জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি দিনাতিপাত করেছেন। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকালে অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তার প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে।
জীবনানন্দ দাশ

পেঁচা (মাঠের গল্প)

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

প্রথম ফসল গেছে ঘরে,
হেমন্তের মাঠে মাঠে ঝরে
শুধু শিশিরের জল;
অঘ্রানের নদীটির শ্বাসে
হিম হয়ে আসে
বাঁশপাতা — মরা ঘাস — আকাশের তারা!
বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা!
ধানক্ষেতে — মাঠে
জমিছে ধোঁয়াটে
ধারালো কুয়াশা!
ঘরে গেছে চাষা,
ঝিমায়েছে এ পৃথিবী–
তবু পাই টের
কার যেন দুটো চোখে নাই এ ঘুমের
কোনো সাধ!
হলুদ পাতার ভিড়ে ব’সে
শিশিরে পালক ঘ’ষে ঘ’ষে
পাখায় ছায়ায় শাখা ঢেকে,
ঘুম আর ঘুমন্তের ছবি দেখে দেখে
মেঠো চাঁদ আর মেঠো তারাদের সাথে
জাগে একা অঘ্রানের রাতে
সেই পাখি–
আজ মনে পড়ে
সেদিনও এমনি গেছে ঘরে
প্রথম ফসল;
মাঠে মাঠে ঝরে এই শিশিরের সুর–
কার্তিক কি অঘ্রানের রাত্রির দুপুর!–
হলুদ পাতার ভিড়ে বসে,
শিশিরে পালক ঘ’ষে ঘ’ষে,
পাখার ছায়ায় শাখা ঢেকে
ঘুম আর ঘুমন্তের ছবি দেখে দেখে
মেঠো চাঁদ আর মেঠো তারাদের সাথে
জেগেছিল অঘ্রানের রাতে
এই পাখি!
নদীটির শ্বাসে
সে রাতেও হিম হয়ে আসে
বাঁশপাতা — মরা ঘাস — আকাশের তারা,
বরফের মতো চাঁদ ঢালিছে ফোয়ারা!
ধানক্ষেত — মাঠে
জমিছে ধোঁয়াটে
ধারালো কুয়াশা
ঘরে গেছে চাষা;
ঝিমায়েছে এ পৃথিবী,
তবু আমি পেয়েছি যে টের
কার যেন দুটো চোখে নাই এ ঘুমের
কোনো সাধ!

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu