ঘড়ির কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই
মা তার সন্তানের লাশ সামনে নিয়ে বসে আছে
কারণ, ছেলে তার বলে গেছে,
ফিরতে একটু দেরি হবে। দশটা বাজবে মা।
মা এই মৃত্যুকে বিশ্বাস করে না।
মা বিশ্বাস করে—
দশটা বাজলে রংপুরে মূলত সকলকেই ফিরতে হয়।
ব্রিটিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে ফিরে আসবে
তাঁর সন্ন্যাসী মেয়ে দেবী চৌধুরানী।
হানাদার পাকিস্তানির চোখ ফাঁকি দিয়ে
বড়ভাই কুমারেশ মজুমদারের হাত ধরে
ফিরে আসবে তাঁর ছোট খোকা শম্ভু মজুমদার।
আর স্বাধীন বাংলাদেশে পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে
ফিরে আসবে তার সন্তান শহীদ আবু সাঈদ।
আবু সাঈদ তুমি কোথা থেকে ছুটে এসে দাঁড়ালে
স্বাধীন বাংলাদেশে এই দাবি আদায়ের মিছিলে!
তুমি কি এসেছ রংপুরের পারুল ইউনিয়ন থেকে
তুমি কি এসেছ সন্ন্যাসী বিদ্রোহ থেকে।
তুমি কি এসেছ রংপুরের গুপ্তপাড়া থেকে
তুমি কি এসেছ স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে।
তোমার ডেথ সার্টিফিকেটটি দেখলাম।
তুমি এসেছ রংপুরের পীরগঞ্জ থেকে।
পীরগঞ্জ থেকে উড়ে এসে
প্রজাপতির ডানার মতো
দুহাত বুকের দুদিকে মেলে নিয়ে
রাষ্ট্রীয় বন্দুকের সামনে
তুমি সীনা টান টান করে দাঁড়িয়ে গেলে।
আর সারা বাংলাদেশ দেখল
দাবি আদায়ের মিছিলে —
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় জড়ো হয়েছে
আমাদের কন্যা দেবী চৌধুরানী।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় জড়ো হয়েছে
আমাদের ছোটখোকা শম্ভু মজুমদার।
আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোয় জড়ো হয়েছে
আমাদের সন্তান আবু সাঈদ।
ঘড়ি কাঁটা দশটা ছুঁই ছুঁই।
মৃত সন্তানের লাশের পাশে বসে
সন্তানের ফিরে আসার জন্য
অপেক্ষা করছে আবু সাঈদের মা।
মা, আমরা তোমাকে কীভাবে জানাই —
আমাদের দেশের নাম বাংলাদেশ!
আমরা একটা দেশ গড়তে চেয়েছিলাম,
শাসকেরা এটাকে রাষ্ট্র বানিয়ে ফেলেছে।
তবে একটি কথা তোমাকে জানাতে পারি মা।
ছাত্রদের মিছিলে যখন রাষ্ট্রীয় পুলিশ গুলি চালাল
বাংলার পতাকা যখন লাল রক্তে ভিজে গেল।
প্রজাপতির বুক ভেদ করে গেল রাষ্ট্রীয় বুলেট
ঠিক সে সময় মাটিতে লুটিয়ে পড়তে পড়তে
বলে গেছে তোমার সন্তান, আমাদেরই ভাই—
আবার জন্ম নেব মা। প্রতীক্ষা করো;
একাত্তরে যুদ্ধ হয়েছে
কিন্তু যুদ্ধ করার মতো সন্তান
প্রতি সালেই কিছু না কিছু জন্মায়।
বাংলার মাটি বড় উর্বর।
বাংলার মাটি বড় উর্বর।