থেকে এই নটেগাছের দেশে, বেলুনে বেলুনে ওড়ে মানুষের দমবন্ধের হাওয়া।
মেঘছাতিমের নিচে বসে ভাবলেই, জবান বেচে খাওয়া মজুদদার মনে হয় নিজেকে।
একটা কবিতা লিখে
একটা কবিতা লিখে আমি ভাত খেতে বসি
একটা কবিতা লিখে ফেলে রাখি, ডিনারের পর এঁকে শেষ করার আশায়;
একটা কবিতা লিখে আমি জানাযায় নামি
একটা কবিতা লিখে শেষ না করেই মা’র খোঁজ নিই।
একটা সম্পূর্ণ কবিতা আমাকে স্বপ্ন ও দুঃস্বপ্নে ধরে
অসংখ্য প্রশ্নের ধাঁধা, উপরে সবুজ মেখে বসে থাকে বন জঙ্গল!
ভিতরে ফাটল নিয়েও বাবা
হাসি দিয়ে বরণ করেন আমাদের ব্যর্থ হাত, ব্যর্থ মুখ আর চোখ।
কতদিন আগে দেখা
তবু তুমি চিরচেনা পথের মতন ডানে বামে ঢুকে গেছো বুকে, একটা কবিতা লিখে আমি সেই
পথে যাব, শাপলাপাতার নিচে এক ব্যাঙ, ওপর ওপর বৃষ্টি হচ্ছে দেখো!