জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি দিনাতিপাত করেছেন। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকালে অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তার প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে।
জীবনানন্দ দাশ

শতাব্দী

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

চার দিকে নীল সাগর ডাকে অন্ধকারে, শুনি;
ঐখানেতে আলোকস্তম্ভ দাঁড়িয়ে আছে ঢের
একটি-দুটি তারার সাথে — তারপরেতে অনেকগুলো তারা;
অন্নে ক্ষুধা মিটে গেলেও মনের ভিতরের
ব্যথার কোনো মীমাংসা নেই জানিয়ে দিয়ে আকাশ ভ’রে জ্বলে;
হেমন্ত রাত ক্রমেই আরো অবোধ ক্লান্ত আধোগামী হয়ে
চলবে কি না ভাবতে আছে — ঋতুর কামচক্রে সে তো চলে;
কিন্তু আরো আশা আলো চলার আকাশ রয়েছে কি মানবহৃদয়ে।
অথবা এ মানবপ্রাণের অনুতর্ক; হেমন্ত খুব স্থির
সপ্রতিভ ব্যাপ্ত হিরণগভীর সময় ব’লে
ইতিহাসের করুণ কঠিন ছায়াপাতের দিনে
উন্নতি প্রেম কাম্য মনে হলে
হৃদয়কে ঠিক শীত সাহসিক হেমন্তলোক ভাবি;
চারি দিকে রক্তে রৌদ্রে অনেক বিনিময়ে ব্যবহারে
কিছুই তবু ফল হল না; এসো মানুষ আবার কেখা যাক
সময় দেশ ও সন্ততিদের কী লাভ হতে পারে।
ইতিহাসের সমস্ত রাত মিশে গিয়ে একটি রাত্রি আজ পৃথিবীর তীরে;
কথা ভাবায়, ভ্রান্তি ভাঙে, ক্রমেই বীতশোক
করে দিতে পারে বুঝি মানবভাবনাকে;
অন্ধ অভিভুতের মতো যদিও আজ লোক
চলছে, তবু মানুষকে সে চিনে নিতে বলে:
কোথায় মধু–কোথায় কালের মক্ষিকারা — কোথায় আহ্বান
নীড় গঠনের সমবায়ের শান্তি-সহিষ্ণুতার—
মানুষও জ্ঞানী; তবুও ধন্য মক্ষিকাদের জ্ঞান।
কাছে-দুরে এই শতাব্দীর প্রাণনদীরা রোল
স্তব্ধ করে রাধে গিয়ে যে-ভূগোলের অসারতার পরে
সেখানে নীলকন্ঠ পাখি ফসল সূর্য নেই,
ধূসর আকাশ — একটি শুধু মেরুন রঙের গাছের মর্মরে
আজ পৃথিবীর শূণ্য পথ ও জীবনবেদের নিরাশা তাপ ভয়
জেগে ওঠে — সুর ক্রমে নরম — ক্রমে হয়তো আরো কঠিন হতে পারে;
সোফোক্লেস ও মহাভারত মানবজাতির এ ব্যর্থতা জেনেছিল; জানি;
আজকে আলো গভীরতর হবে কি অন্ধকারে।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu