জীবনানন্দ দাশ
জীবনানন্দ দাশ (১৭ ফেব্রুয়ারি, ১৮৯৯ - ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪) ছিলেন বিংশ শতাব্দীর অন্যতম প্রধান আধুনিক বাঙালি কবি, লেখক ও প্রাবন্ধিক। জীবনানন্দ দাশ প্রধানত কবি হলেও বেশ কিছু প্রবন্ধ-নিবন্ধ রচনা ও প্রকাশ করেছেন। তবে ১৯৫৪ খ্রিষ্টাব্দে মৃত্যুর পূর্বে তিনি ২১টি উপন্যাস এবং ১২৬টি ছোটগল্প রচনা করেছিলেন যার একটিও তার জীবদ্দশায় প্রকাশিত হয়নি। চরম দারিদ্র্যের মধ্যে তিনি দিনাতিপাত করেছেন। বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধকালে অনপনেয়ভাবে বাংলা কবিতায় তার প্রভাব মুদ্রিত হয়েছে।
জীবনানন্দ দাশ

তার স্থির প্রেমিকের নিকট

বার পড়া হয়েছে
শেয়ার :

বেঁচে থেকে কোনো লাভ নেই,- -আমি বলিনাতো।
কারো লাভ আছে;– সকলেরই;– হয়তো বা ঢের।
ভাদ্রের জ্বলন্ত রৌদ্রে তবু আমি দূরতর সমুদ্রের জলে
পেয়েছি ধবল শব্দ– বাতাসতাড়িত পাখিদের।

মোমের প্রদীপ বড়ো ধীরে জ্ব’লে– ধীরে জ্বলে আমার টেবিলে;
মনীষার বইগুলো আরো স্থির,– শান্ত,– আরাধনাশীল;
তবু তুমি রাস্তার বার হ’লে,- ঘরেরও কিনারে ব’সে টের পাবে নাকি
দিকে-দিকে নাচিতেছে কী ভীষণ উন্মত্ত সলিল।

তারি পাশে তোমারে রুধির কোনো বই- কোনো প্রদীপের মতো আর নয়,
হয়তো শঙ্খের মতো সমুদ্রের পিতা হ’য়ে সৈকতের পরে
সেও সুর আপনার প্রতিভায়- নিসর্গের মতোঃ
রূপ–প্রিয়– প্রিয়তম চেতনার মতো তারপরে
তাই আমি ভীষণ ভিড়ের ক্ষোভে বিস্তীর্ণ হাওয়ার স্বাদ পাই;
না হলে মনের বনে হরিণীকে জড়ায় ময়ালঃ
দণ্ডী সত্যাগ্রহে আমি সে-রকম জীবনের করুণ আভাস
অনুভব করি; কোনো গ্লাসিয়ার- হিম স্তব্ধ কর্মোরেন্ট পাল–
বুঝিবে আমার কথা; জীবনের বিদ্যুৎ-কম্পাস অবসানে
তুষার-ধূসর ঘুম খাবে তারা মেরুসমুদ্রের মতো অনন্ত ব্যাদানে।

ট্যাগসমূহ

magnifiercrossmenu